করোনাতে মৃত্যু হয় ব্যক্তির কিন্তু সরকার হত্যা করছে তার পুরো পরিবারকে: ড. জাফরুল্লাহ
গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেছেন, করোনাতে মৃত্যু হয় একজন ব্যক্তির কিন্তু সরকার হত্যা করছে পুরো পরিবারকে। এক চিকিৎসার নামে পুরো পরিবারকে স্বর্বসান্ত করছে অপরদিকে চিকিৎসা না পেয়েই তাকে মৃত্যুবরণ করতে হচ্ছে। মেডিকেলের প্রতিটি যন্ত্রপাতি এমনকি ঔষধের উপর চড়া কর নিলেও কাঙ্খিত সেবা পাচ্ছে না জনগন।
তিনি বলেন, "হয়তো হাসপাতালে রোগীকে ভর্তি করানো হয় কিন্তু বিনা চিকিৎসায় মারা যাবে এ পরিস্থিতি চলতে থাকলে। করোনা মারে একজনকে, চিকিৎসা খরচের কারণে পুরো পরিবারকে মরতে হয়।"
বৃহস্পতিবার নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে 'করোনা সংক্রমণের ভয়বহতার প্রেক্ষাপটে করণীয়' বিষয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি একথা বলেন।
আইসিইউ'র একটি সুইয়ের উপরও ৩৯ শতাংশ ট্যাক্স দিতে হয় উল্লেখ করে ড. জাফরুল্লাহ বলেন, "একজন রোগীর জন্য আইসিইউতে প্রতিদিনের জন্য সর্বনিম্ন ৩০ হাজার টাকার মতো খরচ হয়। সেখানে যদি সরকার কোনো ধরনের সহযোগিতা না করে তবে সাধারণ মানুষ আইসিইউতে রোগীকে রাখবে কীভাবে? আবার আইসিইউ'র যন্ত্রপাতি, ঔষধ সবগুলোতেই ট্যাক্স এবং দাম অনেক বেশি।"
"সরকার মানুষের স্বাস্থ্যসেবার কথা চিন্তা না করে শুধু আইসিইউ'র যন্ত্রপাতি কেনার নতুন নতুন পরিকল্পনা করছে কিন্তু সেখানে সাধারণ মানুষের তো উপকার হচ্ছে না নানা প্রতিষ্ঠানকে বিনা টেন্ডারে যন্ত্রপাতি কেনার জন্য দেওয়া হচ্ছে।"
তিনি আরও বলেন, "এদেশের মানুষ তাদের নিজেদের যায়গা থেকেই করোনা মোকাবেলা করছে। সরকার বিভিন্ন সময়ে করোনার সংক্রমণ রোধে যে পদক্ষেপ নিয়েছে তা তেমন কারর্যকর হয়নি। মানুষের খেয়ে বেঁচে থাকার ব্যবস্থা না করে যদি লকডাউন দেওয়া হয় তাহলে তো গরীব মানুষ না খেয়ে মারা যাবে।"
সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান অনভিজ্ঞ লোকজন দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে উল্লেখ করে ড. জাফরুল্লাহ বলেন, "ঔষধ প্রশাসনে এমন একজনকে বসিয়েছে সরকার যিনি না জানে ফার্মাসি না জানে ঔষধ সম্পর্ক। ঔষধের দামের কারণে পরিবার সর্বশান্ত হচ্ছে।"
"সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত অক্সিজেন যেখানে ফ্রি সরবরাহ করা উচিত সরকারের সেখানে অক্সিজেনের উপর ভ্যাট ১৭.৯৪ পার্সেন্ট"
তিনি আরও বলেন, "আমাদের সরকারের অগ্রিম চিন্তাভাবনা নেই করোনা নিয়ে। আজ যদি অবস্থা আরও ভয়াবহ হয় তাহলে কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করবে?"
মেডিকেলে অন্তত ২০ হাজার শিক্ষার্থীকে ভর্তি করানো উচিত উল্লেখ করে ড. জাফরুল্লাহ বলেন, "আমরা তাদের ডা. বানাচ্ছি কিন্তু মানুষ বানাচ্ছি না। পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে রসায়ন, জীববিজ্ঞান বিষয়ে কিন্তু তাদের নৈতিকতা বিষয়ে, স্বাধীনতা, দেশের বিভিন্ন বিষয়ে কোনো পরীক্ষা নেওয়া হয় না।"
সংবাদ সম্মেলনে বেলার নির্বাহী পরিচালক, অ্যাডভোকেট সৈয়দা রেজওয়ানা হাসান বলেন, "একজন নাগরিক হিসেবে বাস্তবতা কখনও অস্বীকার করতে পারি না। এখন দেশের ব্যবস্থাপনা লেজেগোবরে হয়ে আছে একটা সময় পুরোটা ভেঙ্গে পড়বে।"
"আমি দাবি তুলবো একটি কমিশন গঠনের যেখানে নাগরিক সমাজ, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ থাকবে। লকডাউনের সিদ্ধান্ত একটা নিরপেক্ষ কমিশন থেকে আসা উচিত। এছাড়া সরকারি বেসরকারি সকল হাসপাতালে সর্বোচ্চ প্রায়োরিটি করোনা রোগীদের দিতে হবে।"
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, "করোনা মোকাবেলায় সরকারের যে প্রস্তুতি নেওয়ার দরকার ছিল সেটা নেওয়া হয়নি। কীভাবে দক্ষতার সাথে করোনা মোকাবেলা করা যায় সেটা দরকার ছিল, কিন্তু সরকার ছিল সে বিষয়ে উদাসীন। সরকার তথ্য চাপা দিয়ে রেখেছিল। সরকারের ছিল ঢিলেঢালা ভাবে।"
তিনি বলেন, "বিভিন্ন দেশে ৪৯ দিনের লকডাউনের মাধ্যমে করোনা সংক্রমণ নিচে নামিয়ে এনেছে। কিন্তু আমাদের সরকার ইফেক্টিভ কিছু করেনি। সরকারের ব্যবস্থাপনা সক্ষমতা নেই। স্বাস্থ্যব্যবস্থার নূন্যতম উন্নয়ন তারা করেনি। কাউকে অভুক্ত রেখে লকডাউনের নামে তামাশা বন্ধ করুন।"
ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নূর বলেন, "১৮ কোটি মানুষের মধ্যে ৫০ লাখও পরীক্ষা করতে পারেনি সরকার। করোনা পরীক্ষা করতে গিয়েও করোনা আক্রান্ত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। জনগণের প্রতি সরকারের দায়বদ্ধতা নেই। অতিদ্রুত সমাজের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিয়ে সম্মিলিতভাবে একটা জাতীয় কমিটি করে দিন।"
তিনি বলেন, "সমস্ত জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে। মন্ত্রীরা চালে সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করে আর দফায় দফায় দাম বাড়ায়। এগুলো নিয়ন্ত্রনে আনুন।"
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, "লকডাউন কি মৃত্যুকে বিকেন্দ্রীকরণ করতে চেয়েছে? শহরের মানুষ গ্রামে গিয়েছে করোনা নিয়ে এবং করোনায় সংক্রমিত হয়ে। এ সরকারের কোনো জবাবদিহিতা নেই। আমরা ট্যাক্স ঠিকই দেই কিন্তু সরকার থেকে সহযোগিতা পাই না।"
সংবাদ সম্মেলনে এছাড়াও বক্তব্য রাখেন, জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ, বীর মুক্তিযোদ্ধা নঈম জাহাঙ্গীর, রাষ্ট্রচিন্তার দিদারুল ইসলাম ভূইয়া, ভাসানী অনুসারী সাদিয়া আরমান প্রমুখ।