মাইক্রো মার্চেন্ট পেমেন্টের একাউন্ট চালুর কাজ এগিয়ে নিচ্ছে আগ্রহী প্রতিষ্ঠানগুলো
ট্রেড লাইসেন্স ছাড়াই অতিক্ষুদ্র ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী পর্যায়ে ডিজিটাল লেনদেনের উদ্দেশ্যে মাইক্রো মার্চেন্ট পেমেন্টের জন্য রিটেইল একাউন্ট খোলার সুবিধা চালু করতে কাজ করছে আগ্রহী মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংকগুলো। তবে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ কাজের গতি কিছুটা কমিয়ে দিয়েছে।
নতুন এই সুবিধা দিতে প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রযুক্তিগত উন্নয়ন বা সিস্টেম আপগ্রেডেশনের কাজ করতে হচ্ছে। এতে আরো তিন থেকে চার মাস সময় প্রয়োজন। এরপরই একাউন্ট খোলার সুবিধা পাবেন ব্যবসায়ীরা।
ইতিমধ্যে মোবাইল সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান রকেট সীমিত পর্যায়ে একাউন্ট খুলতে শুরু করেছে। অন্যদিকে নগদ, পরীক্ষামূলকভাবে একাউন্ট খোলা ও লেনদেন করছে। আর সবচেয়ে বড় এমএফএস প্রতিষ্ঠান বিকাশ দ্রুতই এই সুবিধা চালু করবে বলে জানিয়েছে।
বর্তমানে শহরগুলোর শপিং মল কিংবা সুপারশপ বা বিভিন্ন ব্র্যান্ডের আউটলেটে এমএফএস কিংবা কার্ডের মাধ্যমে পণ্যের দাম পরিশোধের (মার্চেন্ট পেমেন্ট) সুবিধা পেয়ে থাকেন ক্রেতারা। কারণ এসব প্রতিষ্ঠানের ট্রেড লাইসেন্স থাকায় রিটেইল একাউন্ট আছে।
তবে অতিক্ষুদ্র ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী পর্যায়ে, যেমন-এলাকার মুদি বা ওষুধের দোকান,কাঁচা বাজার, ফুটপাতের ভ্রাম্যমান খাবার দোকান বা হকারদের এই সুবিধা নেই। গেল বছরের নভেম্বরে তাদের জন্য সুযোগ করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
ট্রেড লাইসেন্স ছাড়াই শুধুমাত্র জাতীয় পরিচয়পত্র ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি বা পেশাজীবি সমিতি থেকে পেশার সত্যায়ন নিয়ে মাইক্রো মার্চেন্ট একাউন্ট খুলতে পারবেন এসব ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা।
ব্যাংক, এজেন্ট ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিং, পেমেন্ট সার্ভিস প্রোভাইডার (পিএসপি) কর্তৃক একাউন্ট খোলা যাবে। সংশ্লিষ্টরা অবশ্য বলছেন, এসব ব্যবসায়ী পর্যায়ে মোবাইল ব্যাংকিং কিংবা কিউআর কোড-এ লেনদেনই জনপ্রিয় হবে।
বিকাশ এর জনসংযোগ বিভাগের প্রধান শামসুদ্দিন হায়দার ডালিম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানান, 'মাইক্রো মার্চেন্ট পেমেন্ট এর জন্য রিটেইল একাউন্ট খোলার সুবিধা বিকাশের একটি বড় প্রকল্প'।
প্রযুক্তিগত উন্নয়নসহ এই প্রকল্পের কয়েকটি পর্যায়ের কাজ এক সাথে এগিয়ে চলছে বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, 'ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের তালিকা করে তাদের একাউন্ট খোলা ও প্রশিক্ষণের কাজ দ্রুত শুরু হবে'।
তিনি আরো বলেন, 'এই সুবিধা দেশজুড়ে চালু করতে সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংককে নীতি সহায়তা এবং মোবাইল অপারেটরগুলোর নেটওয়ার্ক আরো উন্নয়ন এবং স্মার্ট ফোন সহজলভ্য করতে হবে'।
প্রান্তিক পর্যায়ে ডিজিটাল লেনদেন জনপ্রিয় করতে ক্রেতা-বিক্রেতাদের প্রণোদনা দিতে পারলে ভালো ফল পাওয়া যাবে বলে মনে করেন ডাচ-বাংলা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কাশেম মো. শিরিন।
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে তিনি বলেন, 'মাইক্রো মার্চেন্ট পেমেন্টের ক্ষেত্রে বিভিন্ন পর্যায়ে ক্যাশব্যাকের মত সুবিধা রাখা যেতে পারে। এছাড়া প্রচার প্রচারণায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও সরকারকেও সহযোগিতা করতে হবে'।
ক্যাশলেস সোসাইটি গঠনে ডিজিটাল মাধ্যমে লেনদেন জনপ্রিয় করতে সব ধরনের সহযোগিতা করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রস্তুত আছে বলে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম।
এদিকে ডাচ-বাংলা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানান, 'তাদের এমএফএস প্রতিষ্ঠান রকেট ইতিমধ্যেই ট্রেড লাইসেন্সবিহীন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের মার্চেন্ট একাউন্ট খোলার সুবিধা সীমিত পর্যায়ে শুরু করেছে। বড় আকারে সুবিধা দিতে কাজ এগিয়ে চলছে'।
আবুল কাশেম বলেন, 'যেহেতু পয়েন্ট অব সেলস (পিওএস) মেশিনের জন্য ব্যবসায়ীদের আলাদা খরচ করতে হবে তাই প্রান্তিক পর্যায়ে এমএফএস ও কিউআর কোডে লেনদেনই জনপ্রিয়তা পাবে। এক্ষেত্রে তার ব্যাংকের নেক্সাস-পে অ্যাপস ব্যবহার করেও মার্চেন্ট পেমেন্ট সুবিধা পাওয়া যাবে'।
ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী পর্যায়ে কিউআর কোড ভিত্তিক রিটেইল একাউন্ট খোলার সুবিধা নিয়ে কাজ করছে সিটি ব্যাংক। ক্রেতা-বিক্রেতা তাদের মোবাইল অ্যাপসের মাধ্যমে কিউআর কোড স্ক্যান করে কার্ড থেকে লেনদেনের সুবিধা পাবেন।
প্রতিষ্ঠানটির এক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানান, প্রাথমিকভাবে তাদের লক্ষ্য ৫০ হাজার একাউন্ট খোলার সুবিধা তৈরি করা। চলতি বছরের শেষ দিকে এই সুবিধা পুরোদমে চালু হবে।
এদিকে নগদের চিফ অপারেটিং অফিসার (সিওও) আশীষ চক্রবর্তী দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, নগদ তার ইন্টেলিজেন্ট পেমেন্ট প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে মাইক্রো মার্চেন্ট পেমেন্ট সুবিধা বাস্তবায়নের দৃঢ় পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে এবং আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই এ পরিষেবাটি চালু করতে পারবে বলে তারা আশাবাদী।
'এখন আমরা এ প্রক্রিয়াকে ঘিরে আমাদের প্রযুক্তি উন্নততর করার চেষ্টা করছি এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুসারে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের এর আওতায় আনতে প্রস্তুতি গ্রহণ করছি। ইতিমধ্যে সীমিত পরিসরে আমাদের অফিসের কাছাকাছি কিছু ভাসমান হকারের ওপর পাইলট প্রকল্প চালানো হয়েছে এবং প্রকল্পের ফলাফল নিয়ে আমরা সন্তুষ্ট'।
তবে কোভিড সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ এবং লকডাউনের জন্য তাদের এ প্রকল্প নিয়ে কিছুটা সীমাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে।
আশীষ চক্রবর্তী বলেন, 'আমাদের লক্ষ্য হলো আগামী কয়েক মাসের মধ্যে প্রায় ৮০ হাজার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীকে সম্পৃক্ত করা। ভাসমান বিক্রেতা এবং ফেসবুক ভিত্তিক বাণিজ্য প্রতিষ্ঠানকে মূলত আমরা গুরুত্ব দেব'।