তৈরি পোশাক খাতকে লকডাউনের আওতামুক্ত রাখার দাবি সংগঠনগুলোর
কোভিড-১৯ সংক্রমণের উদ্বেগজনক বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে সরকার আগামী ১৪ এপ্রিল থেকে দেশব্যাপী সর্বাত্মক লকডাউন কর্মসূচী বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে।
গত শুক্রবার (৯ এপ্রিল) জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন গণমাধ্যমকে জানান, এবারের লকডাউনে শুধু জরুরি সেবাগুলো চালু থাকবে। এ সময়ে কোনো পরিবহন চলতে পারবে না। তৈরি পোশাক শিল্পের কারখানাগুলোও বন্ধ থাকবে।
কিন্তু বিজিএমইএ'র আবেদন, তৈরী পোশাক খাতকে লকডাউন কর্মসূচীর আওতামুক্ত রাখা।
রবিবার (১১ এপ্রিল) রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে বিজিএমইএ (তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতি), বিকেএমইএ (বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার অ্যান্ড এক্সপোর্টারস অ্যাসোসিয়েশন), বিটিএমএ (বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন) ও ইএবি (এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ) এর যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান, বিজিএমইএ'র ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জনাব আবদুস সালাম।
তিনি বলেন, "মহামারীর সময় সংক্রমণের সম্ভাব্য তীব্রতা ও ভয়াবহতার বিষয়টি আঁচ করে আমরা শুরু থেকেই পরিস্থিতি মোকাবিলায় কর্মপন্থা নির্ধারণ করি। কারখানা খোলার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, আইএলও ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাথে আলোচনা করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে একটি স্বাস্থ্য বিধি প্রণয়ন করা হয়। বিজিএমইএ'র ১০টি টিম কারখানাগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা হচ্ছে কিনা, সেটি সার্বক্ষণিক পরিদর্শন করছেন"।
সময়োপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ এবং কঠোরভাবে তা বাস্তবায়নের কারণে বস্ত্র ও পোশাক শ্রমিকদের মধ্যে সংক্রমণ ০.০৩% এর মধ্যে ধরে রাখা সম্ভব হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
আবদুস সালাম বলেন, "আমাদের আশঙ্কা লকডাউনের প্রথম দিন থেকেই ব্যাপক সংখ্যক শ্রমিক শহর ছাড়তে পারেন। এতে দেশব্যাপী সংক্রমণের ঝুঁকি বহুগুণ বাড়বে। সেই সাথে লকডাউন শেষে এসব শ্রমিকের কর্মস্থলে ফিরে আসার ক্ষেত্রেও তৈরী হতে পারে অনিশ্চয়তা"।
করোনা মহামারীর প্রথম ঢেউয়ের পর শিল্পখাতে যে ক্ষতির সৃষ্টি হয়, তা মোকাবিলা করে কারখানাগুলো বর্তমানে অস্তিত্ব সৃষ্টির সংগ্রামে লিপ্ত রয়েছে। তাছাড়া আসন্ন ঈদে বেতন ও বোনাসের একটি চাপ রয়েছে। এ অবস্থায় বস্ত্র ও পোশাক শিল্পকে লকডাউনের আওতায় আনা হলে শ্রমিক ও শিল্প একটি অনিশ্চিত পরিস্থিতির সম্মুখীন হবে মনে করছেন আবদুস সালাম।
"বস্ত্র ও পোশাক খাত এবং সংশ্লিষ্ট শিল্পসমূহ আন্তর্জাতিক সাপ্লাই চেইনের একটি অংশ...এই সাপ্লাই চেইন বিপর্যস্ত হলে চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ জট, কন্টেইনার জট ও অন্যান্য বিপত্তি যুক্ত হবে, যার জের পরবর্তী কয়েক মাস শিল্পকে টানতে হবে। উপরন্তু, বস্ত্র ও তৈরি পোশাক খাতকে লকডাউনের আওতায় আনা হলে প্রতিযোগী দেশগুলোর কাছে বাজার হারানোর সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে", যোগ করেন আবদুস সালাম।
সংবাদ সম্মেলনে বিজিএমইএ'র ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবদুস সালাম আরও উল্লেখ করেন, "করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের পূর্ব থেকেই পোশাকের দরপতন শুরু হতে থাকে, যা করোনার পর তীব্র আকার ধারণ করে। গত সেপ্টেম্বর মাস থেকে আমাদের পোশাকের ৪.৫% থেকে ৫% হারে দরপতন অব্যাহত আছে"।
"সরকারের কাছে আমাদের বিনীত আবেদন, সার্বিক দিক বিবেচনায় নিয়ে রপ্তানিমুখী তৈরী পোশাকখাতসহ বস্ত্রখাতের অন্যান্য সহযোগী শিল্পসমূহকে লকডাউনের আওতামুক্ত রাখুন", বলেন তিনি।