জাপানে ফের জরুরি অবস্থা, অলিম্পিক আয়োজন ঘিরে উদ্বেগ
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়তে থাকায় শুক্রবার জাপানের টোকিও ও ওসাকায় জরুরি অবস্থা জারি করেছে দেশটির সরকার। আর মাত্র তিন মাস পরেই এ বছরের গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকের আয়োজন করতে যাচ্ছে জাপান। এরই প্রেক্ষিতে সংক্রমণ ঠেকাতে এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
রবিবার (২৫ এপ্রিল) থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হবে জানিয়ে জাপানের প্রধানমন্ত্রী ইয়োশিহিদে সুগা বলেন, "ঐতিহ্যগতভাবে জাপানে বছরের সবচেয়ে ব্যস্ত ভ্রমণকাল, 'গোল্ডেন উইক হলিডে'র সময়টাতে সংক্রমণ ঠেকানোর জন্যে এটি একটি সাময়িক ব্যবস্থা"।
টোকিও ও ওসাকা ছাড়াও, পার্শ্ববর্তী অঞ্চল কিয়োটো ও হিয়োগোতেও ১১ মে পর্যন্ত এই জরুরি অবস্থা বলবৎ থাকবে। জাপানের মোট ১২৬ মিলিয়ন জনসংখ্যার এক-চতুর্থাংশের বসবাস এই চারটি অঞ্চল মিলিয়ে।
বৃহৎ অর্থনীতির অন্যান্য দেশের তুলনায় জাপান করোনা মহামারিকে বেশ ভালোভাবেই সামাল দিয়েছে। কিন্তু আরও শক্তিশালী ভ্যারিয়েন্টসহ ভাইরাসের চতুর্থ ওয়েভ এসে জানুয়ারি থেকে আবারও দৈনিক সংক্রমণের সংখ্যা বাড়িয়ে তুলেছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এপ্রিলের শুরু থেকে ১০টি অঞ্চলে নিষেধাজ্ঞা শিথিল করতে শুরু করলেও, ভাইরাসের সংক্রমণ থামানো সম্ভব হয়নি।
সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত জাপানে পাঁচ লাখ মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন এবং মারা গেছেন ১০ হাজার জন।
গত বছরের জানুয়ারিতে জাপান দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যেসব জরুরি অবস্থা জারি করেছিল, এবারের জরুরি অবস্থা তার চাইতেও কঠিন হবে বলে মনে করা হচ্ছে। যদিও অন্যান্য দেশের পূর্ণাঙ্গ লকডাউনের তুলনায় জাপানের এসব পদক্ষেপ দুর্বল বলে প্রতীয়মান হয়েছে। নতুন করে নেয়া পদক্ষেপের মধ্যে কর্তৃপক্ষের ক্ষমতা থাকবে ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান বন্ধ বা সীমিত ঘন্টায় চালু রাখার আদেশ দেয়ার এবং আদেশ না মানলে জরিমানা করার।
জাপানে এই জরুরি অবস্থার সময়ে বড় বড় ডিপার্টমেন্টাল স্টোর, শপিংমল, বিনোদন পার্ক ও চলচ্চিত্র থিয়েটার বন্ধ থাকবে এবং সকল প্রতিষ্ঠানে মদ্যপান নিষিদ্ধ থাকবে। তবে বিদ্যালয়গুলো খোলা রাখা যাবে এবং খাদ্য ও নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দোকান খোলা থাকবে। তবে রেস্টুরেন্ট ও কারাওকে পার্লারগুলো সীমিত সময়ের জন্য খোলা থাকবে। সেই সাথে শহরের বাসিন্দাদের জনসম্মুখে মদ্যপান করতে নিষেধ করা হয়েছে।
পেশাদার বাস্কেটবল ও ফুটবল ম্যাচসহ অন্যান্য খেলার ইভেন্ট আয়োজকদের মাঠে দর্শক ঢোকাতে নিষেধ করা হয়েছে। যদিও কর্তৃপক্ষের দাবি, এই জরুরি অবস্থা জুলাইয়ের ২৮ তারিখ থেকে অনুষ্ঠিতব্য টোকিও অলিম্পিকের উপর কোনো প্রভাব ফেলবে না।
তবে বিভিন্ন ভোটের ফলাফলে দেখা গিয়েছে, মহামারিকালে ইয়োশিহিদে সুগার দেশ পরিচালনা নিয়ে জাপানিদের মধ্যে হতাশা বাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রীর অলিম্পিক আয়োজন নিয়েও তারা অসন্তুষ্ট। যদিও আয়োজকরা জানিয়েছেন মাঠে কোনো দর্শক থাকবে না এবং টর্চ প্রজ্জ্বলনের সময়ের পর থেকে খেলায় কোনো ভিড়ই হবেনা।
তবুও বিভিন্ন জরিপে ৭০ শতাংশ জাপানিই জানিয়েছেন যে তারা এই খেলার স্থগিত বা বাতিলের পক্ষে।
- সূত্র- দ্য নিউইয়র্ক টাইমস