ভ্যাকসিনের চতুর্থ উৎস হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রকে চিঠি বাংলাদেশের
আগাম মূল্য পরিশোধের পরও প্রতিবেশি দেশ ভারত থেকে ভ্যাকসিন না পাওয়ায় ভ্যাকসিন পেতে দ্বিতীয় ও তৃতীয় উৎস হিসেবে চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করছে সরকার। তবে এখনো ১৩ লাখ মানুষের দ্বিতীয় ডোজ অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন ঘাটতি রয়েছে। সেই ঘাটতি মোকাবিলায় ভ্যাকসিন চেয়ে সরকার যুক্তরাষ্ট্রকে চিঠি দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভ্যাকসিন পেতে ওয়াশিংটনকে কূটনৈতিক চিঠি দিয়েছে ঢাকা। সেই চিঠিতে অনুদান হিসেবে টিকা চেয়েছে বাংলাদেশ। যদি তা না হয় তবে ওয়াশিংটনের কাছ থেকে ভ্যাকসিন কিনতে বাংলাদেশ রাজি আছে বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন মঙ্গলবার বার্তা সংস্থা ইউএনবিকে জানান, 'যুক্তরাষ্ট্রের কাছে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ছয় কোটি ডোজ টিকার মজুত রয়েছে। হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, ফেডারেল সেফটি রিভিউ শেষে আগামী কয়েক মাসের মধ্যে এসব টিকা রপ্তানির উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হবে'।
তিনি বলেন, 'আমরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ভ্যাকসিন চেয়েছি কারণ তাদের ছয় কোটি ডোজ ভ্যাকসিনের মজুত রয়েছে। আমরা অবশ্যই এটিকে স্বাগত জানাব'।
তিনি আরও জানান যে, কোন চিঠির (আনুষ্ঠানিক মাধ্যম) মাধ্যমে নয় বরং তারা প্রকাশ্যে জানতে পেরেছেন যে, আমেরিকা ভারত এবং ব্রাজিলকে ভ্যাকসিন সরবরাহের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকারের দেশ হিসাবে চিহ্নিত করেছে।
গণ টিকাদান কর্মসূচী শেষে উদ্বৃত্ত কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশে সরবরাহে যুক্তরাষ্ট্র আশ্বাস দিয়েছে বলেও উল্লেখ করেন ড. একে আবদুল মোমেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন বলেন, 'আমরা চিঠির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ভ্যাকসিন চেয়েছি। আমরা বলেছি, তোমরা অনুদান হিসেবে আমাদের দাও, যদি তা না হয় তোমরা চাইলে আমরা কিনে নিতেও রাজি আছি। তারা (যুক্তরাষ্ট্র) এখনও আমাদের চিঠির জবাব দেয়নি। আমরা চেষ্টা করছি, যুক্তরাষ্ট্র থেকেও যেন ভ্যাকসিন পাই'।
ভ্যাকসিন পেতে এখন চীন ও রাশিয়ার সাথেও যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছে বাংলাদেশ।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ঈদুল ফিতরের আগেই ভ্যাকসিন সরবরাহ করতে চীনা সরকার কাজ শুরু করেছে। তবে চীনে ৫ দিনের মে দিবসের ছুটি চলছে যা ৫ মে শেষ হবে। এই ছুটির কারণে চীনে সবকিছু বন্ধ।
তিনি বলেন, ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং সম্প্রতি জানিয়েছেন যে ভ্যাকসিন ঈদের আগেই ঢাকায় এসে পৌঁছাবে। অন্যদিকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক নির্দিষ্ট করে জানিয়েছেন, আগামী ১০ মে তারিখে দেশে ভ্যাকসিন আসবে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সাথে চীন ও রাশিয়ার সংযোগ স্থাপন করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সেটি উল্লেখ করে ড. মোমেন বলেন, 'কখন এবং কত ডোজ টিকা কীভাবে আসবে তা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নেবে। তারা জানে কখন এটা আমাদের দরকার।'
ভ্যাকসিন পেতে রাশিয়া ও আমেরিকার সাথে যোগাযোগ চলছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'অর্ডারের ভিত্তিতে ভ্যাকসিন উৎপাদন হওয়ায় কিছু সময় লাগবে।'
এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত রবিবার বলেন, করোনাভাইরাস থেকে জনগণকে রক্ষায় সরকার যেকোনো মূল্যে ভ্যাকসিন সংগ্রহ করবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আমরা আরও ভ্যাকসিন আনছি, কত টাকা লাগবে সেটা কোন বিষয় নয়।'
বাণিজ্যিকভাবে বিক্রি ছাড়াও চীন ৫ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন উপহার হিসেবে বাংলাদেশকে সরবরাহ করবে।
এদিকে, বুধবার সকাল ১০টায় স্বাস্থ্য সচিবের সভাপতিত্বে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন সংগ্রহ ও বিতরণ সংক্রান্ত আন্ত:মন্ত্রণালয় পরার্মশক কমিটির প্রথম সভা হবে। এ সভায় ভ্যাকসিনের চাহিদা নিরূপন, নিরাপদ ও কার্যকর ভ্যাকসিন নির্বাচন, ভ্যাকসিন সংগ্রহ, বিতরণ ও মধ্যস্থতার মাধ্যমে ভ্যাকসিনের যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ করা হবে।