সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বৃক্ষ নিধনে পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা
পরিবেশবাদীদের আন্দোলন সত্ত্বেও রেস্তোরাঁ নির্মাণের উদ্দেশ্যে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গাছ কাটা অব্যাহত রেখেছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
উদ্যানের সাতটি স্থানে নির্মাণ কাজ চলছে। কংক্রিটের রাস্তা তৈরির জন্যও কেটে ফেলা হচ্ছে গাছ। গত বছরও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির বিপরীতে এবং চারুকলা অনুষদ সংলগ্ন দুই স্থানে সারি সারি গাছ কেটে ফেলা হয়।
বর্তমানে এসব জায়গায় নির্মাণাধীন রেস্তোরাঁ কাঠামোও দৃশ্যমান। ছাদ নির্মাণের কাজও প্রায় শেষের পথে।
মঙ্গলবার অনতিবিলম্বে গাছ কাটা বন্ধ করার দাবি জানায় পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা)। তরুণ লেখক, শিল্পী, সাহিত্যপ্রেমী এবং চলচ্চিত্র নির্মাতারাও বুধবার একই দাবিতে মানববন্ধন করেন।
তরুণ চলচ্চিত্র নির্মাতা সুজিত সজীব জানান, এখানে প্রায় ৩০০টি গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। এর মধ্যে এক-তৃতীয়াংশের বেশি সংখ্যক গাছই ছিল ৩০-৪০ বছর বয়সী।
তিনি আরও বলেন, 'আমরা যা-ই করি না কেন, আমাদের প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা করতে হবে। মানুষ এখানে বৃক্ষরাজির মাঝে নির্মলতার সন্ধানে আসেন। ঢাকার প্রাণকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত এই উদ্যান যদি ধ্বংস হয়, তাহলে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম প্রাণভরে বিশুদ্ধ নিঃশ্বাস নিতে কোথায় যাবে!'
মানববন্ধনে তিনটি দাবি উত্থাপন করা হয়। দাবিগুলো হলো- গাছ কেটে ফেলার পেছনে জড়িতদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসা, উন্নয়নের নামে ভবিষ্যতে গাছ কাটা বন্ধ করা এবং বর্ষাকালে ১০ হাজার চারাগাছ রোপন করা।
বাসস্থান হারাচ্ছে কাঠবিড়ালি ও শঙ্খচিল
উদ্যানের বেশ সাধারণ কিন্তু মোহনীয় একটি দৃশ্য হলো গগন শিরিষ গাছ বেয়ে চড়তে কিংবা নামতে থাকা কাঠবিড়ালি। এ ধরনের বহু গাছ এরই মধ্যে কেটে ফেলা হয়েছে।
প্রকৃতিপ্রেমীরা বলছেন, উদ্যানে গগন শিরিষ গাছের সংখ্যা আরও কমতে থাকলে কাঠবিড়ালির সংখ্যাও রাতারাতি হ্রাস পাবে।
দোয়েল, শ্যামা, শালিক, বুলবুলি ও শঙ্খচিলের মতো বিভিন্ন প্রজাতির পাখিও ঢাকার এই কংক্রিটের জঙ্গলে বাসস্থান হারানোর ঝুঁকিতে আছে। অপরিকল্পিত এসব স্থাপনার কারণে উদ্যানের ফার্ন, গুল্ম, মৌমাছি, সাপ, বাঁদুড় ও প্রজাপতির মতো জীববৈচিত্র্যও এখন হুমকির মুখে।
'মানুষ প্রাণীদের এভাবে বিপদে ফেলতে পারে না। আমরা প্রকৃতিকে বিরক্ত না করেই নির্মাণ করতে পারি। কিন্তু সরকার ধ্বংসের পথই বেছে নিয়েছে,' বলেন সজীব।
বাড়তে থাকা তাপমাত্রা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
জলবায়ু পরিবর্তন বিশেষজ্ঞ এবং চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভের সম্মানিত নির্বাহী পরিচালক এম জাকির হোসেন খান বলেন, গাছের সংখ্যা কমলে বৃষ্টিপাতও কমে যাবে। বৃক্ষ পরিবেশ থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড গ্রহণের মাধ্যমে আবহাওয়া শীতল রাখে।
সবুজায়ন কমে কংক্রিট স্থাপনা বৃদ্ধি পাওয়ায় ঢাকাবাসী তাপদাহের সম্মুখীন হচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
এদিকে মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা এক হাজার বৃক্ষ রোপন করবে। সেইসঙ্গে প্রকল্পটির জন্য তারা জনসমর্থনও কামনা করেছে।
মন্ত্রণালয় কর্তৃক জারিকৃত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মুক্তিযুদ্ধ ও বিভিন্ন আন্দোলনের ইতিহাস সংরক্ষণের জন্য সৌধসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে, যাতে তরুণ প্রজন্ম ও বিশ্ব এসব বিষয়ে জানতে পারে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, নির্মাণাধীন স্থাপনাও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংরক্ষণ এবং দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আকর্ষণের উদ্দেশ্যে বাস্তবায়িত হচ্ছে।
২০১৮ সালের ১ জানুয়ারি শুরু হওয়া প্রকল্পটি ২০২২ সালের ৩০ জুন নাগাদ শেষ হওয়ার সময়সূচী নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রকল্পটিতে বরাদ্দকৃত অর্থের পরিমাণ ২৬৫ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। এখন পর্যন্ত এই প্রকল্পের পেছনে ৭৪ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে।