স্বাস্থ্যবীমায় কর রহিতের দাবি জানিয়েছে বিআইএ
আগামী অর্থবছরের বাজেটে স্বাস্থ্যবীমায় কর রহিত করণসহ পাঁচ দফা দাবি জানিয়েছে বীমা কোম্পানিগুলোর মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশন (বিআইএ)।
সংগঠনটি মনে করছে, স্বাস্থ্যবীমা কর রহিত করলে এ খাতে প্রিমিয়াম আয় ও গ্রাহক বেড়ে যাবে।
বৃহস্পতিবার ভার্চুয়ালি আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির সভাপতি শেখ কবির হোসেন এসব দাবি তুলে ধরেন।
শেখ কবির হোসেন বলেন, 'আমাদের দেশে প্রচলিত বীমা আইনে জীবন বীমা পলিসির প্রিমিয়ামের ওপর কোনো ভ্যাট দিতে হয় না। কিন্তু কোনো বীমাগ্রহীতা জীবন বীমার সঙ্গে স্বাস্থ্যবীমা যুক্ত করে পলিসি করলে স্বাস্থ্যবীমার প্রিমিয়ামের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হয়। এতে করে প্রিমিয়ামের মাত্রা বেড়ে যায়। ফলশ্রুতিতে গ্রাহক স্বাস্থ্যবীমা করার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলে'।
প্রধানমন্ত্রী নিজেই স্বাস্থ্যবীমা বৃদ্ধির জন্য উৎসাহিত করেছেন। সেখানে স্বাস্থ্যবীমায় সাধারণ মানুষের আস্থা বৃদ্ধির জন্য ১৫ শতাংশ কর রহিতকরণ জরুরি বলে তিনি উল্লেখ করেন।
বিভিন্ন কোম্পানি সূত্রে জানা গেছে, করোনার মধ্যে এখাতে ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবীমা বেড়ে গেছে। মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যবীমা নিয়ে সচেতনা আগের তুলনায় বাড়ছে। অনেকে স্বাস্থ্যবীমা পলিসি গ্রহণ করছেন। আগে মোট পলিসির ৫ থেকে ১০ শতাংশ ছিল স্বাস্থ্যবীমা, এখন তা ২০ শতাংশের ওপরে চলে গেছে।
বিআইএ সভাপতি বলেন, এজেন্ট কমিশনের ওপর ৫ শতাংশ অগ্রিম কর পরিশোধের বিধান রয়েছে। কিন্তু বর্তমান আগ্রাসী করোনাভাইরাসে বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রায় সব দেশই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে, যা বৈশ্বিকভাবে মহামারি আকারে আবির্ভূত হয়েছে।
করোনার কারণে বিগত তিন মাস সব মাঠকর্মী গৃহবন্দি থাকায় তারা কোনো কাজ করতে পারছে না। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার স্বার্থে তারা জনগণের দুয়ারে দুয়ারে গিয়ে প্রিমিয়াম সংগ্রহ করতে পারছে না। নতুন ব্যবসা তো দূরের কথা নবায়ন প্রিমিয়ামও সংগ্রহ করতে পারছে না।
এ পরিস্থিতিতে বীমা এজেন্টদের অগ্রিম ৫ শতাংশ কর পরিশোধের বিধান আগামী দুই অর্থবছরের জন্য স্থগিত করা প্রয়োজন।
পুনঃবীমার উৎসে মূল্য সংযোজন কর প্রত্যাহার দাবির পক্ষে তিনি বলেন, বীমা কোম্পানি প্রিমিয়াম গ্রহণ করলেই গ্রাহকের নিকট থেকে ১৫ শতাংশ হারে মূসক গ্রহণ করে তা সরকারি কোষাগারে জমা দেয়।
বীমা কোম্পানি ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার স্বার্থে এই প্রিমিয়ামের একটি অংশ পুনঃবীমা করে। এটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত একটি ব্যবস্থা। যেহেতু প্রিমিয়াম নেয়ার সময় সম্পূর্ণ প্রিমিয়ামের ওপর আইন অনুযায়ী মূসক সরকারি কোষাগারে জমা করা হয় এবং এই প্রিমিয়ামেরই একটি অংশ পুনঃবীমাকারীকে দেয়া হয়, সেহেতু পুনঃবীমা প্রিমিয়ামের ওপর ভ্যাট আরোপের কোনো সুযোগ নেই। এ ধরনের ভ্যাট ধার্য করা হলে বিষয়টি দ্বৈতকর বলে বিবেচিত হবে।
বিআইএ সভাপতি আরও বলেন, আইন অনুযায়ী- তালিকাভুক্ত ব্যাংক, ইন্স্যুরেন্স ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর হার সাড়ে ৩৭ শতাংশ। কিন্তু ব্যাংকের তুলনায় বীমা কোম্পানির আয় খুবই নগণ্য। ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির কর হার ব্যাংকিং কোম্পানির সমান, যা কখনো কাম্য হতে পারে না।
অন্যদিকে উৎপাদনকারী ও অন্যান্য সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের কর হার ২৫ শতাংশ অথবা তার চেয়ে কম।
অর্থ সামাজিক নিরাপত্তা প্রদান করে বিধায় বিশ্বের অধিকাংশ দেশে লাইফ বীমা কোম্পানির কর্পোরেট ট্যাক্স নন-লাইফ বীমা কোম্পানির থেকে কম হয়। তাই ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির করপোরেট কর হার ব্যাংকিং কোম্পানির সমান না রেখে নন-লাইফ বীমা কোম্পানির জন্য ৩৫ শতাংশ এবং লাইফ বীমা কোম্পানির জন্য ৩০ শতাংশ করা প্রয়োজন।
তাছাড়া জীবন বীমার পলিসিহোল্ডারদের মুনাফার ওপর ৫ শতাংশ গেইন ট্যাক্স কাটার নিয়ম বন্ধ করার পক্ষে তিনি বলেন, গ্রামগঞ্জের পলিসিহোল্ডারদের ঝুঁকির বিষয় মুনাফার সম্বন্ধে সুবিধার কথা বুঝিয়ে তারপর পলিসি বিক্রি করা হয়। ক্ষুদ্র পলিসিহোল্ডারদের মুনাফার ওপর ৫ শতাংশ গেইন ট্যাক্সের যে বিধান চালু করা হয়েছে তা যদি উঠিয়ে নেয়া না হয়, তাহলে দেশে লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ব্যবসা প্রতিনিয়ত কমতে থাকবে এবং কোম্পানিগুলোর পক্ষে টিকে থাকা কষ্টসাধ্য হবে।
বীমা কোম্পানিগুলো এসব দাবি বছরের পর বছর করে আসছে তবে তা মানা হচ্ছে কতটা, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে প্রায় এক যুগ ধরে সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসা শেখ কবির হোসেন বলেন, 'আমরা দাবি করি, অনেক সময় সে দাবি পূরণ হয় না। যদিও সব ক্ষেত্রে আমার প্রবেশাধিকার আছে ঠিকই'।
'আমরা বলতে পারি না যে আমাদের কোনও দাবি পূরণ হয়নি। কিছু দাবি পূরণ হয়েছে। মানুষ যা চায় তার সবই পায় না। তবুও, আমাদের চেষ্টা করতে হবে', বলেন শেখ কবির হোসেন।