আইটি ও লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং খাতে সম্প্রসারিত হচ্ছে কর অব্যাহতি সুবিধা
আসন্ন ২০২১-২০২২ অর্থবছরে আইটি খাতের নতুন ৫টি সেবার জন্য কর অব্যাহতি সুবিধা সম্প্রসারিত করা হচ্ছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণ, আইটি ও সফটওয়ার ভিত্তিক সেবার বিকাশে এই সুযোগ রাখা হচ্ছে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
একই সঙ্গে আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে আনতে লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পে এবং দক্ষতা উন্নয়নে কর অব্যাহতি সুবিধা দেয়া হতে পারে।
বর্তমানে ২২টি প্রযুক্তি নির্ভর সেবা কর অব্যাহতি সুবিধা পেয়ে থাকে।
নতুন করে যে ৫টি সেবাকে করের আওতামুক্ত রাখা হচ্ছে, এগুলো হলো- ক্লাডউ সার্ভিস, সিস্টেম ইন্টিগ্রেশন, ই-লার্নিং প্লাটফর্ম, ই-বুক পাবলিকেশন, মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্ট সার্ভিস এবং ফ্রিল্যান্সিং।
মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের স্বপ্নকে আরো এক ধাপ এগিয়ে নিয়া যাওয়ার লক্ষে, নতুন ৫টি সেবাকে কর অব্যাহতি দেয়া হচ্ছে। এতে করে এক দিকে নতুন উদ্যাক্তা তৈরি হবে। অন্যদিক বাংলাদেশের অর্থনীতির ডিজিটাল রুপান্তর ত্বরান্বিত হবে। ফলে, কম খরচে উন্নত ডিজিটাল সেবা মানুষের কাছে পৌছানো যাবে।
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অফ সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস)-এর সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবির দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড-কে বলেন, দেশে আইটি খাতের প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করতে সাহায্য করবে এই সম্প্রসারিত কর অব্যাহতি।
"আইটি নির্ভর খাতে প্রতি বছর পরিবর্তনের প্রয়োজন পড়ে, কেননা প্রতিনিয়তই আমাদের জীবনের নিত্যনতুন সেবার বিকাশ ঘটছে। কর অব্যাহতির ফলে এ খাতে বিনিয়োগ আরও বাড়বে।"
বেসিসের তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ৮০০টি সফটওয়্যার কোম্পানি চালু আছে। এরমধ্যে, ২৫০টি কোম্পানি বছরে ৬০টি দেশে ৮০কোটি ডলার মূল্যের আইসিটি পণ্য রপ্তানি করে।
ইউএসএইড এর তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশি সফটওয়্যার ও আইসিটি পণ্য রপ্তানির সবচেয়ে বড় ও প্রধান ক্ষেত্র উত্তর আমেরিকা। মোট আয়ের ৩৫ শতাংশই আসে আমেরিকান ক্রেতাদের থেকে, ১৫ শতাংশ আসে ব্রিটিশ ক্রেতাদের থেকে। ডেনমার্ক ও নেদারল্যান্ডসের মতো কিছু ইউরোপিয়ান দেশ থেকেও আয় হয়।
খাত সংশ্লিষ্টরা জানান, অনেক সফটওয়্যার আছে যেগুলো দেশে তৈরি হয় না। বিদেশ থেকে আনতে হয়, যাতে ২৫-৫৮ শতাংশ শুল্ক দিতে হয়। ফলে দেশে ওইসব সফটওয়্যারের দাম অনেক বেশি পড়ে। কিন্তু কর অব্যাহতির কারণে এমন সফটওয়্যার সাশ্রয়ী দামে পাওয়া যাবে।
বর্তমানে আইটি খাতের যেসব সেবা কর অব্যাহতি সুবিধা ভোগ করছে সেগুলো হচ্ছে- সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, সফটওয়্যার বা এপ্লিকেশন কাস্টমাইজেশন, এনটিটিএন, ডিজিটাল কনটেন্ট ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট, ডিজিটাল এনিমেশন ডেভেলপমেন্ট, ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্ট, ওয়েবসাইট সার্ভিস, ওয়েব লিস্টিং, আইটি প্রসেস আউটসোর্সিং, ওয়েবসাইট হোস্টিং, ডিজিটাল গ্রাফিক্স ডিজাইন, ডিজিটাল ডাটা এন্ট্রি এন্ড প্রসেসিং, ডিজিটাল ডাটা এনালেটিক্স, জিওগ্রাফিক্স ইনফরমেশন সার্ভিসেস, আইটি সাপোর্ট অ্যান্ড সফটওয়্যার মেইনটেনেন্স সার্ভিস, সফটওয়্যার ল্যাব টেস্ট সার্ভিস, কল সেন্টার সার্ভিস, ওভারসজ মেডিক্যাল ট্রান্সক্রিপশস সার্ভিস, সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন সার্ভিস, ডকুমেন্ট কনভারশন, রোবোটিক্স প্রসেস আউটসোর্সিং এবং সাইবার সিকিউরিটি সার্ভিস।
এনবিআর মনে করে, এসব খাতে কর অব্যাহতি ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের স্বপ্নকে আরো একধাপ এগিয়ে নেবে এবং অর্থনীতির ডিজিটাল ট্রান্সমিশনকে ত্বরান্বিত করবে। পাশাপাশি এসব খাতে নতুন উদ্যোক্তা তৈরি হবে। সহজে এবং কম খরচে উন্নত ডিজিটাল সেবাকে জনগণের জন্য সহজলভ্য করা যাবে।
আইটি খাতের পাশাপাশি কর অব্যাহতি সুবিধা থাকছে লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পে। বিশেষজ্ঞ ও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই নীতি নির্ধারণী সহায়তা, উদ্যোগ ও কর অব্যাহতির ফলে ভবিষ্যতে লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং খার বড় খাতে পরিণত হবে।