বাংলাদেশের সবচেয়ে ভয়াবহ ১০টি সাইক্লোন
বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তরের মতে, বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় 'ইয়াস' প্রবল আকার ধারণ করে সমুদ্রে একই এলাকায় অবস্থান করছে। মঙ্গলবার (২৫ মে) রাত থেকেই উপকূলীয় এলাকায় এর প্রভাব শুরু হবে।
'ইয়াস' এর আসন্ন তান্ডব আমাদের আবার মনে করিয়ে দিচ্ছে এ অঞ্চলে বাংলাদেশের অভ্যুত্থানের পূর্ব থেকেই সংঘটিত সবচেয়ে ভয়াবহ কিছু সাইক্লোনের কথা।
চলুন আজ জেনে নেয়া যাক বাংলাদেশে আঘাত হানা সবচেয়ে ধ্বংসাত্বক কিছু সাইক্লোন সম্পর্কে-
১। ১৯৭০ সালের ভোলা সাইক্লোন: ১৯৭০ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে (বর্তমান বাংলাদেশ) এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গে এই সাইক্লোন আঘাত হানে। এর ফলে সর্বমোট ৫ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছিল যা এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ বলে মনে করা হয়।
২। দ্য গ্রেট বাকেরগঞ্জ সাইক্লোন ১৮৭৬: ১৮৭৬ সালের ১৯ অক্টোবর থেকে ১ নভেম্বর পর্যন্ত চলতে থাকা এই সাইক্লোন বাকেরগঞ্জ উপকূল (বর্তমান বরিশালে মেঘনা নদীর মোহনায়) এবং ব্রিটিশ শাসিত ভারতের কিছু অংশে আঘাত হানার ফলে সেবার ২ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়।
৩। ১৮৯৭ চট্টগ্রাম সাইক্লোন: এই ঘূর্ণিঝড়টি উপকূলীয় গ্রামাঞ্চল দিয়ে বয়ে যায় এবং প্রায় ১ লাখ ৭৫ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। সেবার দেশে কলেরা মহামারিতে ১৮ হাজার মানুষের মৃত্যুর পরপরই ঘূর্ণিঝড় আবারও লাখো প্রাণ কেড়ে নেয়।
৪। ১৯৯১ বাংলাদেশ সাইক্লোন: ১৯৯১ সালের ৩১ মে থেকে ২ জুন পর্যন্ত চলে এই সাইক্লোন। সুপার সাইক্লোনিক ঘূর্ণিঝড়টি সাগরমুখী দ্বীপগুলোসহ পটুয়াখালির চরাঞ্চল, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও নোয়াখালিতে ঘন্টায় সর্বোচ্চ ১১০ কিলোমিটার বেগে আঘাত হানে। এই ঘূর্ণিঝড়ে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়ায় ১ লাখ ৪০ হাজার এবং ১ দশমিক ৫ বিলিয়ন টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়।
৫। ডিসেম্বর ১৯৬৫ সাইক্লোন: ঘন্টায় ২১৭ কিলোমিটার বেগে এই ঘূর্ণিঝড় ১৫ ডিসেম্বর কক্সবাজার, উপকূলীয় এলাকা ও পটুয়াখালীতে আঘাত হানে এবং এতে ১৯ হাজার ২৭৯ জনের মৃত্যু হয়।
৬। ১৯৬৩ সাইক্লোন (২৮-২৯ মে): প্রচন্ডমাত্রার এই ঘূর্ণিঝড় দেশের নোয়াখালি, কক্সবাজার ও সন্দ্বীপ, কুতুবদিয়া, মহেশখালীর মতো সাগরমুখী দ্বীপগুলোতে আঘাত হানে। এই ঘূর্ণিঝড়ের গতিবেগ ছিল ঘন্টায় ২২৩ কি. মি.। সম্পদের বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতিসহ এই ঘূর্ণিঝড়ে ১১ হাজার ৫২০ জনের প্রাণ যায়।
৭। ১৯৬১ সাইক্লোন: ঘন্টায় ১৬১ কি. মি. গতিতে এটি ১৯৬১ সালের ৯ মে বাগেরহাট ও খুলনা অঞ্চলে আঘাত হানে এবং ১১,৪৬৮ জন মানুষের মৃত্যু ঘটায়।
৮। ১৯৮৫ সাইক্লোন (২৪-২৫ মে): দেশের চট্টগ্রাম অঞ্চলে এই সাইক্লোন ঘন্টায় সর্বোচ্চ ১৫৪ কি. মি. বেগে আঘাত হানে এবং এতে ১১,০০০ মানুষের প্রাণহানি হয়।
৯। ১৯৮৮ সাইক্লোন জিরো ফোর বি (04B): ভয়াবহ এই ঘূর্ণিঝড় দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে ঘন্টায় ১৬২ কি. মি. বেগে আঘাত হানে এবং সেই সাথে সমুদ্রে পানির উচ্চতা বেড়ে যায় ৪ দশমিক ৫ মিটার। এই সাইক্লোনের ফলে দেশের ১১,৭০৮ জনের মৃত্যু হয়।
১০। ১৯৬০ সাইক্লোন: ঘন্টায় ২১০ কি. মি. বেগে আঘাত হানা এই সাইক্লোনের ফলে দেশে ৫,১৪৯ জনের মৃত্যু হয়।
এখন পর্যন্ত যতগুলো সাইক্লোনের রেকর্ড করা হয়েছে, তার মধ্যে ১৯৭০ সালের ভোলা সাইক্লোনকেই সর্বোচ্চ ধ্বংসাত্মক বলে মনে করা হয়।
এছাড়াও বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে সিডর, নার্গিস, আইলা, মহাসেন, রোয়ানুর মতো সাইক্লোনগুলোতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। তন্মধ্যে শুধু সিডরের ফলেই ৩,৩৬৩ জনের মৃত্যু হয়।