মার্চে এডিআর মেনে চলতে পারেনি ১১টি ব্যাংক
করোনায় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ব্যাহত হওয়ায় ঋণের চাহিদা স্বাভাবিকের তুলনায় কম। এরপরও ১১টি ব্যাংক (কনভেনশনাল ও ইসলামী) ঋণ আমানত অনুপাত (এডিআর) মেনে চলতে পারেনি। নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে বেশি ঋণ দিচ্ছে এসব ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে, ২৫ মার্চ পর্যন্ত ঋণ-আমানত অনুপাত (এডিআর) সংক্রান্ত হালনাগাদ পরিসংখ্যানে এই তথ্য পাওয়া গেছে।
ঋণ আমানত অনুপাত অতিক্রম করে ঋণ দিলে আমানতকারীদের আমানত ঝুঁকির মধ্যে পড়ে। এই ঝুঁকি নিরসনেই ব্যাংকগুলোর জন্য সময় সময়ে এডিআর নির্ধারণ করে দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
ঋণ বিতরণ কমাতে চাইলে এডিআর কমানো হয়। আবার বাড়াতে চাইলে বৃদ্ধি করা হয়। করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধারের জন্য গেল বছর ঋণ বিতরণ বাড়াতে এডিআর বৃদ্ধি করেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
২ শতাংশ বাড়িয়ে কনভেনশনাল (প্রচলিত) ব্যাংকগুলোর জন্য ৮৭ শতাংশ এবং ইসলামী ব্যাংকগুলোর জন্য ৯২ শতাংশ করা হয়েছে। অর্থাৎ প্রচলিত ব্যাংকগুলো ১০০ টাকা আমানতের বিপরীতে সর্বোচ্চ ৮৭ টাকা ঋণ দিতে পারবে। অন্যদিকে ইসলামী ব্যাংকগুলো দিতে পারবে ৯২ টাকা।
এডিআর বাড়ানোর পরও মার্চ মাসে ১১টি ব্যাংক এই অনুপাত অতিক্রম করেছে। এর মধ্যে ঋণ কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে বেসিক, পদ্মা ও ন্যাশনাল ব্যাংক আগে থেকেই এডিআর মেনে চলতে পারছে না।
সম্প্রতি নির্ধারিত মাত্রায় এডিআর নামিয়ে আনতে না পারলে ন্যাশনাল ব্যাংক ঋণ দিতে পারবে না বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।
এর বাইরে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক বাদে ৭টি বেসরকারি ব্যাংক এডিআর মেনে চলতে পারছে না। এদের মধ্যে চতুর্থ প্রজন্মের দুটি বেসরকারি ব্যাংকও আছে।
ব্যাংকগুলো নির্ধারিত মাত্রায় এডিআর ধরে না রাখা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'কেন ব্যাংকগুলো এডিআর নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না তা আমরা দেখবো।
তবে ব্যাংক খাতের অতিরিক্ত তারল্য আছে এবং প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নের প্রয়োজন বিবেচনায় নিয়ে এডিআর বেশি হলেও কিছু ক্ষেত্রে আমাদের ছাড় দিতে হবে'।
এদিকে করোনার ফলে ঋণের চাহিদা কম থাকায় সার্বিকভাবে গেল মার্চ মাসে ব্যাংক খাতে ঋণ আমানত অনুপাত দাঁড়িয়েছে ৭২.৮২ শতাংশ। এর মধ্যে প্রচলিত (কনভেনশনাল) ব্যাংকগুলোতে এই হার ৬৮.১৩ শতাংশ, আর ইসলামী ব্যাংকগুলোতে ৮৪.৫৩ শতাংশ।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মেঘনা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সোহেল আর কে হুসেইন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'সার্বিকভাবে ব্যাংক খাতে এডি রেশিও না বাড়া আমাদের বলে দিচ্ছে ব্যাংকের হাতে প্রচুর তারল্য (লিকুইডিটি) আছে। এই অনুপাত ৮৩ থেকে ৮৪ শতাংশে থাকলে ভালো হতো'।
তিনি জানান, বর্তমানে বেসরকারি খাত থেকে নতুন কোন ব্যবসা প্রকল্প একেবারেই পাচ্ছেন না। যেসব শিল্প উৎপাদনে আছে সেগুলোও সম্প্রসারণে যাচ্ছে না।
এসব কারণেই ঋণের চাহিদা হ্রাস পেয়ে, বিতরণ কম হচ্ছে, যার ফলাফল হিসেবে ঋণ আমানত অনুপাত কম। সরকার যদি ব্যাংকখাত থেকে ঋণের পরিমাণ না বাড়ায় তাহলে চলতি বছর জুড়েই ঋণ আমানত অনুপাতে খুব একটা পরিবর্তন হবে না বলে ধারণা করছেন অভিজ্ঞ এই ব্যাংকার।
তিনি জানান ঋণের চাহিদা না থাকায় এখন গ্রাহক পর্যায়ে ঋণের সুদহার এখন অনেক কমে গেছে। এটি গ্রাহকদের জন্য একটি সুযোগ। অন্যদিকে অতিরিক্ত তারল্য থাকায়, টাকা ফেলে না রেখে ব্যাংকগুলো বন্ডে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে।