কয়রায় দুই সহস্রাধিক মানুষের স্বেচ্ছাশ্রমে ভেঙ্গে যাওয়া বেড়িবাঁধ মেরামত
ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশের উপকুলীয় অঞ্চলের অনেক বাঁধ। এরইমধ্যে, শাকবাড়ীয়া নদীর জোয়ারের পানির তোড়ে খুলনার সুন্দরবন সংলগ্ন কয়রা উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়নের মঠবাড়ি গ্রামের ভেঙ্গে যাওয়া বেড়িবাঁধ মেরামত করেছে গ্রামবাসী।
গত বুধ ও বৃহস্পতিবার জোয়ারের প্রবল পানির তোড়ে কয়রা উপজেলার চারটি ইউনিয়নের ১১টি স্থানের পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে অন্তত ২০টি গ্রাম লবণ পানিতে প্লাবিত হয়। এরমধ্যে মহারাজপুর ইউনিয়নের মঠবাড়ি গ্রামের মোসলেম সরদারের বাড়ির পাশের ৬০ ফুট বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে গিয়ে মঠবাড়ী, বাউলিয়াঘাটা, মহারাজপুর, সুতিরকোণা, হায়াতখালী এবং কয়রা সদর ইউনিয়নের চার নম্বর কয়রা ও উত্তর চক লবণ পানিতে তলিয়ে যায়।
দুদিন পর শুক্রবার সকাল ৬টায় স্থানীয় দুই সহস্রাধিক মানুষ স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে উক্ত বাঁধ মেরামতের কাজ শুরু করে। বেলা ১২টা জোয়ার আসা পর্যন্ত দীর্ঘ ৬ ঘণ্টা হাতে হাত মিলিয়ে ভেঙ্গে যাওয়া বাঁধ মেরামতের কাজ চলে। মেরামতে ক্ষতিগ্রস্ত মঠবাড়ী গ্রামের মানুষদের সাহায্য করে কয়রা, শ্রীরামপুর, অর্জুনপুর, পল্লীমঙ্গলসহ আশপাশের ১০ থেকে ১৫টি গ্রামের মানুষ। তারা বাঁশ, মাটি, সিমেন্টের বস্তা দিয়ে অস্থায়ী এই বাঁধ মেরামতের চেষ্টা করেন। এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাতে বাঁধ মেরামতের কাজে অংশ নিতে গ্রামবাসীদের আহ্বান করে মাইকিং করা হয়।
স্থানীয় বাসিন্দা নীতিশ সানা বলেন, গত ২৬ মে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে বিভিন্ন স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে ও বেড়িবাঁধ উপচে অন্তত ২০টি গ্রাম লবণ পানিতে তলিয়ে যায়। বৃহস্পতিবারের জোয়ারে ভাঙন কবলিত বেড়িবাঁধ দিয়ে আরও বেশি লবণ পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে। বর্তমানে স্থানীয় মানুষ অনেক কষ্টের মধ্যে আছে। অনেকে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষসহ আশপাশের ১০-১৫ গ্রামের দুই সহস্রাধিক মানুষ মানুষ স্বেচ্ছায় ভেঙ্গে যাওয়া বেড়িবাঁধ মেরামতে নামে।
স্থানীয় বাসিন্দা সঞ্জয় মণ্ডল বলেন, কয়রার মানুষের এখন একটাই চাওয়া টেকসই বেড়িবাঁধ। প্রতিবছর মানুষ পানিতে ডুবছে। এ জন্য তারা নিজেরাই বেড়িবাঁধ মেরামতে নেমেছেন।
মহারাজপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জিএম আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে অসংখ্য জায়গাতে বেড়িবাঁধ ভেঙে গ্রামের পর গ্রাম প্লাবিত হয়। শত শত মাছের ঘের ভেসে যাওয়াসহ হয়েছে ব্যাপক ফসলহানি। এখানকার বাঁধ সংস্কারের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের যথাযথ সহযোগিতা না পাওয়ায় আজ এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।
কয়রা উপজেলা চেয়ারম্যান এসএম শফিকুল ইসলাম বলেন, শুক্রবার ভোর থেকে মঠবাড়ি গ্রামের মোসলেম সরদারের বাড়ির পাশের বেড়িবাঁধ সংস্কার শুরু করা হয়। এখানে প্রায় তিন হাজার মানুষ স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করেন। দুপুরে ফের নদীতে জোয়ার আসার আগেই কাজ শেষ করা হয়।
সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো)-২ সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী সাজ্জাদ হোসেন বলেন, স্থানীয় জনগণের স্বেচ্ছা শ্রমের ভিত্তিতে মহারাজপুর ইউনিয়নের মঠবাড়ি গ্রামের শাকবাড়ীয়া নদীর ভেঙ্গে যাওয়া বেড়িবাঁধের মেরামত কাজ করা হয়। এ জন্য পাউবোর পক্ষ থেকে বাঁশ, বস্তা, টিনসহ আনুসঙ্গিক সরঞ্জাম সরবরাহ করা হয়েছে। বর্তমানে ভেঙ্গে যাওয়া বেড়িবাঁধগুলো তদারকি করা হচ্ছে। ভেঙ্গে যাওয়া বেড়িবাঁধগুলো পাউবোর পক্ষ থেকে দ্রুত সংস্কার করা হবে।