হোম অফিস চলাকালে নির্দিষ্ট কর্ম ঘণ্টাতেই চলছে ডেটিং, ঘুম এবং পর্ন দেখা: গবেষণা
কোভিড-১৯ মহামারির শুরুর দিকে মানুষের কী করা উচিত এ নিয়ে বিভিন্ন মহলে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরগরম বিতর্ক শুরু হয়। কেউ বলছিলেন এটি নিজের যত্ন নেওয়ার সময়, খুব বেশি চাপ না নিয়ে একদিনের লক্ষ্য ঠিক করে ধীরে ধীরে এগুনো উচিত। আবার অনেকেই বলছিলেন, ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে শরীরচর্চা করা উচিত, নতুন ভাষা শেখা ও দৈনিক ১০টি বই পড়া উচিত।
সম্প্রতি কোয়ারেন্টিনে থাকা মানুষ নিরলসভাবে তাদের কাজ করছেন নাকি পাশাপাশি অন্যান্য নানা রকম কাজ করছেন তা জানতে নেইলসন কোম্পানি একটি গবেষণা পরিচালনা করে। প্রায় ১০০ বছর পুরনো এই মার্কেটিং গবেষণা ও রেটিং ফার্মের গবেষণাটিতে উঠে এসেছে, মদ্যপান, ভিডিও গেম খেলা, জাঙ্ক ফুড খাওয়া, টেলিভিশন, নেটফ্লিক্স ও পর্ন দেখা এবং গাঁজা খাওয়া- আমেরিকানরা এসব কাজ করেছেন আগের চেয়ে বহুগুণে বেশি।
গবেষণার ফলাফল থেকে জানা যায়, মার্চের শেষে দিকে এসে অ্যালকোহল বিক্রির পরিমাণ আগের চেয়ে ৫৫ শতাংশ বেড়ে যায়। ২০১৯ সালের তুলনায় টাকিলা, জিন ও ককটেল- বিভিন্ন স্পিরিট বিক্রির পরিমাণ বেড়েছে ৭৫ শতাংশ। ওয়াইন ও বিয়ার বিক্রি বেড়েছে যথাক্রমে ৬৬ ও ৪২ শতাংশ। অনলাইনে অ্যালকোহল বিক্রির পরিমাণ বিস্ময়করভাবে বেড়েছে, আগের চেয়ে ২৪৩ শতাংশ প্রায়!
যুক্তরাষ্ট্রের যে সব অঙ্গরাজ্যে গাঁজা বৈধ, সে সব স্থানে গাঁজা বিক্রির পরিমাণও বেড়েছে। ইলিনয়ের গাঁজা বিক্রির ডিসপেনসারিগুলোতে মার্চ মাসে ৩ কোটি ৬০ লাখ ডলারের গাঁজা বিক্রি হয়েছে। 'করোনাভাইরাস সংক্রমণের মধ্যে ক্যালিফোর্নিয়ায় গাঁজার বিক্রি আকাশচুম্বী' শিরোনামে প্রতিবেদনও প্রকাশ করেছে দ্য লস এঞ্জেলেস টাইমস।
জনপ্রিয় পর্ন ওয়েবসাইট পর্নহাবে প্রতিদিন ১২ কোটি মানুষের আনাগোনা ছিল। লকডাউন চলাকালীন ওয়েবসাইটটির ট্রাফিক বেড়েছে ১১.৬ শতাংশ।
এনবিসি নিউজের প্রতিবেদনে সে সময় লেখা হয়, "২০২০ সালের কোয়ারেন্টিন শেষে অনেক আমেরিকান নিজেদের আরও অবসন্ন ও অস্বাস্থ্যকর রূপে আবিষ্কার করবেন।"
এসময় বেড়ে গেছে জাঙ্ক ফুড বিক্রির পরিমাণও। ব্লুমবার্গের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, মানুষ স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া বন্ধ করে দিচ্ছে। প্রতিবেদনটিতে বিভিন্ন গবেষণার উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়,এসময় চিপস, ওরিও, বার্গার, প্রিটজেল ও এধরনের খাবার গ্রহণের পরিমাণ বেড়ে গেছে। কোয়ারেন্টিনের সময় অস্বাস্থ্যকর খাবার খেয়ে মানুষের যে বাড়তি ওজন বাড়ছে, সাইকোলজি টুডে একে 'কোয়ারেন্টিন ১৫' (১৫ পাউন্ড) নামে অভিহিত করেছে।
মার্চে নেইলসন কোম্পানি জানায়, ১৫৬.১ বিলিয়ন মিনিটের কন্টেন্ট স্ট্রিম করেছেন আমেরিকানরা। ইউটিউবের ভিউয়ারশিপ বেড়েছে ২০ শতাংশ।
ই-কনোলাইটের পরিচালিত সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় বাসা থেকে অফিসের কাজের নির্দিষ্ট কর্মঘণ্টায় অন্যান্য অনেক কাজের পরিমাণ উঠে এসেছে। গবেষণার ফলাফল বলছে, ৪২ শতাংশ মানুষ ওয়ার্ক-ফ্রম-হোমের সময় ডেটিং-এ ছিলেন, ৪১ শতাংশ মানুষ যৌনকাজে লিপ্ত ছিলেন।
গবেষণাটিতে অংশগ্রহণকারী প্রায় অর্ধেক মানুষ জানিয়েছেন তারা অফিসের সময়ের মধ্যে কোনো অ্যালকোহলিক পানীয় পান করেছেন। ৭৭ শতাংশ জানিয়েছেন তারা অনলাইনে শপিং করেছেন, কাজের সময়ে সপ্তাহে অন্তত একবার।
৫০ শতাংশ মানুষ আগের কোম্পানির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ থাকাকালীন অন্য কোম্পানির হয়ে কাজ করেছেন। ৪৪ শতাংশ মানুষ কাজের সময় অন্যান্য কাজের জন্য সমালোচনার স্বীকার হয়েছেন।
৭৬ শতাংশের বেশি অংশগ্রহণকারী দিনে চার ঘণ্টার বেশি সময় কাজ করলেও, ৪০ শতাংশ মানুষ জানিয়েছেন, তারা চার ঘণ্টা তার বেশি সময় কম্পিউটার থেকে দূরে ছিলেন।
তবে, অবশ্যই এই জরিপ সার্বজনীন নয়। বিভিন্ন পরিস্থিতিতে মানুষ কী ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েন তাও এখানে বিবেচনায় রাখা হয়নি। অনেকের কাছে প্রয়োজন মিটিয়ে জীবন ধারণ করাই কষ্টকর হয়ে পড়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রেই প্রায় ৮ কোটি মানুষ বেকার ভাতা ও সুবিধা পাওয়ার আবেদন করেছেন।
এই কঠিন সময় পার হলে হয়তো আমরা রোরিং টুয়েন্টিজের স্বাদ পাবো। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ও স্প্যানিশ ফ্লু মহামারির শেষে ১৯১৯ সালের দিকে এক নতুন আশাবাদী যুগের সূচনা হয়। নতুন নতুন প্রযুক্তির উদ্ভাবন, জ্যাজ সঙ্গীতের যুগ, হারলেম রেনেসাঁর সূচনা, শিল্প-সংস্কৃতির প্রসার- মানুষ পরিপূর্ণভাবে জীবনকে উপভোগ করা শুরু করে।
আজ থেকে এক বছর পর নতুন কোনো গবেষণার ফলাফলে হয়তো দেখা যাবে, আমরা বিশ্বজুড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছি, প্রিয়জনকে জড়িয়ে ধরছি, রেস্তোরাঁ, বার মানুষে পরিপূর্ণ, লাইভ কনসার্ট, খেলাধুলা সবকিছুতে মানুষের ব্যাপক অংশগ্রহণ।
দীর্ঘ দিন ধরে কোভিড-১৯ আক্রান্তদের দুর্দশা, মৃত্যু দেখার পর মানুষ হয়তো যার যা আছে তার মর্ম উপলব্ধি করবে ও আরও ভালোভাবে জীবন উপভোগের চেষ্টা করবে। মানুষ হয়তো এমন চাকরি খোঁজার চেষ্টা করবে যা তার জন্য অর্থবহ। সময়টা হবে উত্তেজনার, আশাবাদের ও পরিবর্তনের।
- সূত্র: ফোর্বস