আইসিইউ সংকট ও দেরিতে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ায় রামেক হাসপাতালে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য আইসিইউ শয্যা রয়েছে মাত্র ১৮ টি। যার মধ্যে একটি আবার চিকিৎসা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জন্য নির্ধারিত। বাকি ১৭ টি সবসময় করোনা রোগীদের দ্বারা পূর্ণ থাকে। এই ১৭ টি আইসিইউয়ের জন্য প্রতিদিন সিরিয়াল পড়ে ৭০ থেকে ৮০টি। সেই সিরিয়াল পেতে পাঁচ থেকে ১০ দিন সময় লেগে যাচ্ছে।
চিকিৎসকরা বলছেন, আইসিইউ সুবিধা না পেয়েই রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আরও বেশি রোগীর মৃত্যু হচ্ছে। সময়মত আইসিইউ'র ব্যবস্থা করা গেলে রোগীদের বাঁচানো সম্ভব হতো। আবার রোগীদের ফুসফুস বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর হাসপাতালে ভর্তি হওয়ায় তাদের সুস্থ করে তোলা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানান চিকিৎসকরা।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানান, হাসপাতালের আইসিইউ শয্যার প্রকট সঙ্কট, কিন্তু আইসিইউ'র চাহিদা ব্যাপক।
"প্রতিদিন ৭০ থেকে ৮০ জনের মতো আইসিইউয়ের জন্য আবেদন করেন। কিন্তু শয্যা রয়েছে মাত্র ১৮ টি। তা-ও ১০টি শয্যা থেকে ১৮ টি শয্যা বাড়ানো হয়েছে। এখন আর আইসিইউ শয্যা বাড়ানোর সুযোগও নেই। বাজেট নেই আবার আইসিইউ শয্যা বাড়ানোর কোনো স্থানও নেই," বলেন তিনি।
"একারণে যাদের আইসিইউ সুবিধা দিতে পারছি না তাদের জন্য হাই-ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা ব্যবহার করতে হচ্ছে। হাই-ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা ব্যবহার করে তাদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া কোনো উপায় নেই। তবে বেশিরভাগ রোগী ফুসফুস বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর হাসপাতালে ভর্তি হওয়ায় তাদের বাঁচানো কঠিন হয়ে পড়ছে। উপসর্গ দেখা দেওয়ার পর চিকিৎসা শুরু হলে অনেকে রোগীকেই বাঁচানো সম্ভব হতো," যোগ করেন তিনি।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যাপক জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. চিন্ময় কান্তি দাস বলেন, "হাসপাতালের বেশিরভাগ রোগীর মৃত্যুর পেছনে একটিই কারণ, ফুসফুসের খারাপ অবস্থার পর হাসপাতালে ভর্তি হওয়া। সঠিক সময়ে করোনা শনাক্তের পর চিকিৎসা নিলে এত রোগী মারা যেত না। কারণ এখন অনেকের ক্ষেত্রেই এমনটা হচ্ছে করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর বুঝে উঠতেই পারছে না। অথচ ফুসফুস ততক্ষণে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে গেছে। এগুলো আসলে জনসাধারণের অসচেতনতা। এজন্য আমরা সবাইকে পরামর্শ দিচ্ছি যেকোনো জ্বর, সর্দি-কাশি হলেও যাতে পরীক্ষা করান। এতে সংক্রমিত হলো কিনা বোঝা যায় এবং সে অনুযায়ী চিকিৎসা নেওয়া সম্ভব হত। এর ফলে মৃত্যুর সংখ্যা অনেক কমানো সম্ভব।"
এদিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনা ওয়ার্ডে মৃত্যুর মিছিল থামছেই না। করোনা ওয়ার্ডে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এরমধ্যে রাজশাহীর আটজন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ছয়জন ও নাটোরের একজন রয়েছেন। এর আগের দিন বৃহস্পতিবার ১২ জন মারা যায়।
মৃত্যুর সাথে সাথে হাসপাতালে রোগী ভর্তির সংখ্যাও বাড়ছে। হাসপাতালে এখন ২৭১ টি শয্যার বিপরীতে রোগী ভর্তি আছেন ২৯৭ জন। অতিরিক্ত রোগীদের করোনা ওয়ার্ডের মেঝেতে ও বারান্দায় থাকতে হচ্ছে। ফলে সেন্ট্রাল অক্সিজেনের সুবিধা পাচ্ছেন না তারা।
হাসপাতালের পরিচালক শামীম ইয়াজদানী জানান, ২৭১ টি শয্যা থাকলেও বারান্দায় আরও শয্যা তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। আবার অনেক রোগী ওয়ার্ডের মেঝেতে বিছানা করে দিলে সেখানে থাকছেন। তাদের সেন্ট্রাল অক্সিজেন দেওয়া সম্ভব না হলেও অক্সিজেন কনসেনট্রেটরের মাধ্যমে অক্সিজেন দেওয়া হচ্ছে। ফলে সমস্যা হচ্ছে না।
এদিকে রাজশাহীর দুইটি পিসিআর ল্যাবে গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৬৬ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ১৪৩ জন নতুন শনাক্ত হয়েছেন। করোনা সংক্রমণের হার ৩৯.০৭ শতাংশ।
করোনার সংক্রমণ বাড়ায় রাজশাহী সিটি করপোরেশন এলাকায় শুক্রবার বিকেল থেকে সাতদিনের কঠোর লকডাউন শুরু হয়েছে। এই লকডাউন চলবে আগামী ১৭ জুন পর্যন্ত।
লকডাউনে দোকানপাট, শপিংমল, বাজার, গণপরিবহন বন্ধ রয়েছে।চিকিৎসা সংশ্লিষ্ট ও পন্যবাহি যানবাহন ছাড়া ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে।
রাজশাহী মহানগর পুলিশ কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিক জানিয়েছেন, মহানগর পুলিশের ১২ থানার পাশাপাশি লকডাউন বাস্তবায়নে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।কোনোভাবেই মহানগরে কাউকে প্রবেশ করতে এবং মহানগর থেকে বাইরে বের হতে দেওয়া হবে না।