পরিবারের কাছে ফিরে গেছেন আবু ত্ব-হা
রাতেই পরিবারের জিম্মায়' ছেড়ে দেয়া হয় আবু ত্ব-হা মুহাম্মদ আদনানসহ তার তিনজন সঙ্গীকে। ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী আদালতে নেয়ার পর আবু ত্ব-হা মুহাম্মদ আদনানসহ তিনজনকে 'নিজ ও পরিবারের জিম্মায়' ছেড়ে দেয় জুডিশিয়াল আদালত। প্রায় তিন ঘন্টা জবানবন্দি আদালতে রের্কড করার পর পরিবারের নিকট তাদেরকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
গত আটদিন নিখোঁজের পর ফিরে আসা আলোচিত ইসলামী বক্তা আবু ত্ব-হা মুহাম্মদ আদনানসহ তিনজনকে ফিরে পেয়ে পরিবারের লোকজন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে। নিরুদ্দিষ্ট আবু ত্ব-হা মুহাম্মদ আদনানসহ তিনজনই গাইবান্ধায় বন্ধু সিয়ামের বাসায় ব্যক্তিগত কারণে আত্মগোপনে ছিলেন।
গত শুক্রবার (১৮জুন) রাত সাড়ে নয়টা থেকে পৌন ১২টা পর্যন্ত আবু ত্ব-হা মুহাম্মদ আদনানসহ তার সফরসঙ্গী আবু মুহিত আনছারী ও গাড়িচালক আমির উদ্দিনের জবানবন্দী গ্রহণ করেন রংপুর জুডিশিয়াল আমলি আদালত-৪ এর বিচারক কেএম হাফিজুর রহমান। জবানবন্দী শেষে নিজ ও পরিবারের জিম্মায় তাদেরকে ছেড়ে দেয়ার আদেশ দেন আদালতের বিচারক।
রংপুর মেট্রোপলিটন কোতয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রশিদ জানান নিখোঁজ হওয়া ওই তিনজনের সার্বিক পরিস্থিতি আদালতের কাছে তুলে ধরা হয়। আদালত বিচার-বিশ্লেষণ করে তিনজনকে নিজ নিজ পরিবারের জিম্মায় ছেড়ে দিয়েছেন। তিনি আরও জানান, ইসলামী বক্তা আবু ত্ব-হা মুহাম্মদ আদনানসহ তার তিনজন সফরসঙ্গীকে শুক্রবার দুপুরে গাইবান্ধার মাস্টার পাড়ার একটি বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয়। এরপর তাদেরকে রাতেই আদালতে হাজির করা হয়।
পুলিশ সূত্র আরও জানায়, গত ১০ জুন রাত থেকে কোনো খোঁজ মিলছিল না আবু ত্ব-হা, তার দুই সঙ্গী আবু মুহিত আনছারী, মোহাম্মদ ফিরোজ ও গাড়িচালক আমির উদ্দিনের। সেদিন বিকেল চারটার দিকে ওই তিনজনসহ আবু ত্ব-হা রংপুর থেকে ভাড়া করা একটি গাড়িতে ঢাকার পথে রওনা দেন। রাতে মোবাইল ফোনে সর্বশেষ কথা হলে তিনি সাভারে যাচ্ছেন বলে তার মাকে জানান।
পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়, ওই দিন রাত দুইটা ৩৬ মিনিটে প্রথম স্ত্রী হাবিবা নূরের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা হয় আবু ত্ব-হা মুহাম্মদ আদনানের। তিনি সাভার যাচ্ছেন বলেই জানান স্ত্রীকে। তারপর থেকেই তাদের সবার ফোন বন্ধ থাকায় আর যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
পরে ১১ জুন বিকেলে রংপুর মেট্রোপলিটন কোতয়ালি থানায় দুইটি জিডি করেন আবু ত্ব-হার মা আজেদা বেগম ও আমির উদ্দিনের ভাই। এরপর নিখোঁজ চারজনের খোঁজ চেয়ে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) সংবাদ সম্মেলনও করেন আবু ত্ব-হার দ্বিতীয় স্ত্রী সাবিকুন নাহার সারা। সেই সংবাদ সম্মেলনে স্বামীকে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য সরকারের নিকট দাবি জানান তিনি।
নিখোঁজ হওয়ার তুমুল আলোচনার মধ্যে গত শুক্রবার আবু ত্ব-হার খোঁজ মেলে দুপুরে। তার খোঁজ দেন বিপ্লব মিয়া নামে এক প্রতিবেশী। তিনি দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আবু ত্ব-হা মুহাম্মদ আদনানকে তার শ্বশুর আজহারুল ইসলাম মন্ডলের বাড়িতে ঢুকতে দেখেন। পুলিশ খবর পেয়ে বেলা আড়াইটার দিকে শ্বশুর আজহারুল ইসলাম মণ্ডলের বাড়ি থেকে আবু ত্ব-হাকে নিয়ে আসেন মেট্রোপলিটন উপ-পুলিশ কমিশনার কার্যালয়ে। সাড়ে ৪টার দিকে রংপুর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের ক্রাইম ডিভিশনের উপ-কমিশনার আবু মারুফ হোসেন জানান, 'মা ও ভাইয়ের জিডির সূত্রে আবু ত্ব-হার সন্ধানে অনুসন্ধান করতে থাকি। গোপন সূত্রে জানতে পারি, আবু ত্ব-হা নগরীর চারতলা মোড়ের আবহাওয়া অফিস মাস্টার পাড়ায় তার প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে আছেন। তারপর সেখান থেকে তাকে নিয়ে আসা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে অপর সঙ্গীদেরও সন্ধান পাওয়া যায়। এরপর গাড়িচালক আমির উদ্দিন ও আবু মুহিত আনছারীকেও পুলিশের কার্যালয়ে নিয়ে আসা হয়।
তিনি আরও বলেন, গাইবান্ধায় বন্ধু সিয়ামের বাসায় ব্যক্তিগত কারণে আত্মগোপনে ছিলেন চারজনেই। ব্যক্তিগত ও পারিবারিক কারণে আবু ত্ব-হা আত্মগোপনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। আর তার সফরসঙ্গীদেরও তার সঙ্গে রেখে দেন।
রংপুর মেট্রোপলিটন উপ-পুলিশ কমিশনার আবু মারুফ হোসেন জানান, আবু ত্ব-হা নিখোঁজের ঘটনায় করা সাধারণ ডায়েরির (জিডি) আলোকে ডিবি কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে রাত সাড়ে নয়টার দিকে তাদেরকে আদালতে পাঠানো হয়।
পরিবারের সদস্য আবু ত্ব-হার মামা মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম জানান, সরকারের কাছে তারা কৃতজ্ঞ, তার ভাগনেকে ফিরে পেয়েছেন। তিনি বলেন, রাতে আদালত তাদেরকে ঢেকে পাঠায়। তারা এসেছেন। আদালত তাদের সব কথা শুনে আবু-ত্ব-হা ও তার সফর সঙ্গীদের নিজ নিজ পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছেন।
বগুড়ার শিবগঞ্জ থানায় ডাকা হয়েছে ত্ব-হার অনুসারীকে
নিখোঁজের পর উদ্ধার ইসলামী বক্তা আবু ত্ব-হা মোহাম্মদ আদনানের সাথে যে আরও তিন 'অনুসারী' ছিলেন তাদের মধ্যে একজনের বাড়ি বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলায়। শুক্রবার ভোরে তাকেও উদ্ধার করা হয়। তার বগুড়ার শিবগঞ্জ থানায় আসার কথা রয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন ওসি সিরাজুল ইসলাম।
গত ১০ জুন রাত থেকে নিখোঁজ ছিলেন আবু ত্ব-হা আদনান। এরপর আলোচনায় আসে ত্ব-হার সাথে আরও তিনজন অনুসারী নিখোঁজ রয়েছেন। তাদের মধ্যে বগুড়ার শিবগঞ্জের কিচক ইউনিয়নের ছাতিয়ানপাড়ার বাসিন্দা ফিরোজ আলম। তার বাবার নাম আনিছুর রহমান। ফিরোজ নিখোঁজ হওয়ার পর শিবগঞ্জ থানায় তার বাবা আনিছুর রহমান একটি জিডি করেন।
ওসি সিরাজুল ইসলাম জানান, 'ফিরোজ নাকি শিবগঞ্জের মোকামতলা এলাকায় কোনো এক আত্মীয়ের বাড়িতে ছিলেন। শুক্রবার সকালে খোঁজ পাওয়ার পর তাকে থানায় ডাকা হয়েছে'।
ফিরোজের পড়াশোনা কোন পর্যায়ে সে বিষয়টি স্পষ্ট জানা না থাকলেও ওসি বলেন, 'ফিরোজ আলম আহলে হাদিসের অনুসারী ছিলেন। মতাদর্শগত বিষয়ে তার সঙ্গে হয়তো ত্ব-হার মিল ছিল। পাবর্তীপুরের ইউনাইটেড এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের শাখায় চাকরি করতেন। সেখান থেকে চাকরি ছেড়ে দেন এক বছর আগে। এরপর থেকে তিনি রংপুর-দিনাজপুরের বিভিন্ন এলাকায় যাওয়া-আসা করতেন। এখন কোনো কর্ম নেই। এরপরের বিষয় আমাদের কাছে জানা নেই। তিনভাই বোনের মধ্যে ফিরোজ বড়'।
তার বাড়ির পাশেই রেজাউল নামের এক ব্যক্তি রয়েছেন তিনি রাজশাহীর চারঘাটের এক জঙ্গি মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি বলে জানান ওসি সিরাজুল ইসলাম।