ইভ্যালীতে কোন রিস্ক নেই: সিইও
লোকসানে পণ্য বিক্রি করায় চলতি সম্পদের চেয়ে গ্রাহক ও মার্চেন্টদের কাছে বকেয়ার পরিমাণ ৩০০ কোটি টাকা বেশি হলেও এতে কোন রিস্ক নেই বলে বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানিয়েছেন ইভ্যালীর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মোহাম্মদ রাসেল।
তিনি বলেন, লোকসানে পণ্য বিক্রি করায় প্রায় ৩০০ কোটি টাকার এই গ্যাপ তৈরি হয়েছে। আমরা এই লোকসান কমাতে প্রায়োরিটি স্টোরস সেলস শুরু করেছি, যেখান থেকে প্রফিট হচ্ছে। গত মাসে ১০ কোটি টাকা সেলস করেছি, যেখানে আমরা ভালো প্রফিট পেয়েছি। ধীরে ধীরে ডিসকাউন্ট কমানো হবে, এতে লস কমবে, অন্যদিকে মার্চেন্টদের কাছ থেকে পাওয়া মার্জিন ও প্রাইরোটি স্টোরস সেলস থেকে প্রফিট বাড়বে।
'আমাদের প্রোজেকশন হলো, এভাবে ধীরে ধীরে লোকসান কমতে কমতে ২০২২ সাল গিয়ে আমাদের আর কোন লস হবে না এবং প্রফিট দিয়ে এতোদিনকার লস আমরা ২০২৪ সালের মধ্যে জিরোতে নিয়ে আসবো'- যোগ করেন তিনি।
- আরও পড়ুন: ইভ্যালী: বেপরোয়া নাকি চালাক
'আমরা যে ৩০০ কোটি টাকার গ্যাপে আছি, এই টাকা কোথায় গেছে? এই টাকা হয় কাস্টমার পেয়েছে, না হয় সাপ্লায়ার পেয়েছে। আমার সাইটে প্রতিদিন এক কোটি ভিজিটর আসছে, দেশের সব কোম্পানি ইভ্যালীর সঙ্গে বিজনেস করছে। এ পর্যন্ত ইভ্যালী শুধু সাপ্লায়ারদের ৬০০০ কোটি টাকা পেমেন্ট করেছে'- জানান মোহাম্মদ রাসেল।
তিনি বলেন, গ্রাহক ও মার্চেন্টদের কাছে আমাদের দায় ও সম্পদ মূল্যের মূল্যের গ্যাপ বর্তমানে আমরা সাপ্লায়ার্স ক্রেডিট দিয়ে ম্যানেজ করছি। সাপ্লায়ারস থেকে ক্রেডিট নিয়ে পণ্য সংগ্রহ করে গ্রাহকদের সরবরাহ করছি। এ কারণে আমাদের ক্রেডিট লিমিট বাড়তেছে।
'তবে আমরা গ্রাহকদের কন্টিনিউয়াসলি ডিসকাউন্ট দেব না। আমরা প্রফিট দিয়েই লোকসান কাভার করবো। এটা একটা লংটার্ম ভেঞ্চারের মতো। সিঙ্গেল পয়েন্টে হয়তো মনে হবে যে, এটা কিভাবে কাভার হবে? লসটা হয়েছে সেলস থেকে, প্রফিটও হবে সেলস থেকেই। তখন আমাদের ক্রেডিটও ব্যাক করাবো।'
ইভ্যালি চলতি দায় ও লোকসানের দুষ্টচক্রে বাঁধা পড়েছে এবং প্রতিষ্ঠানটির অস্তিত্ব টিকে না থাকার ঝূঁকি তৈরি হয়েছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের পর্যবেক্ষণ সম্পর্কে জানতে চাইলে মোহাম্মদ রাসেল বলেন, গত ২ বছর ধরে আমরা দেশের প্রায় সব কোম্পানি থেকেই প্রোডাক্ট পাচ্ছি। আমরা একটা কোর বিজনেস ডেভেলপমেন্ট করেছি। আমরা যে প্রাইসে প্রোডাক্টটা কিনতেছি, সেখানে প্রফিটিবিলিটি আছে। প্রফিটিবিলিটি না থাকলে এটাকে দুষ্টচক্র বা বেজলেস বলা যেত। কিন্তু আমরা মেজর একটা প্রফিটিবিলিটির জায়গা তৈরি করে ফেলছি। সেই প্রফিটিবিলিটি এবং সেলস হয়তো এখনও লসে চলছে। আমাদের প্রফিটিবিলিটি ধীরে ধীরে বাড়বে এবং লস ধীরে ধীরে কমবে। এটাই আমাদের বিজনেস পলিসি।
৭৩ কোটি টাকা মূল্যমানের গিফটকার্ডের বকেয়ার বিপরীতে ইভ্যালীর ব্যাংক একাউন্টে মাত্র ২ কোটি টাকা থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের গেটওয়ের পেমেন্টগুলো এখানে রিফ্লেকটেড না। বাংলাদেশ ব্যাংক শুধু ব্যাংক ব্যালেন্স দেখেছে। আমাদের গিফটকার্ড ক্যাশ ইক্যুইভ্যালেন্ট না, মানুষ প্রোডাক্ট কেনার জন্যই ব্যবহার করে। এই ৭৩ কোটি টাকার গিফটকার্ডের প্রোডাক্ট যখন গ্রাহকরা কিনবে, সেখানেও আমার মার্জিন থাকবে।
১ টাকা প্রফিট করতে যেয়ে ৩.৫৭ টাকা খরচ হচ্ছে। এভাবে খরচ করলে প্রফিট কীভাবে হবে, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, রেভিনিউ-লস আগে আরও বেশি ছিল। এখন সিগনিফিকেন্টলি কমে আসতেছে। একসময় একটা কমতে কমতে জিরো হয়ে যাবে এবং আমরা প্রফিটে ফিরবো।
নিট লোকসান বাড়ছে কেন, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, পুঞ্জিভূত নিট লোকসান বাড়ছে। কিন্তু আলটিমেটলি রেভিনিউ-লস অনুপাত সিগনিফিকেন্টলি কমে যাচ্ছে।
ডাটাবেইজে ব্যাংক কর্মকর্তাদের এক্সেস না দেওয়া সম্পর্কে রাসেল বলেন, আমাদের রিয়েল টাইম ডাটাবেইজ ফুলি অটোমেটেড না। আপডেটেড না। আমাদের অনেক কিছুই এখনও ম্যানুয়াল। আমরা সেটাই বলছি।
গ্রাহকদের কাছ থেকে অগ্রিম নেওয়ার পরও মার্চেন্টদের কাছে বকেয়া থাকার কারণ কি?- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, গ্রাহকদের কাছ থেকে আমরা যে এডভান্স নেই, তার চেয়ে বেশি দামে মার্চেন্টদের কাছ থেকে পণ্য কিনতে হয়। গ্রাহক বাড়ানোর জন্য বা বিজনেসটাকে সাসটেইবেল করার জন্য প্রচুর গ্রাহক দরকার হয় এবং প্রচুর বিক্রেতা দরকার হয়। গ্রাহকদের আকৃষ্ট করতে প্রচারণার একটা পার্টই হচ্ছে ডিসকাউন্ট, যা পৃথিবীর সব ই-কমার্সই দিয়ে থাকে।
মার্চেন্টদের কাছ থেকে বেশি দামে পণ্য কেনায় আমাদের কিছু ঘাটতি থাকে। সে কারণেই আমাদের রিয়েল টাইম ডেলিভারি হয় না। এটা ধীরে ধীরে কমে আসবে এবং রিয়েল টাইম ডেলিভারি হবে।
ইভ্যালী নতুন গ্রাহকদের কাছ থেকে অগ্রিম নিয়ে পুরনো দায় মেটাচ্ছে- বাংলাদেশ ব্যাংকের এমন পর্যবেক্ষণ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি ব্যবসায়িক সম্পর্ক ডেভেলপ করার বিষয়। একটা কোম্পানির সঙ্গে ব্যবসায়ীক সম্পর্ক তৈরির ক্ষেত্রে লেনদেন নির্ভর করবে দুই পক্ষ কতোদিন যাবত ব্যবসা করতেছে, তার ওপর।
রাসেল বলেন, একটা কোম্পানির পণ্য যদি আমরা এক মাস নিয়ে আবার তিন মাস না নেই, তাহলে ওই কোম্পানি আমাদের মার্জিন ও সাপ্লায়ার্স ক্রেডিট- কোনটিই দিবে না। এজন্য সব সময়ই একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ পণ্য মার্চেন্টদের কাছ থেকে নিতে হয়। তার মানে এই নয় যে, গ্রাহকের কাছ থেকে অগ্রিম নিয়ে মার্চেন্টদের পাওনা মেটাতে হয়। কারণ, গ্রাহকদের পণ্য সরবরাহ করাটাও তো এখনও আমাদের জন্য লোকসানের।
তিনি বলেন, ইভ্যালি ছাড়াও লোকাল যেসব ই-কমার্স কোম্পানি আছে, বাংলাদেশের মার্কেটে এদের এক্সেস এতো ইজি ছিল না। এখানে প্রচুর কাস্টমার ও সাপ্লায়ার এনগেজমেন্ট দরকার ছিল। এটা করতে যেয়ে হয়তো কিছু কিছু জায়গায় মিসম্যাচ এবং কিছু কিছু জায়গায় অস্বাভাবিক লেনদেন হওয়ার বিষয়টি মনে হতে পারে। আমাদের দেশে তো আর গ্লোবাল স্ট্রাকচারে ইনভেস্টমেন্ট নেই। এ কারণে আমি হেভিলি ডিপেনডেন্ট অন সাপ্লায়ার্স ক্রেডিট।
মোহাম্মদ রাসেল বলেন, ইভ্যালি এখন শুধু বাইক ছাড়া সব পণ্যই ৪৫ দিনের মধ্যে ডেলিভারি দিচ্ছে। এক বছরের মধ্যে বাইক বিক্রি কমিয়ে দেবো বা বন্ধই করে দিব।