অনলাইন কেনাকাটার রঙিন দুনিয়া: কেনো সাবধান হতে হবে?
চলতি বছরের জানুয়ারিতে যাত্রা শুরু করে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান আলেশা মার্ট। প্রচারণার অংশ হিসেবে প্রতিষ্ঠানটি তাদের পণ্যে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় ঘোষণা করে। ৩৫ দিনের মধ্যে পণ্য পৌঁছে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে ক্রেতাদের কাছ থেকে অগ্রীম অর্থ আদায় করা হয়।
যাত্রা শুরুর প্রথম মাসেই অনলাইন বাজারটি ক্রেতাদের কাছ থেকে ২৪ কোটি ২৯ লাখ টাকা সমমূল্যের ক্রয়াদেশ বা অর্ডার পায়।
সময়ের সাথে ই-কমার্স এই সাইট বিভিন্ন পণ্যে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় ঘোষণা করে। ফলে, এপ্রিলে মাসিক বিক্রির পরিমাণ দাঁড়ায় ১২৪ কোটি টাকা।
প্রথম চার মাসে আলেশা মার্টের মোট বিক্রির পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ২০০ কোটি টাকা।
আর এভাবেই লোভনীয় ছাড়ের মাধ্যমে বিদ্যুৎগতিতে অনলাইন বাজারগুলোর বিক্রির হার বৃদ্ধি পায়।
একই ব্যবসা পদ্ধতি অনুসরণ করে আরেক ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ই-অরেঞ্জ চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে চার মাসে গ্রাহকদের কাছ থেকে ৪০০ কোটি টাকার বেশি অর্ডার গ্রহণ করে। এপ্রিল মাসে প্রতিষ্ঠানটির মাসিক বিক্রির পরিমাণ দাঁড়ায় ১৫০ কোটি টাকা।
পণ্যে অতিরিক্ত ছাড় প্রদানের জন্য জনপ্রিয় আরেক অনলাইন বাজার ধামাকাশপিং জানুয়ারি থেকে চার মাসের মধ্যে সর্বমোট ৩৫০ কোটি টাকার অধিক মূল্যের অর্ডার পায়।
নতুন এই ব্যবসা পদ্ধতিতে অনলাইন বাজারগুলো ক্রেতাদের কাছ থেকে দুই-এক মাসের অগ্রীম টাকা সংগ্রহ করে। কিছু ক্ষেত্রে, প্রতিষ্ঠানগুলো পণ্য সরবরাহ করতে আরও বেশি সময় নিয়ে থাকে। এছাড়া, প্রায়ই তারা ক্রেতাদের জানিয়ে দেয় যে, তাদের অর্ডারকৃত পণ্যগুলো শেষ হয়ে গেছে আর তাই সেটা পাঠানো সম্ভব নয়।
তবে, মাসের পর মাস ধরে অপেক্ষার পরেও প্রতিষ্ঠানগুলো পণ্য পৌঁছাতে ব্যর্থ হলে ক্রেতারা তাদের টাকা ফেরত পান না বলে অসংখ্য অভিযোগ ওঠে।
অনলাইন ক্রেতাদের লোভনীয় সব ছাড়ের ফাঁদে ফেলে দেশের ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর বিশাল অঙ্কের অর্থ সংগ্রহ করার বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
অনিয়ন্ত্রিত এসব ই-কমার্স সাইটের মাধ্যমে উচ্চ লেনদেনের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নিকট একটি প্রতিবেদন পাঠিয়েছে। তারা জানিয়েছে, ক্রেতাদের কাছ থেকে সংগৃহীত অগ্রিম পরিশোধিত অর্থের বিপরীতে কোনো সম্পদ নেই।
প্রাথমিক বিশ্লেষণে, গত বছরের নভেম্বর থেকে চলতি বছরের এপ্রিল মাস পর্যন্ত ছয় মাসে আটটি অনলাইন বাজারের মোট বিক্রির পরিমাণ প্রায় এক হাজার ৩০০ কোটি টাকা বলে জানতে পেরেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে, এই সংখ্যাও মূল্য পরিশোধের বিভিন্ন পদ্ধতির মধ্য থেকে কেবলমাত্র একটি পদ্ধতিতে পরিশোধিত মূল্যের হিসাব অনুযায়ী নির্ণয় করা হয়েছে।
মূল্য পরিশোধের অন্যান্য মাধ্যমগুলোর লেনদেন বিবেচনায় আনলে একই সময়ে মোট বিক্রির পরিমাণ আরও বৃদ্ধি পাবে।
এছাড়া, অনলাইন প্রতিষ্ঠানগুলো গ্রাহকদের নির্ধারিত সময়ে পণ্য সরবরাহ করছে না বলেও বাংলাদেশ ব্যাংকের নজরে এসেছে।
কোনো অনলাইন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান যদি রাতারাতি ক্রেতাদের অর্থ নিয়ে গায়েব হয়ে যায় তাহলে তা বাড়তে থাকা ই-কমার্স শিল্পকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
এরই প্রেক্ষাপটে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোকে যথাযথ নিয়ন্ত্রণের আওতায় আনতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে অনুরোধ পেশ করেছে।
গ্রাহকদের কাছ থেকে অগ্রীম অর্থ সংগ্রহ করায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনস্ত ডিজিটাল কমার্স সেলের প্রধান ও মন্ত্রণালয়ের অরিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ হাফিজুর রহমান এই ব্যবসায়িক মডেলকে "অর্থ বাণিজ্য" হিসেবে অভিহিত করেছেন।
এ ধরনের অনলাইন প্রতিষ্ঠানগুলোকে ক্রেতাদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে লাইসেন্স নিতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এছাড়া, বাড়তে থাকা ই-কমার্স শিল্প প্রতিষ্ঠানের দুটি দিক আছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
"প্রথম বিষয়টি হলো- বহু নতুন উদ্যোক্তা এ ধরনের ব্যবসায় সম্পৃক্ত হচ্ছেন, যার ফলে কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধির পাশাপাশি অভিনব সব পণ্য আসবে," বলেন তিনি।
"দ্বিতীয়টি হলো অন্ধকার দিক। তা হলো- কিছু অনলাইন প্রতিষ্ঠান গ্রাহকদের কাছ থেকে অগ্রীম অর্থ আদায়ের পর প্রতারণা করছে," বলে মন্তব্য করেন হাফিজুর রহমান।
গ্রাহকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ই-কমার্স ব্যবসা পরিচালনায় নতুন নীতিমালা তৈরি করছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
অনলাইন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো যে ব্যবসা পদ্ধতি অনুসরণ করে
সাধারণত, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসমূহ সূচনালগ্ন থেকেই মুনাফা সৃষ্টির লক্ষ্য নিয়ে কার্যক্রম শুরু করে। কিন্তু, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে ব্যবসার একটি নতুন ধারা উদ্ভূত হয়েছে যেখানে প্রতিষ্ঠানগুলো নেতিবাচক ব্যালেন্স শিট দিয়ে যাত্রা শুরু করে।
নতুন এই ব্যবসার মূল লক্ষ্য হলো ডিজিটাল গ্রাহকদের সংখ্যা বৃদ্ধির ওপর ভিত্তি করে নগদ প্রবাহ বাড়িয়ে তোলা, যার মাধ্যমে সময়ের সাথে ব্যবসার প্রাতিষ্ঠানিক মূল্য বৃদ্ধি পাবে।
এই ধারায়, ই-কমার্স বা অন্যান্য প্রযুক্তিভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলো পণ্যের ওপর বিপুল মূল্যছাড়ের লোভনীয় ঘোষণার মধ্য দিয়ে বাজারে প্রবেশ করে।
চলমান কোভিড-১৯ মহামারির কারণে অনলাইন কেনাকাটার পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে, নতুন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো লোভনীয় ছাড়ের সব অফার নিয়ে ই-কমার্স খাতে প্রবেশের দিকে ঝুঁকছে।
অনলাইন ক্রেতাদের আচরণেও পরিবর্তন এসেছে। কোনো নতুন ডিজিটাল বাজারে পণ্য ক্রয়ের ক্ষেত্রে তারাও ছাড়ের সন্ধান করে থাকেন।
প্রশ্ন হলো- এ ধরনের ব্যবসায়িক মডেল বা পদ্ধতি টেকসই বা স্থিতিশীল কিনা। পাশাপাশি, ডিজিটাল মাধ্যমের ব্যবসাগুলো এখন পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণের আওতায় না আনায় ভোক্তা অধিকার নিশ্চিত করা নিয়েও রয়েছে শঙ্কা।
বিপুল সংখ্যক অনলাইন বাজার ই-কমার্স খাতে প্রবেশ করার পর চলতি বছরের এপ্রিল মাসে ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মে মোট লেনদেনের পরিমাণ সর্বকালের সর্বোচ্চ ৯১১ কোটি টাকায় গিয়ে পৌঁছায়।
বর্তমানে, প্রায় এক হাজার ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত রয়েছে।
ব্যবসা চালু করার শুরুতেই মূল্যছাড় প্রদানের কারণে প্রতিষ্ঠানের লোকসান সৃষ্টি হয় বলে জানান আলেশা মার্টের একজন সিনিয়র নির্বাহী।
তবে, প্রতিষ্ঠানটি গ্রাহকদের যুক্ত করার স্বার্থে বিনিয়োগ হিসেবে এসব ছাড় প্রদান করেছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি আরও জানান, ডিজিটাল গ্রাহকরা বর্তমানে পণ্যে অধিক ছাড় নিয়ে অভ্যস্ত। তবে, ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য মূল চ্যালেঞ্জ হলো গ্রাহকদের ধরে রাখতে সময় মতো পণ্য পৌঁছে দেওয়া, পর্যবেক্ষণ থেকে বলেন তিনি।
"ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর দেরিতে পণ্য সরবরাহের প্রবণতা আছে, যাতে করে তারা নগদ সংগৃহীত অর্থগুলো ব্যবহার করতে পারে। কিন্তু, এর ফলে গ্রাহকদের আস্থা কমছে," বলেন তিনি।
এই ধারার ব্যবসায় সময়মতো পণ্য সরবরাহ করার মধ্য দিয়ে গ্রাহকদের আস্থা অর্জন করাই ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর মূল চ্যালেঞ্জ বলে মন্তব্য করেন তিনি।
তা সত্ত্বেও, নতুন ব্যবসায়িক মডেল ব্যবহার করে দেশে দ্রুত বাড়তে থাকা ডিজিটাল ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো বিদেশি বিনিয়োগকারীদেরও আকৃষ্ট করছে।
বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ইতোমধ্যে স্থানীয় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান এবং ডিজিটাল পেমেন্ট পরিষেবা প্রদানকারীদের পেছনে বিনিয়োগ করা শুরু করেছে।
চলতি বছরের মার্চ মাসে, চীনের বৃহদাকার ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান আলিবাবা গ্রুপের অঙ্গ সংস্থা দারাজ বাংলাদেশ দেশের অনলাইন খাদ্য-সরবরাহ পরিষেবার প্রবর্তক হাংরি-নাকি প্রতিষ্ঠানকে অধিগ্রহণ করে।
অতিরিক্ত ছাড়ের আকর্ষণে ক্রেতা সৃষ্টির বাড়তে থাকা ব্যবসায়িক প্রবণতা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে দারাজের বিপণন ব্যবস্থার প্রধান সৈয়দ আহমেদ আবরার হাসনাইন বলেন, বৈশ্বিকভাবেই এই পদ্ধতি স্বীকৃত একটি ব্যবস্থা।
দারাজও মূল্যছাড়ের প্রচারণার মাধ্যমে ভোক্তা সৃষ্টি করেছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
"তবে, ছাড়ের বিষয়টি যুক্তিসংগত হওয়া উচিত। দারাজ সাময়িকভাবে কিছু সংখ্যক পণ্যের ওপর সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দেয়," বলেন তিনি।
দারাজের মূল লক্ষ্য হলো গ্রাহকদের আস্থা নির্মাণ এবং তাদের সন্তুষ্ট করতে মানসম্পন্ন পণ্য ও সেবাদান নিশ্চিত করা, বলেন তিনি।
তবে, ভোক্তা অধিকার রক্ষায় ই-কমার্স ব্যবসায় কোনো নীতিমালা না থাকায় ক্রেতারা ঝুঁকির মধ্যে আছে বলেও উল্লেখ করেন আহমেদ আবরার।
দায়ের মধ্য দিয়ে নতুন ব্যবসা শুরু করা ডিজিটাল মাধ্যমের নতুন ব্যবসায়িক প্রবণতা বলে মন্তব্য করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন সিনিয়র নির্বাহী কর্মকর্তা। তিনি বলেন, "এ ধরনের ব্যবসায়িক পদ্ধতি সারা বিশ্বেই বিরাজমান। তবে ব্যবসা গুটিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকায়, ভোক্তা অধিকার রক্ষায় কঠোর বিধিমালা সম্পর্কেও তা সতর্ক করে।"
বাংলাদেশে মহামারি চলাকালে এই পদ্ধতি অনুসরণ করে ই-কমার্স ব্যবসা দ্রুত বাড়তে থাকায়, বর্তমানে এ ধারার ব্যবসার কার্যকারিতা মূল্যায়ন করা জরুরি বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এছাড়া, সম্প্রতি উল্লেখজনকহারে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বাড়তে থাকায় প্রতারণা রোধে কঠোর নিয়ম ও বিধিমালা প্রণয়ন করা জরুরি বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
ই-কমার্স খাত নিয়ন্ত্রণে নতুন নীতিমালা জারি করতে বাংলাদেশ ব্যাংক বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সাথে কাজ করছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
জনপ্রিয় অনলাইন কেনাকাটার মাধ্যম ইভ্যালি দেরীতে পণ্য সরবরাহ করায় ইতোমধ্যে অনলাইন ক্রেতাদের ভোক্তা অধিকার নিশ্চিত করা নিয়ে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে।
বিভিন্ন পণ্যে অস্বাভাবিক ছাড় দেওয়ায় অনলাইন প্রতিষ্ঠানটি স্বল্প সময়ের মধ্যে বিপুল সংখ্যক ক্রেতার কাছ থেকে সাড়া লাভ করে। তবে, তারা সময় অনুযায়ী পণ্য পাঠাতে ব্যর্থ হয়। ফলে, ক্রমশ অনলাইন ব্যবসায় অরাজকতার সৃষ্টি হলে তা সরকারের নজরে আসে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরিচালিত এক তদন্ত প্রতিবেদনে দেখা যায় যে, ক্রেতারা ছয় থেকে সাত মাস আগে পরিশোধ করা অগ্রিম অর্থের পরিবর্তে পণ্য কিংবা মূল্য ফেরত- কোনোটাই পাননি।
লেনদেনের নথিপত্র অনুযায়ী, পণ্য দিতে ব্যর্থ হওয়ায় গত বছরের নভেম্বর থেকে চলতি বছরের এপ্রিলে ইভ্যালির বিক্রির পরিমাণ ক্রমশ হ্রাস পেতে দেখা যায়।
যেভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন অনলাইন ক্রেতারা
ধামাকা শপিং চলতি বছরের মে মাসে সিংগার ব্র্যান্ডের একটি রেফ্রিজারেটরের ওপর প্রায় ৪১ হাজার টাকার মূল্যছাড় প্রদান করে। পণ্যটির প্রকৃত মূল্য ছিলো ৮৬ হাজার টাকা।
ছাড় পেতে হলে, ক্রেতাদের অফারকৃত সম্পূর্ণ মূল্য অগ্রিম পরিশোধ করার শর্ত প্রদান করা হয়।
বিষয়টি যাচাই করতে, গত ৯ মে অগ্রিম অর্থ পরিশোধ করে প্রতিবেদক নিজেই পণ্যটি অর্ডার করেন। প্রতিবেদনটি লেখা অবধি এক মাস পরেও অনলাইন প্রতিষ্ঠানটি পণ্য পাঠানোর বিষয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। এমনকি, কবে নাগাদ পণ্যটি আসতে পারে, সে বিষয়েও তারা সম্পূর্ণ নিরব।
অনলাইন কেনাকাটার অভিজ্ঞতা ব্যক্ত করেন অপর ক্রেতা বি-আম্মা মল্লিকা। চলতি বছরের ১০ মে মল্লিকা ধামাকা শপিংয়ে ২৫ হাজার ২০২ টাকা অগ্রিম পরিশোধ করে স্যামসাং ব্র্যান্ডের একটি ওয়াশিং মেশিন অর্ডার করেন। পণ্যটির প্রকৃত মূল্য ছিলো ৪৬ হাজার টাকা।
তবে, এক মাস কেটে গেলেও তিনি পণ্যটি পাওয়ার বিষয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া পাননি।
অন্যদিকে, ২৬ বছর বয়সী জাহিদুল ইসলাম গত বছরে ৩০ ডিসেম্বর প্রায় ৫০ শতাংশ ছাড়ে ইভ্যালি থেকে ১০ কেজি গরুর মাংস অর্ডার করেন। সুপরিচিত সুপার শপ স্বপ্নের কাছ থেকে এই পণ্য আসার কথা ছিল।
গত ২৭ এপ্রিল, ইভ্যালি তাকে টাকা ফেরত দেওয়া হবে জানিয়ে বার্তা পাঠায়।
অগ্রিম অর্থ পরিশোধ করা সত্ত্বেও, ছয় মাস কেটে যাওয়ার পরেও এই গ্রাহক পণ্য কিংবা মূল্য ফেরত কোনোটাই পাননি।
এই সংবাদদাতাও নতুন অনলাইন শপ কেয়ার মি গ্লোবালে ৪০ শতাংশ ছাড়ে চলতি বছরের ১৮ মার্চ একটি পারফিউম অর্ডার করেন। অনলাইন দোকানটি মূল্যছাড়কৃত পণ্যের ২৫ শতাংশ অগ্রিম মূল্য গ্রহণ করে।
এক মাস পর, তারা ক্রেতাকে জানায় যে, তাদের পক্ষে এই পণ্য দেওয়া সম্ভব নয়। কোনো ধরনের ক্ষরিপূরণ ছাড়াই তারা অগ্রিম মূল্য ফেরত দেওয়ার কথা জানায়।
আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত মন্ত্রীসভা কমিটির প্রধান এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী এ কে এম মোজাম্মেল হকও পণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যছাড় নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, অনলাইন বাজারগুলো গ্রাহকদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহের পর যুবকের মতো গায়েব হয়ে যেতে পারে।
১৯৯৪ সালে প্রতিষ্ঠিত যুব কর্মসংস্থান সোসাইটি বা যুবক উচ্চ মুনাফা প্রদানের প্রলোভন দেখিয়ে আমানতকারীদের কাছ থেকে দুই হাজার ৫০০ কোটি টাকা সংগ্রহ করে। অবৈধ ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনার অভিযোগে ২০০৬ সালে সংস্থাটি বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ হওয়ার ১৫ বছর পরেও সাড়ে তিন লাখ বিনিয়োগকারীর কেউ তাদের বিনিয়োগের একটি পয়সাও ফেরত পাননি।
- প্রতিবেদনটি ইংরেজিতে পড়ুন: The bubbles of e-commerce
- বাংলায় অনুবাদ: তামারা ইয়াসমীন তমা