এক অর্থবছরে সর্বোচ্চ প্রবাসী আয় দেখল বাংলাদেশ
করোনার মাঝেও সদ্য বিদায়ী অর্থবছরে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আয় করেছে বাংলাদেশ। এর আগে কোন অর্থবছরে এত বেশি পরিমাণ রেমিট্যান্স আয় হয়নি।
২০২০-২১ অর্থবছরে তার আগের অর্থবছরের চেয়ে ৩৬ শতাংশ বেশি রেমিট্যান্স এসেছে, যার পরিমাণ ২,৪৭৮ কোটি ডলার। অর্থাৎ প্রতি মাসে গড়ে ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি প্রবাসী আয় এসেছে।
আজ সোমবার (৫ জুলাই) কেন্দ্রীয় ব্যাংক রেমিট্যান্সের যে হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে এই চিত্র ওঠে এসেছে।
এতে দেখা যায়, গত জুনে রেমিট্যান্স আয় ছিল ১৯৪ কোটি ডলার, যা গেল বছরের জুন মাসের চেয়ে প্রায় ৬ শতাংশ বেশি। মূলত, গেল বছরের জুন থেকেই রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়তে থাকে। জুলাই মাসে এসে তা আড়াইশ' কোটি ডলার ছাড়িয়ে যায়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে করোনার মাঝেও প্রবাসী আয়ের উচ্চ প্রবাহ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, রেমিট্যান্স পাঠানো প্রবাসীদের উৎসাহিত করতে সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সক্রিয় নানা প্রণোদনা ও পদক্ষেপের কারণে প্রবাসী আয়ের উচ্চ প্রবাহ নিশ্চিত করা সম্ভব হয়েছে।
প্রায় একই ধরনের বক্তব্য দিয়েছেন বিশ্লেষকরাও। তাদের মতে, প্রণোদনার পাশাপাশি করোনার ফলে অবৈধ উপায়ে রেমিটেন্স পাঠানো প্রায় বন্ধ থাকার ফলেই এত প্রবৃদ্ধি হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালাগ-সিপিডি'র সম্মানীয় ফেলো ড. মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, রেমিট্যান্স বাড়ার অন্যতম প্রধান কারণ, করোনার ফলে বিভিন্ন দেশের সাথে বিমান যোগাযোগ বন্ধ থাকায় হুন্ডি বা অবৈধ পথে রেমিট্যান্স একেবারেই আসছে না।
তার মতে, স্বাভাবিক সময়ের মত অবৈধ চ্যানেল চালু থাকলে প্রণোদনার পরও এক বছরে এত বেশি রেমিট্যান্স আসতো না। কারণ, সরকার যে প্রণোদনা দিচ্ছে, অবৈধ উপায়ের মিট্যান্স পাঠালে তার কাছাকাছিই অর্থ পাওয়া যেত।
মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, বৈধ পথে খরচ কমানোর পাশাপাশি ৫ হাজার ডলারের নীচে রেমিট্যান্স পাঠানোর ক্ষেত্রে কোন কাগজপত্র না লাগার সুবিধা নিয়েছেন প্রেরণকারীরা।
এই অর্থনীতিবিদ বলেন, উচ্চ রেমিট্যান্স প্রবাহ কয়েকটি উপায়ে আমাদের সামস্টিক অর্থনীতির ব্যবস্থাপনাকে সহযোগিতা করেছে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে, করোনার মাঝে অনেকের আয় কমে গেলেও, রেমিট্যান্সভোগী পরিবারগুলোর আয় বেড়েছে। এই আয় বৃদ্ধি সামগ্রিকভাবে অর্থনীতিতে চাহিদা বাড়িয়েছে, যার ফলে উৎপাদন অব্যাহত ছিল। উৎপাদন অব্যাহত থাকায় সরবরাহ সচল ছিল। এছাড়াও, প্রবাসী আয় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়াতে সহায়তা করেছে। আর রিজার্ভ মুদ্রা বিনিময় হারকে স্থিতিশীল রেখেছে।
নতুন শুরু হওয়া অর্থবছরের জন্যও ২ শতাংশ প্রণোদনা অব্যাহত রাখা এবং ব্যাংকগুলোকে বিশেষ প্যাকেজ চালুর বিষয়ে বাজেটে ঘোষণা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। ইতোমধ্যেই অনেক ব্যাংক এক শতাংশ বাড়িয়ে রেমিট্যান্সের বিপরীতে ৩ শতাংশ প্রণোদনাও দিচ্ছে।
এতে নতুন অর্থবছরেও প্রবাসী আয়ের উচ্চ প্রবাহ অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা দেখছেন অভিবাসন নিয়ে গবেষণা করা প্রতিষ্ঠান রামরুর চেয়ারপারসন ড. তাসনিম সিদ্দিকী।
তিনি বলেন,অবৈধ পথ যদি বন্ধ থাকে, তাহলে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়তির দিকেই থাকবে। সেই সাথে সরকারকে প্রণোদনা বাড়িয়ে ২ শতাংশ থেকে ৪ শতাংশ করার প্রস্তাব করেছেন।
তিনি বলেন, এটা প্রবাসীদের প্রাপ্য। কারণ এই করোনার মাঝেও তারা যে অর্থ পাঠিয়ে অর্থনীতির চাকাকে গতিশীল রেখেছেন তার কৃতজ্ঞতাস্বরুপ সরকারের উচিত প্রণোদনা বাড়িয়ে দ্বিগুণ করা।