ইভ্যালির গিফট ভাউচারে পণ্য বিক্রি স্থগিত করছে ব্র্যান্ডগুলো
বিভিন্ন ব্যাংক তাদের ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে ইভ্যালির সঙ্গে লেনদেন স্থগিত করার পর এবার কোম্পানিটির গিফট ভাউচার গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে নোটিশ জারি করছে দেশের বিভিন্ন ব্র্যান্ড শপগুলো।
ইভ্যালির গিফট ভাউচার দিয়ে গ্রাহকদের কেনা পণ্যমূল্য বাবদ ব্র্যান্ডগুলোর পাওনা পরিশোধ না করায় কোম্পানিটির গিফট ভাউচার গ্রহণ করা হবে না বলে ক্রেতাদের উদ্দেশ্যে নোটিশ জারি করছে ব্র্যান্ডগুলো। গতকাল ট্রেন্ডজ, রঙ বাংলাদেশ, আর্টিসান আউটফিটার্স, ফিট এলিগ্যান্স, রিও ইন্টারন্যাশনাল ইভ্যালির গিফট ভাউচার গ্রহণ স্থগিত করে নোটিশ দিয়েছে।
পবিত্র ঈদ-উল আযহার আগে মার্কেট ও ব্র্যান্ডশপগুলো খোলার আগের দিন বুধবার ক্রেতাদের উদ্দেশ্যে ওয়েবসাইটে এমন ভার্চুয়াল নোটিশ ঝুলিয়েছে। কোন কোন ব্র্যান্ড ক্রেতাদের মোবাইলে এসএমএস পাঠিয়েও সতর্ক করেছে।
গত মাসে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া এক পরিদর্শন প্রতিবেদনে বাংলাদেশ ব্যাংক জানায় যে, ইভ্যালির মোট দায় ৪০৭.১৮ কোটি টাকা। গ্রাহকের কাছ থেকে অগ্রিম বাবদ ২১৩.৯৪ কোটি টাকা এবং মার্চেন্টদের নিকট হতে ১৮৯.৮৫ কোটি টাকার মালামাল বাকিতে গ্রহণের পর স্বাভাবিক নিয়মে প্রতিষ্ঠানটির কাছে কমপক্ষে ৪০৩.৮০ কোটি টাকার চলতি সম্পদ থাকার কথা থাকলেও রয়েছে মাত্র ৬৫.১৭ কোটি টাকা।
আরও ৭৩ কোটি টাকার সমমূল্য গ্রাহকদের পাওনা রয়েছে ইভ্যালির ভার্চুয়াল আইডিতে (অ্যাকাউন্ট, হোল্ডিং, গিফট কার্ড, ক্যাশব্যাক)। কিন্তু কোম্পানিটির ১০টি ব্যাংক হিসাবে মোট টাকা রয়েছে মাত্র ২ কোটি।
গ্রাহক ও মার্চেন্টদের কাছে ইভ্যালির দায়ের পরিমাণ আরও বেশি হতে পারে আশঙ্কা করে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতিবেদনে জানায় যে, এ কারণেই ইভ্যালি কর্তৃপক্ষ কোম্পানির রেপ্লিকা ডাটাবেইজে পরিদর্শন দলকে ঢুকতে দেয়নি।
'আমরা সময়কে রাঙিয়ে তুলি' স্লোগানের জনপ্রিয় ব্র্যান্ড 'রঙ বাংলাদেশ' নোটিশ জারি করে বলেছে, 'সম্মানিত ক্রেতা, আমরা অত্যন্ত দুঃখিত। আপনার কেনা গিফট ভাউচারের পেমেন্ট ইভ্যালি কর্তৃপক্ষ আমাদের প্রদান না করায় উক্ত ভাউচারটি গ্রহণ করা এই মুহূর্তে সম্ভব হচ্ছে না।'
'ভবিষ্যতে পেমেন্ট পাওয়া সাপেক্ষে এই ভাউচার আপনি অবশ্যই ব্যবহার করে কেনাকাটা করতে পারবেন। এমতাবস্থায় ইভ্যালি কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করতে বিনীত অনুরোধ করছি'- যোগ করেছে ব্র্যান্ডটি।
রঙ বলেছে, সরাসরি ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান হতে কেনা তাদের গিফট ভাউচার যথারীতি চলমান থাকবে।
ইভ্যালির ১০,০০০ টাকার স্মার্ট গিফটকার্ডের ছবি দিয়ে 'বিশেষ বিজ্ঞপ্তি' জারি করেছে আরেক জনপ্রিয় ব্র্যান্ড ট্রেন্ডজ।
ব্র্যান্ডটি বলেছে, 'অনিবার্য কারণবশত আমাদের ইভ্যালি গিফট কার্ড দিয়ে কেনাকাটা আপাতত স্থগিত আছে। পরবর্তী নির্দেশনা জানানো হবে।'
ফিট এলিগ্যান্স নোটিশ ইস্যু করে বলেছে, 'পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত আমাদের সকল শোরুমে ইভ্যালির গিফট কার্ড সেবা প্রদান স্থগিত থাকবে। যাদের গিফট কার্ডের মেয়াদ শেষ পর্যায়ে রয়েছে, তাদের কার্ডের মেয়াদ পরবর্তীতে বিবেচনা সাপেক্ষে বাড়িয়ে দেওয়া হবে'।
'ইভ্যালি গিফট কার্ড সংক্রান্ত নোটিশ' ইস্যু করে রিও ইন্টারন্যাশনাল জানিয়েছে, করোনা মহামারীর কারণে মোবাইলের স্টক এভেলেবেল না থাকার কারণে ইভ্যালির গিফট কার্ডের ডেলিভারি বন্ধ থাকবে। গিফট কার্ডের ডেলিভারি কার্যক্রম শুরু হলে সবাইকে কল বা এসএমএস এর মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হবে।'
আর্টিসান আউটফিটার্স তাদের ফেসবুক গ্রুপে এক পোস্ট করে বলেছে, 'পরবর্তী নির্দেশ না আসা পর্যন্ত আর্টিসান এর সকল শাখায় সব ধরণের ভাউচার রিদিম (ভাউচার দিয়ে কেনাকাটা) বন্ধ থাকবে।'
এর আগে গত ৪ জুলাই, গ্রাহক ও মার্চেন্টদের কাছ থেকে অগ্রিম নেওয়া ৩৩৮ কোটি টাকা আত্মসাত কিংবা অবৈধভাবে সরিয়ে ফেলার আশঙ্কা করে আলোচিত-সমালোচিত ই-কমার্স কোম্পানি ইভ্যালি ডটকমের বিরুদ্ধে মামলা করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
একই সঙ্গে ইভ্যালির বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যাংকের পাওয়া আর্থিক অনিয়মগুলো তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) পৃথক চিঠি পাঠায় মন্ত্রণালয়।
এছাড়া, গ্রাহকদের কাছ থেকে ২১৪ কোটি টাকা অগ্রিম গ্রহণ করে পণ্য ডেলিভারি না দেওয়া ও মার্চেন্টদের ১৯০ কোটি টাকা পাওনা ফেরত দেওয়ার বিষয়ে তদন্ত করে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনকে নির্দেশ দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।