চট্টগ্রাম বন্দরে জট কমাতে আমদানি কনটেইনার যাচ্ছে অফডকে
চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার জট নিরসনে খালাসের জন্য পণ্যবাহী আমদানি কনটেইনার বেসরকারি অফডকে পাঠানোর অনুমতি দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সাধারণত খাদ্যপণ্য সহ ৩৮ ধরনের আমদানি পণ্য খালাস দেওয়া হয় অফডকগুলো থেকে। বাকি পণ্যগুলো সরাসরি চট্টগ্রাম বন্দরের ইয়ার্ড থেকে ডেলিভারি দেওয়া হয়।
কিন্তু চট্টগ্রাম বন্দরে আমদানি কনটেইনারের স্তূপ জমে যাওয়ার কারণে ধারণ ক্ষমতার প্রায় ৮৬ ভাগ জায়গা দখল হয়ে যায়। এতে বন্দরে কনটেইনার জট সৃষ্টি হয়। সে কারণে আমদানি পণ্য বেসরকারি অফডক থেকে ডেলিভারি নেওয়ার অনুমতি দেয় এনবিআর।
সোমবার (২৫ জুলাই) এনবিআরের দ্বিতীয় সচিব (শুল্ক নীতি) মেহরাজ-উল-আলম সম্রাট স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে ৩ টি শর্ত উল্লেখ করে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়।
নির্দেশনায় বলা হয়, কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে চট্টগ্রাম বন্দরে সৃষ্ট কনটেইনার জট নিরসনের লক্ষ্যে নৌ পরিবহন মন্ত্রনালয়ের সুপারিশের ভিত্তিতে চট্টগ্রাম বন্দরে আগত সকল ধরনের পণ্য চালান সংশ্লিষ্ট কনটেইনার শর্ত সাপেক্ষে চট্টগ্রামে অবস্থিত ১৯টি অফডকে সংরক্ষণ ও আনস্টাফিং করার এবং উক্ত অফডক সমূহ হতে খালাস করার অনুমিত প্রদান করা হলো।
শর্তগুলো হচ্ছে, অফডকে স্থানান্তরের সময় শতভাগ কন্টেইনার আবশ্যিকভাবে স্ক্যানিং করতে হবে এবং স্ক্যানিং এর রিপোর্ট যথাযথভাবে সংরক্ষণ করতে হবে।
এছাড়া, অফডকে স্থানান্তরিত সকল কমার্শিয়াল পণ্যচালান আবশ্যিকভাবে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস এবং শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের প্রতিনিধির সমন্বয়ে যৌথভাবে শতভাগ কায়িক পরীক্ষা করে প্রাপ্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং ৩১ আগষ্টের পর এ আদেশ স্বয়ংক্রিয় ভাবে বাতিল বলে গণ্য হবে।
এর আগে গত বছর বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণের শুরুতে চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার জট দেখা দেয়। ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত কনটেইনার জমে যাওয়ায় আমদানি পণ্য অফডকে স্থানান্তরের সিন্ধান্ত দিয়েছিলো এনবিআর।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম শাহজাহান বলেন, এটি এনবিআরের একটি সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত। বন্দরের ইয়ার্ডে ৪০ হাজার টিইইউ কন্টেইনার রেখে এর অতিরিক্ত কনটেইনার আইসিডিগুলোতে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।
তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন অফডক থেকে কনটেইনার ডেলিভারি নিতে গেলে বন্দরের চেয়ে তুলনামুলক খরচ বেশি হয়। লকডাউনের সময়ে ব্যবসায়ীদের যাতে অতিরিক্ত খরচ বহন করতে না হয় সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি দাবি জানিয়েছেন তারা।
চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, "বন্দরের জট কমাতে অফডকে কনটেইনার সরানোর উদ্যোগ প্রসংশনীয়। তবে অফডক থেকে কনটেইনার ডেলিভারি নিতে গিয়ে যাতে ব্যবসায়ীরা অনৈতিক খরচের মুখোমুখি না হতে হয় সেটি নিশ্চিত করতে হবে।"
চট্টগ্রাম বন্দরের তথ্য অনুযায়ী, ২৪ জুলাই সকাল ৮টা পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দরের ইয়ার্ডে কনটেইনার সংখ্যা ছিলো ৪২ হাজার ১৭৩টি। গত ১৭ জুলাই বন্দরের ইয়ার্ডে কনটেইনার ছিলো ৩৬ হাজার ৪৪১টি। ঈদের ছুটির সময়ে আমদানিকারকরা কনটেইনার ডেলিভারি না নেওয়ায় এক সপ্তাহের ব্যবধানে কনটেইনার বেড়েছে ৫ হাজার ৭৩২ টিইইউ।
চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার রাখার সক্ষমতা ৪৯ হাজার ১৮ টিইইউ। কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে ধারণ ক্ষমতার ১৫ ভাগ স্থান খালি রাখতে হয়।
অফডক মালিকদের সংগঠন বিকডার সেক্রেটারি জেনারেল রুহুল আমিন শিকদার বলেন, "বর্তমানে ১৯টি অফডকে প্রায় ২৫ হাজার কনটেইনার রাখার স্থান খালি আছে। কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে আমরা ১৫ হাজার আমদানি কনটেইনার বন্দরের ইয়ার্ড থেকে আনতে পারবো। এই মুহূর্তে অফডকগুলোতে রপ্তানি পণ্যবাহী কনটেইনার জট রয়েছে। তারপরও সরকারি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য আমরা গত বছরের ন্যায় এবারও সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবো।"
বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক খায়রুল আলম সুজন বলেন, "আমদানি পণ্য স্থানান্তর করতে গিয়ে যাতে রপ্তানি পণ্যের সরবরাহে ব্যাঘাত না ঘটে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। এর পাশাপাশি পণ্য খালাস প্রক্রিয়ায় আমদানিকারকদের আর্থিক ক্ষতির মুখোমুখি না হতে হয় সেটিও নিশ্চিত করতে হবে।"
গত ১২ জুলাই চট্টগ্রাম বন্দর ভবনের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত আমদানি রপ্তানি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় কর্মপরিকল্পনা বিষয়ক সভায় ঈদের ছুটিকালীন বন্দর থেকে কনটেইনার ডেলিভারি নেওয়ার আহ্বান জানায় বন্দর কর্তৃপক্ষ। ঈদের ছুটিতে চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রম শতভাগ চালু থাকলেও এই সময়ে ডেলিভারির পরিমাণ কমে যায়। বন্দরে বাড়তে থাকে কনটেইনার সংখ্যা।
এমন পরিস্থিতিতে ২৪ জুলাই চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশন, বিকেএমইএ এবং বিজিএমইএকে চিঠি দেয়। চিঠিতে জরুরি ভিত্তিতে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে কনটেইনার খালাস নিতে বিশেষভাবে অনুরোধ করা হয়।