জুলাইয়ে ১৬ শতাংশ রপ্তানি প্রবৃদ্ধি কমেছে আরএমজি খাতে
টানা তিন সপ্তাহ ঠিকঠাক ভাবে চলার পর জুলাইয়ে লকডাউন, ঈদের ছুটি ও চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ জটের মিলিত প্রভাবে নির্ধারিতে সময়ের চাইতে পিছিয়ে পড়েছে পোশাক পণ্যের শিপমেন্ট। যেকারণে এ মাসে পোশাক খাতের রপ্তানি আয় আগের বছরের জুলাইয়ের তুলনায় ১৬ শতাংশ কমেছে।
তবে গত জুলাইয়ের প্রথম তিন সপ্তাহে পোশাক রপ্তানিতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বা ৩৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়, যার ফলে ১৯ তারিখ নাগাদ রপ্তানি আয় বেড়ে দাঁড়ায় ২২২ কোটি ডলারে। গেল বছরে একই মেয়াদে আয় হয়েছিল ১৬৬ কোটি ডলার। সংগৃহীত ডেটার ভিত্তিতে এসব তথ্য জানিয়েছে পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারকদের শীর্ষ সংগঠন- বিজিএমইএ।
মাসের শেষ দিকে কমার প্রভাবসহ গত ১-৩০ জুলাই পর্যন্ত বাংলাদেশ মোট ২৬০ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে, যা গত বছর ছিল ৩.০৮ বিলিয়ন ডলার।
শিল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, টিকাকরণ বাড়ায় ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে কোভিড পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় পোশাক পণ্যের চাহিদা বাড়ছে। পাশাপাশি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম মাস হওয়ায় তারা জুলাইয়ে ভালো রপ্তানি পারফরম্যান্সের আশা করেছিলেন।
বিজিএমইএ পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল জানান, চলতি বছরের ১-৩০ জুলাই পর্যন্ত বাংলাদেশ মোট ২৬০ কোটি ডলারের অ্যাপারেল পণ্য রপ্তানি করেছে, যা গত বছরের ৩.০৮ বিলিয়ন ডলারের থেকেও কম।
গত তিন দশক ধরে দেশের মোট রপ্তানিতে ৮০ শতাংশের এর বেশি অবদান রাখছে পোশাক খাত। সদ্য বিদায় নেওয়া ২০২০-২১ অর্থবছরে এ খাত ৩১.৪৫ বিলিয়ন ডলার আয় করে।
তবে মহামারির কারণে ২০২০ সালের এপ্রিল ও মে'তে রপ্তানি আয় ব্যাপকভাবে হ্রাস পায়, যেকারণে ২০১৯-২০ অর্থবছরে শেষে রপ্তানি আয় কমে ২৭.৯৪ বিলিয়ন ডলার হয়।
শিল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শীতকাল ও বড়দিনের উৎসবকে কেন্দ্র করে বিদেশি ক্রেতাদের কার্যাদেশের পরিমাণ বাড়ায় জুন, জুলাই ও আগস্টে পোশাক খাতে চাঙ্গাভাব বিরাজ করে। তবে এবছর ঈদের ছুটি ও চলমান লকডাউনের আওতায় কারখানা বন্ধ থাকার কারণে রপ্তানি কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে।
এছাড়া, আমদানি কার্যক্রম নির্ধারিত সময়ে সম্পন্ন না হওয়ায় কন্টেইনার জটের কবলে পড়েছে চট্টগ্রাম বন্দর।
বিজিএমইএ প্রেসিডেন্ট ফারুক হাসান বলেন, "সরকার পুনরায় উৎপাদন শুরুর অনুমতি দেওয়ায় আগামী তিন-চার দিনের মধ্যে রপ্তানি গতি ফিরে পাবে বলে আশা করছি।"
তিনি জানান, যেকোনো ছুটির পর কারখানায় স্বাভাবিক কার্যক্রম ফিরে আসতে ৩-৫ পাঁচদিন সময় লাগে, তাছাড়া পোশাক প্রস্তুতকারকদের হাতে এখন বিপুল পরিমাণ কার্যাদেশ আছে।
আরও ভালো দাম পাওয়া আশা:
এদিকে আগামী মৌসুমগুলোতেও রপ্তানি বাজারে চাহিদা থাকায় দেশের পোশাক প্রস্তুতকারকরা ক্রেতাদের থেকে ভালো দাম পাওয়ার আশা করছেন। বায়ারদের গুদাম প্রায় শূন্য হয়ে পড়ায় আরও অর্ডার আসার সম্ভবনা দেখা দিচ্ছে, এতে দাম বেশি পাওয়া যাবে বলেও জানান ফারুক হাসান।
শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে আমদানি করা পণ্য বন্দর থেকে দ্রুত ছাড় করতে পোশাক প্রস্তুতকারকেদের নির্দেশ দেওয়ার কথাও জানান বিজিএমইএ সভাপতি। এতে করে কন্টেইনার জট কমবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।
বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স এন্ড এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশন (বিকেএমইএ) এর ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ হাতেম বলেন, "উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অর্ডার হাতে থাকায় আমরা জুলাইয়ে রপ্তানি পারফরম্যান্স খুব ভালো হবে ধারণা করেছিলাম, কিন্তু কারখানা বন্ধের কারণে সে আশা পূরণ হয়নি।"
তিনি জানান, লকডাউনের আগে পোশাক প্রস্তুতকারকরা দ্রুত পণ্যের চালান পাঠানো শুরু করেন ঈদের আগের রপ্তানি আয় বৃদ্ধিতে যার প্রতিফলন দেখা গেছে।
ফতুল্লা অ্যাপারেলস- এর মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা ফজলে শামিম এহসান বলেন, কলম্বোগামী তিনটি নতুন জাহাজকে বন্দর কর্তৃপক্ষ পণ্য বহনের অনুমতি দেওয়ায় ঈদের আগে বেশি পরিমাণে চালান পাঠানো সম্ভব হয়েছে।
বিকেএমইএ ভাইস প্রেসিডেন্ট এহসান আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, বিশ্ববাজারে পোশাকের চাহিদা বৃদ্ধির সময়ে কাঁচামালের যে দর বেড়েছে সেটা বেশি দাম দিয়ে বায়াররা পুষিয়ে দেবে।
"কয়েক মাস আগের তুলনায় এরমধ্যেই আমরা আরও ভালো দাম পেতে শুরু করেছি," যোগ করেন তিনি।
দাম নিয়ে আশাবাদের আরেক কারণ, আরএমজি রপ্তানি বাজারে বাংলাদেশের বড় দুই প্রতিদ্বন্দ্বী- ভারত ও ভিয়েতনাম এখন কারখানা বন্ধের ঝুঁকির সম্মুখীন। এতে অন্যতম উৎস হিসেবে বাংলাদেশের সামনে ভালো সুযোগ তৈরি হবে।
এহসানের সঙ্গে একমত পোষণ করে মিতালি ফ্যাশন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তুহিন আবদুল্লা জানান, বিশ্ববাজার পরিস্থিতির কারণে বাংলাদেশের সামনে পোশাকের মূল্য ৩০-৪০ শতাংশ বাড়ানোর সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
"বায়ারদের সাথে আলোচনা করে আমরা এখন দাম বাড়ানোর বিষয়টি তুলতে পারি। ভিয়েতনামে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় কারখানা বন্ধ হতে পারে, পাকিস্তান ইউরোপিয় ইউনিয়নে জিএসপি সুবিধা হারাতে পারে- এ অবস্থায় বায়াররা অবশ্যই আমাদের ভালো দাম দিতে রাজি হবে। তাছাড়া, কোভিড ব্যবস্থাপনা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ থাকায় অনেক বায়ারই ভারতে যেতে চাইছে না," তিনি বলছিলেন।