টিকার বুস্টার ডোজ দেওয়ার সিদ্ধান্তে মতপার্থক্য বাড়ছে ধনী দেশগুলোতে
সদ্যই বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তিদের ফাইজারের তৃতীয় ডোজ কোভিড টিকা দিয়েছে ইসরায়েল। পাঁচ মাস আগে যারা দ্বিতীয় ডোজ টিকা নিয়েছিলেন, কেবলমাত্র তাদেরকেই টিকার তৃতীয় ডোজ দেওয়া হচ্ছে সেখানে।
বুস্টার ডোজ দেওয়ার কথা ভাবছে আরও কয়েকটি দেশ।
কিন্তু স্বাস্থ্য গবেষকরা সতর্ক করে দিয়েছেন, ধনী দেশগুলোর এ সিদ্ধান্ত মহামারিকে কেবল দীর্ঘায়িতই করবে। তারা বলেছেন, বাড়তি এই টিকাগুলো নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশগুলোতে দেওয়া যেতে পারত। এই দেশগুলোর বেশিরভাগ মানুষই এখনও টিকাবঞ্চিত। ফলে দেখা দিতে পারে করোনার নতুন নতুন ধরন, বাড়তে পারে বিপদ।
গবেষকরা বলছেন, টিকার বাড়তি ডোজ জীবন বাঁচায়- এমন কোনো প্রমাণ এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। কেবল কিছু মানুষের দুর্বল রোগ প্রতিরোধক্ষমতাকে একটু শক্তিশালী করে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) একটি বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ১১টি ধনী দেশ যদি পঞ্চাশোর্ধ্ব নাগরিকদের বুস্টার ডোজ দেয়, তাহলে বাড়তি ৪৪ কোটি ডোজ টিকার প্রয়োজন পড়বে। উচ্চ ও উচ্চ-মধ্য আয়ের সব দেশও যদি এই পথে হাঁটে, তবে সব মিলিয়ে বাড়তি টিকা লাগবে ৮৮ কোটি ডোজ।
ডব্লিউএইচও জানিয়েছে এসব বাড়তি টিকা যদি নিম্ন ও নিম্ন-মধ্য আয়ের দেশগুলোতে সরবরাহ করা যায়, তবে বেশি উপকারে আসবে। এই দেশগুলোর ৮৫ শতাংশের বেশি মানুষ—প্রায় ৩৫০ কোটি—এখনও এক ডোজ টিকাও পায়নি।
আফ্রিকার মাত্র ২ শতাংশ মানুষ টিকা পেয়েছে। মহাদেশটিতে দ্রুত বাড়ছে সংক্রমণের হার।
টিকা ছাড়া সংক্রমণের গতি কমানোর একমাত্র উপায় হলো ব্যবসা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা। কিন্তু তাতে অর্থনীতির ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বে। আইএমএফ-এর পরিসংখ্যান অনুসারে, গত বছর মহামারির কারণে প্রায় ১০ কোটি মানুষ অতি দরিদ্র হয়ে গেছে। এ সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। সেইসঙ্গে বাড়ছে ধনী দেশগুলোর সঙ্গে বাকি বিশ্বের সম্পদের বৈষম্য।
তবে সবচেয়ে ভীতিকর তথ্য হচ্ছে, কম টিকা পাওয়া দেশগুলোতে সার্স-কোভ-২ ভাইরাসের আরও বিপজ্জনক ধরনের আবির্ভাবের সম্ভাবনা বেড়ে গেছে কয়েকগুণ।
শুধু ইসরায়েলই নয়, যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্রও বয়স্ক নাগরিকদের বুস্টার ডোজ টিকা দেওয়ার কথা ভাবছে।
গত সপ্তাহে ফাইজারের কাছ থেকে আরও ২০০ মিলিয়ন ডোজ এমআরএনএ টিকা কিনেছে আমেরিকা।
বিশ্বের সব প্রাপ্তবয়স্কের জন্য যদি পর্যাপ্ত টিকা থাকত, তাহলে ধনী দেশগুলোতে তৃতীয় ডোজ দেওয়ার খবরে বিশেষজ্ঞরা এত আতঙ্কিত হতেন না। কিন্তু বৈষম্য ক্রমাগত বাড়ছেই। একটি স্বাস্থ্য সংগঠনের গত জুলাইয়ের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, নিম্ন আয়ের দেশগুলো ২০২৩ সালের আগে পর্যাপ্ত টিকা পাবে না।
এ বছর মডার্না ও ফাইজার-বায়োএনটেকের উৎপাদিত সমস্ত টিকাই—৩২০ কোটি ডোজ—ইতিমধ্যে কিনে নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ। যদিও এখান থেকে অল্প কিছু টিকা দরিদ্র দেশে দান করা হবে।
টিকার বুস্টার ডোজ দেওয়ার অজুহাত হিসেবে ধনীগুলো বলছে, সবার আগে নিজের নাগরিকদের রক্ষা করতে তারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কিন্তু অনেক বিশেষজ্ঞের কাছেই এই অজুহাত গ্রহণযোগ্য নয়। তাদের মতে, নিজেদের সুরক্ষিত রাখতে নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশগুলোকে চরম ঝুঁকির মধ্যে ঠেলে দিতে দ্বিধা করছে না উন্নত বিশ্ব। ধনী দেশগুলোর এই স্বার্থপরতা ক্রমেই ক্ষোভ বাড়াচ্ছে বিশেষজ্ঞ ও দরিদ্র দেশগুলোর।
- সূত্র: নেচার.কম