মহামারির সময় জন্ম নেওয়া শিশুদের আইকিউ তুলনামূলক কম: গবেষণা
লকডাউনের সময় সামাজিক মিথস্ক্রিয়া কমে আসায় কোভিড-১৯ মহামারি চলাকালীন জন্ম নেওয়া শিশুদের আইকিউ তুলনামূলক কম হতে পারে। সম্প্রতি এক মার্কিন গবেষণায় এমন তথ্য উঠে এসেছে।
রোড আইল্যান্ডের ব্রাউন ইউনিভার্সিটির গবেষণাটিতে গবেষকরা ২০২০ সালের মার্চ থেকে জন্ম নেওয়া শিশুদের কগনিটিভ বিকাশ, বাচনিক দক্ষতা ও মোটর ডেভেলপমেন্ট জনিত দক্ষতার সঙ্গে মহামারির আগে জন্ম নেওয়া শিশুদের এসব দক্ষতার তুলনামূলক বিশ্লেষণ করেছেন। বিশ্লেষণে উঠে এসেছে, ২০২০ সালের মার্চ থেকে জন্ম নেওয়া শিশুদের এসব দক্ষতা মহামারির আগে জন্ম নেওয়া শিশুদের চেয়ে তুলনামূলক কম।
দরিদ্র পরিবারের শিশু ও ছেলে শিশুদের মধ্যে আইকিউ কমে আসার হার বেশি বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
চলমান লকডাউনের কারণে শিশুদের বাইরের পরিবেশের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়া কমে আসায় তাদের কগনিটিভ বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এই সময়ে সাধারণ সময়ের তুলনায় এধরনের দক্ষতা বিকাশ বাধাগ্রস্ত হওয়া শিশুদের পরবর্তী জীবনে কতোটা প্রভাব রাখবে তা এখনো নিশ্চিতভাবে বলতে পারছেন না গবেষকরা। তবে শিশুদের মস্তিষ্ক প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় অনেক বেশি সক্রিয় এবং নমনীয় হওয়ায় তারা এ ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারবে এ সম্ভাবনাই বেশি।
গবেষণাটির প্রধান গবেষক শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. সিন ডিওনি জানান, তাৎপর্যপূর্ণ হারে আইকিউ স্কোর কমে আসার প্রবণতা লক্ষ্য করেছি আমরা।
দ্য গার্ডিয়ানকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, "এটি কোনোভাবেই এড়িয়ে যাওয়ার মতো না। গুরুতর কগনিটিভ ডিজঅর্ডার ছাড়া এমনটা দেখা যায় না,"
এই গবেষণার ফলাফল অন্য বিজ্ঞানীরা এখনো পরীক্ষা (পিয়ার রিভিউড) করে দেখেননি। তবে গবেষণাপত্রটি মেডআরএক্সিভ নামের স্বাস্থ্যবিষয়ক ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে।
রোড আইল্যান্ডের ৬৭২ জন শিশুকে নিয়ে এই গবেষণাটি করা হয়। এরমধ্যে ৩০৮ জন শিশুর জন্ম ২০১৯ সালের জানুয়ারির আগে, ১৭৬ জনের জন ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২০ সালের মার্চের মধ্যে এবং বাকি ১৮৮ জনের জন্ম ২০২০ সালের জুলাইয়ের পর।
শিশুদের বিকাশ মূল্যায়ন করতে বাচনিক, অবাচনিক এবং প্রারম্ভিক শিখন দক্ষতা পরীক্ষা করে দেখেন তারা। এসব পরীক্ষার ফলাফল সমন্বয় করেই গবেষণাটির ফলাফল প্রকাশ করেন তারা। এদের মধ্যে বেশিরভাগ শিশুই নির্ধারিত সময়ে জন্ম নিয়েছে, বেশিরভাগই শ্বেতাঙ্গ শিশু।
বিশেষজ্ঞদের অনুসন্ধানে আরও উঠে এসেছে, আর্থ-সামাজিক অবস্থানে নিচের দিকে থাকা পরিবারের শিশুদের পরীক্ষার ফলাফল তুলনামূলকভাবে আরও খারাপ ছিল।
ড. ডিওনি বলেন, "এসব পরিবারের বাবা-মা'রা মানসিকভাবে চাপে আছেন। স্বাভাবিক সময়ে শিশুদের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ ও মিথস্ক্রিয়া যেভাবে হতো, এখন তা হচ্ছে না,"
তিনি আরও জানান, প্রাথমিক বিকাশের সময়ে আইকিউ কম দেখা গেলেই যে শিশু কম বুদ্ধিমান হিসেবে বড় হয়ে উঠবে তা নয়, তবে শিশু বেড়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে এই ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার সময়ও কমতে থাকে।
এর পেছনে বাবা-মায়ের হোম অফিসের কারণে সৃষ্ট মানসিক চাপের প্রভাবই বেশি বলে জানান গবেষকরা। সেইসঙ্গে প্রাপ্তবয়স্কদের মাস্ক পরাও আরেকটি কারণ। কেননা এরফলে বিভিন্ন অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ সম্পর্কে শিশুদের শেখার সুযোগও কমে আসে।
"সংক্রমণের আশঙ্কা ও চাকরি হারানোর ভয়ের কারণে মা-বাবারা মানসিক চাপের মধ্যে আছেন। বাড়ি থেকে কাজ করার সময়ও তারা কর্মক্ষেত্র ও শিশুর যত্ন নেওয়া দু ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছেন। গর্ভবতী নারীদের ক্ষেত্রেও মাতৃত্বকালীন মানসিক চাপ, দুঃশ্চিন্তা, অবসাদ ও বিষণ্ণতা বেড়েছে," লিখেছেন গবেষকরা।
"মহামারির আগে জন্ম নেওয়া শিশুদের তুলনায় মহামারির সময় জন্ম নেওয়া শিশুদের বাচনিক, মোটর ডেভেলপমেন্ট জনিত দক্ষতা ও সামগ্রিক কগনিটিভ বিকাশ কমে এসেছে। আর্থ-সামাজিক অবস্থানে নিচের দিকে থাকা পরিবারের শিশুদের বেলায় এ প্রভাব আরও বেশি বলে উঠে এসেছে আমাদের অনুসন্ধানে,"
গবেষণাটিতে আরও উঠে এসেছে, পরিবারের কোভিড সংক্রমণের ইতিহাস না থাকলেও, মহামারির কারণে শিশুর পারিপার্শ্বিক পরিবেশ বদলে যাওয়ার কারণেও শিশুর বিকাশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
এর আগে, চলতি মাসে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা যায়, কোভিড থেকে সেরে ওঠা ব্যক্তিদের বুদ্ধিমত্তায় ভাইরাসের প্রভাব পড়তে পারে।
- সূত্র: ডেইলি মেইল, দ্য গার্ডিয়ান