বালিয়াড়িতে নামতে তর সইছে না পর্যটকদের!
দেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রাদুর্ভাব চলছে। এ সংক্রমণ থেকে দেশবাসীকে রক্ষায় সারাদেশে বিধিনিষেধ আরোপের পাশাপাশি গত এপ্রিল থেকে বন্ধ হয়ে যায় কক্সবাজারের হোটেল-মোটেল-রেস্তরাঁ ও পর্যটন স্পটগুলো। দীর্ঘ সাড়ে চারমাস পর বিধিনিষেধ ১১ আগস্ট হতে শিথিল করা হয়।
স্বাস্থ্য বিধি মেনে সবকিছু শুরুর নির্দেশ দেয়া হলেও কক্সবাজার সৈকত ও অন্যান্য পর্যটন স্পটে যেতে নিষেধাজ্ঞা অব্যাহত রেখেছিল প্রশাসন। কিন্তু ১২ আগস্ট প্রজ্ঞাপন জারি করে বলা হয়, ১৯ আগস্ট হতে সকল পর্যটন স্পট শর্তসাপেক্ষে খুলে দেয়া হচ্ছে। স্বাস্থ্য বিধি মেনে অর্ধেক কক্ষ ভাড়া দেয়ার প্রতিশ্রুতিতে হোটেল-মোটেল, রেস্তরাঁগুলো ব্যবসা করতে পারবে। পাশাপাশি পর্যটন স্পটগুলোতে লোকসমাগম নিয়ন্ত্রণ রাখতে এবং সৈকতের বালিয়াড়িতে কিটকট চেয়ারও সীমিত সংখ্যক বসানোর নির্দেশনা রয়েছে।
পর্যটন স্পটসমূহ ১৯ আগস্ট খোলার ঘোষণা হলেও শুক্রবার থেকেই ভ্রমণপ্রেমীরা সৈকত এলাকায় ভিড় জমাতে থাকেন। তবে প্রশাসনিক নির্দেশনা না থাকার কথা বলে, বীচকর্মী, টুরিস্ট পুলিশ ও লাইফগার্ড কর্মীরা সৈকত তীরে আসা এসব নানা বয়সী মানুষকে ফিরিয়ে দিয়েছেন। তবুও কিছু পয়েন্টে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে সৈকতে নেমে পড়েন তাদের কেউ কেউ।
সৈকতে হাঁটতে আসা চট্টগ্রামের লোহাগড়ার এক দম্পতি বলেন, "অনেকদিন ঘর থেকে বের হতে পারিনি। বাচ্চাদের পাশাপাশি আমরাও হাঁপিয়ে ওঠেছি। গতকাল টিভিতে শুনলাম পর্যটন কেন্দ্র খুলে দেয়া হচ্ছে। সেই খুশিতে আজ (শুক্রবার) কক্সবাজার সৈকতে এসেছিলাম। কিন্তু প্রশাসনের লোকজন আমাদের নামতে দেয়নি। এত কাছে এসেও সাগরের ঢেউটা ছুঁতে পারিনি এটা খুবই কষ্টের। তারা মাইকিং করে বলছে ১৯ আগস্টের পর আসতে। এতদিন তো আমাদের তর সইছে না"।
সৈকতে কাজ করা সী সেইফ লাইফগার্ডের সুপারভাইজার মোহাম্মদ ওসমান বলেন, 'আমরাও অকর্মণ্য বসে আছি। লকডাউনেও প্রতিদিন পালা করে আমরা সৈকতে এসেছি। বীচকর্মী, পুলিশের সাথে নিরবচ্ছিন্ন দায়িত্ব পালন করেছি। স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটককে ঢেউয়ে ভেসে যাওয়া থেকে রক্ষায় কাজ করেছি। কিন্তু কোভিড-১৯ এর চলমান পরিস্থিতিতে গত বছরের মতো এবারও প্রায় ৫ মাস জনশূন্য সৈকতে খাঁ খাঁ বালিয়াড়িতে বসে থাকতে আমাদেরও খারাপ লাগছে। অনেকে প্রতিদিন সৈকতে এসে বালিয়াড়িতে নামতে চান। কিন্তু সরকারি নির্দেশনার কারণে অনিচ্ছাসত্ত্বেও তাদের ফিরিয়ে দিতে হয়। আজও (শুক্রবার) কয়েকশ ভ্রমণ পিপাসুকে সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে তুলে দেয়া হয়েছে। আমরা বুঝতে পারছি মানুষের ধৈর্য্যে কুলোচ্ছেনা"।
ঢাকার মোহাম্মদপুর থেকে কক্সবাজার এসেছেন আমিনুল ইসলামসহ চার বন্ধু। তারা বলেন, "যান্ত্রিক জীবনে একঘেঁয়ে হয়ে উঠেছি। তাই বিধিনিষেধ শিথিল করেছে জেনেই কক্সবাজার চলে এসেছি। মনে করেছিলাম সৈকতে নামাও সম্ভব হবে। কিন্তু প্রশাসনের লোকজন কঠোরতায় তা ঠেকিয়ে দিয়েছে। শুধু আমরা নয়, আরো অগণিত নারী-পুরুষকেও একইভাবে ফিরিয়ে দিয়েছে। দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাতে আমরা গাড়ি নিয়ে মেরিন ড্রাইভে ঘুরে এসেছি। সেখানে রাস্তার কিছু কিছু অংশে দাঁড়ালে অন্তত সমুদ্রের তীরের স্বাদ পাওয়া যায়"।
কক্সবাজার হোটেল-মোটেল অফিসার্স এসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক ও হোয়াইট অর্কিড হোটেলের জিএম রিয়াদ ইফতেখার বলেন, "জেলা প্রশাসন বলে দিয়েছে শুধুমাত্র জীবন ও জীবিকার তাগিদে যারা কক্সবাজার আসবেন তাদেরকেই হোটেলে রাখা যাবে। স্থাপনা যখন করা আছে তাতো ফেলে চলে যেতে পারছে না কেউ। তাই পূর্বের মতো পর্যটন সেবা নিশ্চিত করতে হোটেল, রেস্তোরাঁ পরিস্কার- পরিচ্ছন্ন করা শুরু করেছেন সবাই"।
কক্সবাজার গেস্ট হাউজ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম সিকদার বলেন, "প্রশাসন থেকে জানানো হয়েছে স্বাস্থ্য বিধি মেনে হোটেলের অর্ধেক কক্ষ ভাড়া দিতে। আমাদের অর্থলগ্নি আছে সেহেতু ব্যবসা সচল রাখা জরুরি। তেমনি আগত এবং অবস্থানরত সবাইকে নিরাপদ রাখা আরো জরুরি। যারা হোটেল আসবেন তাদের সচেতনামূলক পরামর্শ দিতে হবে সবার"।
কক্সবাজার বীচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. মামুনুর রশীদ বলেন, "সম্ভাবনার পর্যটন শিল্প করোনার কারণে ধুঁকছে। গত বছরের মতো চলতি বছরেও বিপুল পরিমাণ লোকসান গুনছেন পর্যটন সংশ্লিষ্টরা। করোনা মোকাবিলার পাশাপাশি সব ধরনের ব্যবসা সচল করতে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সেভাবেই পর্যটনও সচল করা হচ্ছে। ব্যবসায়ী, পর্যটক ও সংশ্লিষ্ট সকলের মাঝে সচেতনতা থাকলে আমরা ব্যবসা সুচারু করার পাশাপাশি করোনার প্রাদুর্ভাবও নিয়ন্ত্রণ করতে পারবো বলে আশা রাখছি"। এ বিষয়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ নজরদারি থাকবে বলে উল্লেখ করেন ডিসি।