পোস্ট অফিস ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে বৃহত্তম ব্যাংকিং নেটওয়ার্ক গড়ছে ব্যাংক এশিয়া
দেশজুড়ে পোস্টাল আউটলেট ব্যবহার করে আর্থিক সেবা প্রদানের মাধ্যমে পোস্ট অফিস ব্যাংকিং চালু করতে যাচ্ছে ব্যাংক এশিয়া। এর মাধ্যমে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক—দুভাবেই সবচেয়ে বড় ব্যাংকিং নেটওয়ার্ক গড়তে চলেছে ব্যাংকটি।
নতুন এই ব্যবসায়িক ধারণার আওতায় বেসরকারি খাতের ব্যাংকটি বাংলাদেশের ডাক বিভাগের সঙ্গে মিলে পোস্টাল আউটলেটের মাধ্যমে আর্থিক সেবা প্রদান করবে।
স্থানীয় নেটওয়ার্কিং অংশে- বাংলাদেশ পোস্ট অফিসের সঙ্গে সম্পাদিত পোস্ট অফিস ব্যাংকিং চুক্তির আওতায় ব্যাংকটি সারা দেশে ডিজিটাল পোস্ট অফিস উদ্যোক্তা নিয়োগ করে ৮ হাজার ৫০০টি ডিজিটাল পোস্ট অফিসের মাধ্যমে আর্থিক সেবা প্রদান করবে।
বৈশ্বিক নেটওয়ার্কিং অংশে ব্যাংকটি ইউরোগিরোর সঙ্গে যুক্ত হবে। ইউরোগিরো একটি আন্তর্জাতিক পেমেন্ট কমিউনিটি। এটি বিশ্বব্যাপী পোস্ট ব্যাংক, ডাক সংস্থা এবং পেমেন্ট পরিষেবা প্রদানকারীদের সাথে ব্যাপকভাবে সংযুক্ত।
বাংলাদেশের প্রথম ব্যাংক হিসেবেও ইউরোগিরোর সঙ্গে যুক্ত হতে যাচ্ছে ব্যাংক এশিয়া। ইউরোগিরোর সঙ্গে চুক্তির আওতায় রেমিটেন্স পরিষেবা প্রদানের জন্য ব্যাংকটি সবগুলো পোস্টাল আউটলেটকে বৈশ্বিক পেমেন্ট প্ল্যাটফর্মটির সঙ্গে যুক্ত করবে।
সারা বিশ্বে ইউরোগিরোর পাঁচ লাখেরও বেশি শাখা রয়েছে। ব্যাংক এশিয়া পোস্ট অফিস ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে পোস্টাল আউটলেটগুলোকে এই বিশাল নেটওয়ার্কের সাথে সংযুক্ত করবে।
এর ফলে প্রবাসীরা দেশে টাকা পাঠানোর জন্য ব্যাংক এশিয়ার মাধ্যমে ইউরোগিরোর বিশাল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করতে পারবেন।
ব্যাংক এশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশ পোস্ট অফিস ও ইউরোগিরোর চুক্তি স্বাক্ষর এখন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ইতোমধ্যে ব্যাংকটিকে পোস্ট অফিস ব্যাংকিং সেবা চালু করার অনুমতি দিয়েছে।
ব্যাংক এশিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আরফান আলী জানিয়েছেন, এই বিশাল নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণের অংশ হিসেবে ব্যাংকটি জনবল নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। পোস্ট অফিস ব্যাংকিং চালু করার চিন্তাটি তার মাথা থেকেই এসেছে। তিনি আরও বলেন, নতুন এই ব্যাংকিং মডেলটি এজেন্ট ব্যাংকিংয়েরই সম্প্রসারিত রূপ।
দেশে এজেন্ট ব্যাংকিং চালু করার চিন্তাও প্রথম করেছিলেন আরফান আলী-ই। ব্যাংকিং খাতে ইতিমধ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এজেন্ট ব্যাংকিং।
ব্যাংক এশিয়া দেশে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের অগ্রদূত। সারা দেশে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংখ্যক এজেন্ট রয়েছে ব্যাংকটির।
আরফান আলী বলেন, পোস্টাল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে ব্যাংক এশিয়া দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসবাসকারী মানুষের দোরগোড়ায় আর্থিক সেবা পৌঁছে দেবে।
তিনি আরও বলেন, গ্রামাঞ্চলের মানুষকে ডিজিটাল সেবা প্রদানের জন্য স্থাপিত ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার পরিচালনার জন্য ডাক বিভাগ ৮ হাজার ৫০০ জন উদ্যোক্তাকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে।
আরফান আলী জানান, ডাক বিভাগের ডিজিটাল সার্ভিস পয়েন্ট ব্যবহার করার জন্য ডাক বিভাগের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর করতে যাচ্ছে ব্যাংক এশিয়া। ব্যাংক এশিয়ার পক্ষে যেসব উদ্যোক্তা আর্থিক সেবা প্রদান করবেন, তাদের প্রত্যেকের সঙ্গে ব্যাংকটি আলাদাভাবে ব্যবসায়িক চুক্তি করবে।
এরপর ব্যাংকটি ইউরোগিরোর মাধ্যমে পোস্ট অফিস পয়েন্টগুলোকে গ্লোবাল পোস্ট অফিস নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত করবে। এর ফলে প্রবাসী বাংলাদেশিরা সারা বিশ্ব থেকে পোস্ট অফিস নেটওয়ার্কের মাধ্যমে সহজেই দেশে টাকা পাঠাতে পারবেন, বলেছেন তিনি।
ইউরোগিরোর এই অনন্য পরিষেবায় গ্রাহকরা একটি মোবাইল অ্যাপ পাবেন। অ্যাপটির মাধ্যমে রেমিট্যান্স প্রেরক এবং প্রাপক উভয়পক্ষই সরাসরি পোস্ট অফিস নেটওয়ার্কের সাথে সংযুক্ত হতে পারবেন। ফলে তাদেরকে আর তৃতীয় কোনো পক্ষের মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠানো বা গ্রহণের বিষয়টি নিশ্চিত করার প্রয়োজন পড়বে না।
এছাড়া, মোবাইল অ্যাপটি ব্যবহার করে প্রেরক ও প্রাপকরা অর্থ লেনদেনের পাশাপাশি তথ্যও আদানপ্রদান করতে পারবেন।
ব্যাংক এশিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, অ্যাপটি প্রবাসীদের জন্য টাকা পাঠানো সহজ ও সাশ্রয়ী করে তুলবে।
ডাক বিভাগের বিশাল নেটওয়ার্কের কথা উল্লেখ করে বাংলাদেশ পোস্ট অফিসের মহাপরিচালক মো. সিরাজ উদ্দিন বলেন, ব্যাংক এশিয়ার সঙ্গে সম্পাদিত এই পোস্ট অফিস ব্যাংকিং চুক্তি থেকে উদ্যোক্তা ও ব্যাংক উভয়পক্ষই লাভবান হবে।
পোস্ট অফিস ব্যাংকিংয়ের কল্যাণে উদ্যোক্তাদের উপার্জন বাড়বে এবং ডিজিটাল পোস্টাল সেন্টার ব্যবহার করে ব্যাংকটি নিজের এজেন্ট ব্যাংকিং নেটওয়ার্ক সম্প্রসারিত করতে পারবে বলে উভয়পক্ষই লাভবান হবে বলে ব্যাখ্যা করেন তিনি।
ব্যাংক এশিয়ার এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের বর্তমান অবস্থা:
২০১৪ সালে এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা চালু করে ব্যাংক এশিয়া। তারপর থেকে এ বছরের মার্চ পর্যন্ত ব্যাংকটি সারা দেশে ৪,৪০০'র বেশি শাখা খুলেছে। এর মাধ্যমে দেশের সবচেয়ে বড় এজেন্ট ব্যাংকিং নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠা করেছে ব্যাংকটি।
দেশে সবচেয়ে বেশি এজেন্ট ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট রয়েছে ব্যাংক এশিয়ার। চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত ব্যাংকটির এজেন্ট ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টের সংখ্যা প্রায় ৪০ লাখ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যানুসারে, দেশের ব্যাংকিং খাতে মোট নারী এজেন্ট ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টধারীর সংখ্যা ৫১ লাখ। তাদের মধ্যে ৫০ শতাংশই ব্যাংক এশিয়ার এজেন্ট অ্যাকাউন্টধারী।
এছাড়া, চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ব্যাংকটি দুই হাজার ৬০০ কোটি টাকা আমানত সংগ্রহ করেছে। ঋণ বিতরণ করেছে প্রায় ৬০০ কোটি টাকার।
ব্যাংক এশিয়ার এই আর্থিক অন্তর্ভুক্তির ফলে ডিজিটাল পোস্ট ই-সেন্টারের সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক গড়ে তোলার এবং মাইক্রো মার্চেন্ট মডেল গ্রহণের কাজটি আরও গতি পাবে।