শিশুর খেলাধুলা নিয়ে যে ভুলগুলো করবেন না
খেলা শিশুর একটি মৌলিক কর্মকাণ্ড যা সে স্বতঃস্ফূর্তভাবে করে। স্বাভাবিক বিকাশের জন্য প্রকৃতিই শিশুর মধ্যে খেলার প্রতি অনুরাগ সঞ্চার করেছে। কিন্তু আমরা মাঝে মাঝে এমন কিছু কাজ করি, যা শিশুর বিকাশকে উল্টো বাধাগ্রস্ত করে। কয়েকটি উদাহরণ দিলে বিষয়টি পরিস্কার হয়ে যাবে।
এক. শিশুকে তাই খেলতে দিন, যাতে সে আনন্দ পায়। খেলার সময় শিশুকে পর্যাপ্ত স্বাধীনতা দেয়া উচিত। আপনি হয়ত দামি খেলনা দিয়ে ভাবতে পারেন শিশু তাতে আনন্দ পাবে, কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল শিশু আগ্রহ দেখাচ্ছে না, বরং রান্নাঘরের আলু পটল নিয়ে খেলতেই সে বেশি উৎসাহী। এক্ষেত্রে তাকে বাধা দিবেন না। আলু পটল নিয়েই খেলতে দিন। প্রকৃত সত্য হচ্ছে, প্রাকৃতিক উপাদান নিয়ে খেলাধুলা শিশুর স্বাভাবিক বিকাশের জন্য বেশি জরুরি।
দুই. শিশু যখন একা একা মনোযোগ দিয়ে খেলে, তখন তার মনযোগকে নষ্ট করতে যাবেন না। এ সময়ে তাকে আদর করতে যাওয়া, তার সাথে কথা বলা, এমনকি তার দিকে তাকানোরও দরকার নেই। অর্থাৎ শিশুর মনোযোগকে কোনোভাবেই বিঘ্নিত করবেন না।
তিন. শিশুদের খেলাধুলায় নিজেরা নাক গলাতে যাবেন না। একসাথে খেলাধুলা করার সময় শিশুদের মধ্যে একটু ঠুকাঠুকি হতে পারে অথবা একই খেলনা নিয়ে একাধিক শিশু টানাটানি করতে পারে। এসব ক্ষেত্রে আমরা বড়রা অতি উৎসাহী হয়ে হস্তক্ষেপ করি অথবা সমাধান করার চেষ্টা করি। এটা ঠিক নয়। খেলনা নিয়ে কাড়াকাড়ি বা টানাটানি বা কান্নাকাটি ইত্যাদি হতেই পারে, এটা শিশুদের সমস্যা। সমাধান শিশুদেরকেই করতে দিন। যদি ছেড়ে দিতে পারেন, তাহলে শিশু শিখবে কীভাবে অন্যদের সাথে শেয়ার করতে হয় এবং কীভাবে মানিয়ে চলতে হয়।
চার. মাঝে মধ্যে শিশু আপনার সাথে খেলাধুলা করবে। তখন অবশ্যই শিশুর বুদ্ধির স্তরে নেমে খেলতে হবে। এমনভাবে খেলতে হবে যেন শিশু বেশিরভাগ সময় জিততে পারে। এবং মাঝে মাঝে শিশুকে হারতে দিতে হবে। অনেক অভিভাবক শিশুকে খুশি করার জন্য, প্রতিবারই তাকে জিতিয়ে দেন অর্থাৎ ইচ্ছকৃত ভাবে শিশুর কাছে হার স্বীকার করে নেয়। এটা ঠিক নয়। মাঝে মাঝে পরাজয়ের অভিজ্ঞতাও দিতে হবে। হার জিতের মধ্য দিয়েই তাকে বাস্তবতার মুখোমুখি করতে হবে। তা না হলে ভবিষ্যতে পরাজয়কে সে সহজভাবে মেনে নিতে পারবে না, অপমানজনক মনে করবে। তার মধ্যে অসম্মানবোধ এত তীব্র হবে যে, সামান্য ব্যর্থতায় সে ভেঙ্গে পড়বে।
পাঁচ. খেলাধুলা নিয়ে খুব বেশি সিরিয়াস হবেন না। অনেক অভিকভাবক আছেন, যারা শিশুদের খেলাধুলা বা প্রতিযোগিতাকে খুব সিরিয়াসলি নেন। এতে শিশুরা মানসিক চাপের মধ্যে পড়ে যান, তখন নির্মল আনন্দটুকু সে আর উপভোগ করতে পারেন না। তাই শিশুকে প্রতিযোগিতার জন্য নয় বরং আনন্দের জন্য খেলতে দিন।
উপরের এই ভুলগুলো আমরা সচরাচর করি। এই বিষয়ে আমাদের সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। আমাদের মনে রাখতে হবে, শিশুর সুন্দর বিকাশের স্বার্থে আমাদেরকে একটি সুস্থ পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। খোলামেলা প্রাকৃতিক পরিবেশে খেলাধুলা শিশুর মনোদৈহিক বিকাশের জন্য সবচেয়ে বেশি উপযোগী। যেখানে অনেক শিশু একসাথে বাধাহীন খেলার সুযোগ পায়। সম্ভব হলে শিশুকে খোলা মাঠে সবুজ ঘাসের উপর দৌড়াদৌড়ি করতে দিন। মাঝে মধ্যে কাদা ও বালিতে খেলার সুযোগ দিন। প্রকৃতির সাথে মিশে যাওয়া এবং চারপাশে যে কর্মযজ্ঞ চলছে তাতে অংশগ্রহণের মধ্য দিয়েই শিশুর মেধার বিকাশ হবে।
লেখক: প্যারেন্টিং বিষয়ক গবেষক
ইমেইল: [email protected]