বিশ্বমঞ্চে চিহ্ন রেখে যেতে চাই: ভিকি জাহেদ
গত ঈদুল আজহায় তরুণ নির্মাতা ভিকি জাহেদের পাঁচটি কনটেন্ট রিলিজ হয়েছে। 'চিরকাল আজ', 'দ্বিতীয় সূচনা', 'কায়কোবাদ', 'পুনর্জন্ম' ও 'প্রিয় আদনান' শিরোনামের নাটকগুলো দিয়ে তিনি নতুন করে আলোচনায় এসেছেন।
সেসব নিয়ে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ন্ডের (টিবিএস) সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে কথা বলেছেন এই নির্মাতা।
টিবিএস: আপনি এবার বেশ কিছু নতুন কনটেন্ট নির্মাণ করেছেন। সবগুলোই আলোচনায় আছে। কেমন লাগছে?
ভিকি জাহেদ: নির্মাতা হিসেবে এটা আমার জন্য সত্যিই আনন্দের। তবে আমি এবারের ঈদের জন্য পাঁচটি নির্মাণ করিনি। এবার ছিল তিনটা প্রজেক্ট। আর রোজার ঈদে প্রচার না হওয়া দুটি প্রজেক্ট। সব মিলিয়ে পাঁচটা। এ কারণে মনে হচ্ছে অনেকগুলো কাজ রিলিজ হলো একসঙ্গে।
টিবিএস: কনটেন্টগুলো শুটিংয়ের আগে বা শুটিংয়ের সময় কি ভেবেছিলেন এমন সাড়া পাবেন?
ভিকি জাহেদ: সে রকম কিছু না। তবে আমাদের প্রতিটি শুটিংয়ের সময় বারবার মনে হয়েছে, এমন কিছু করতে চাই যেটা সবাই দেখবে, আলোচনা করবে, মজা পাবে। এই টার্গেট নিয়েই টিমের সবাই কাজ করেছে। আমরা মনে হয় সফলও হয়েছি।
টিবিএস: পরিচালনার পাশাপাশি সবই আপনার লেখা। এই ধরনের কনটেন্ট লেখার অনুপ্রেরণা কীভাবে পান?
ভিকি জাহেদ: আমি যে ধরনের কনটেন্ট নির্মাণ করি বা লিখি, সেগুলো কিন্তু সব ধরনের দর্শকেরা সাধারণত দেখেন না। লেখার সময়ও এই চিন্তা ছিল। আমি এ কথা বলে দর্শকদের ছোট করছি না। শুধু বোঝাতে চেয়েছি, একেক ধরনের দর্শক একেক রকম কনটেন্ট দেখতে পছন্দ করেন। তাই আমার কনটেন্টগুলো সবাই দেখবেন না, এটাই চিন্তা ছিল। তবে সত্যি কথা হলো, আমার ধারণাটা অনেকটাই এবার ভুল। কারণ, দর্শক পরিবর্তন হচ্ছেন। তাদের রুচি পরিবর্তন হচ্ছে। যেটা দুই বছর আগেও হয়তো ছিল না। তারা এখন অন্য রকম কনটেন্ট দেখতে চান। এই ধরনের নির্মাণ আমাদের আরও করতে হবে। তাহলে দর্শক পুরোপুরি পরিবর্তন হয়ে ভালো কনটেন্টেনের দিকে ঝুঁকবেন। যেমন, 'চিরকাল আজ' নাটকের যখন শুটিং করছিলাম, তখন এক রকম তৃপ্তি অনুভব হচ্ছিল। নিজের একটা তৃপ্তি ছিল। নিজের কাছেই একটা ভালো লাগা ছিল। এটার সফলতাও পেয়েছি।
টিবিএস: 'চিরকাল আজ' নাটকের গল্পটা নাকি এক মাস ধরে লিখেছেন?
ভিকি জাহেদ: হ্যাঁ। এটা অনেক সময় লেগেছে লিখতে। ঈদের আগে লকডাউনের সময়টাতে লেখা। আমার যখন খুব মন খারাপ হয় বা প্রেসারে থাকি, তখন লিখি। ওই সময় মন খারাপ ছিল। লেখার পর মনটা হালকা হয়ে গিয়েছিল। আর নাটকটা লেখার পেছনের গল্প যদি বলি, সেটা হলো, আমার একটা ভাবনা ছিল, এমনেশিয়া রোগটা নিয়ে একটা কাজ করব এবার। কিন্তু বাংলা নাটকে বা সিনেমায় অনেক এমনেশিয়া বা স্মৃতি লোপের নাটক হয়েছে। নতুন আর কী করব? এই ভাবনা থেকেই পড়াশোনা শুরু করি। খুঁজতে খুঁজতে পেয়ে যাই, পৃথিবীতে একজন মানুষ আছেন, যিনি ৭ সেকেন্ড পর পর তার স্মৃতি ভুলে যান। তাকে বলা হয় 'সেভেন সেকেন্ড ম্যান'। তাকে অনুপ্রেরণায় রেখে একটা গল্প সাজাই। সত্যিকার অর্থে তাকে দেখে খুব মন খারাপ হয়ে যায়। সেই মন খারাপ থেকেই লেখা শুরু করি 'চিরকাল আজ'।
টিবিএস: আপনার বেশিরভাগ কনটেন্টে একই অভিনয়শিল্পী, যারা টেলিভিশন নাটকে জনপ্রিয়। তাদের নিয়েই কাজ করার কারণ কী?
ভিকি জাহেদ: আমার পাঁচটা কনটেন্টের মধ্যে চারটাতে আফরান নিশো ও একটাতে তাহসান অভিনয় করেছেন। তবে নায়িকা পরিবর্তন হয়েছে। সত্যি কথা বলতে, আমি তাদের সঙ্গে কমফোর্টেবল এবং তারাও খুবই কো-অপারেটিভ। তারা স্ক্রিপ্টে অনেক সময় দেন। শুটিংয়ে অনেক পরিশ্রম করেন। তাদের সঙ্গে আমার জার্নিটা ভালো। এই কারণে তাদের সঙ্গে নিয়মিত কাজ করি। তবে সামনে সবার সঙ্গে কাজ হবে। আমি অন্য আর্টিস্টদের সঙ্গে কাজ করতে চাই না বা পছন্দ করি না, তা কিন্তু নয়। নিশো-মেহজাবিনকে নিয়ে কাজ হওয়ার পেছনে দুটি কারণ আছে বলে আমার মনে হয়। একটা হলো, তারা আমার কাজে সর্বোচ্চটা ঢেলে দেন; আরেকটা হলো, আমাদের দেশে সত্যিকার অর্থে আর্টিস্ট সংকট আছে। হাতে গোনা অল্প কিছু আর্টিস্ট।
প্রশ্ন: একটা ভালো কনটেন্টের জন্য কোনটা বেশি জরুরি- জনপ্রিয় অভিনশিল্পী, শক্তিশালী গল্প নাকি বাজেট?
ভিকি জাহেদ: আমি মনে করি, পৃথিবীর যত ধরনের কাজ হয়, সেটা সিনেমা হোক, ওটিটি হোক কিংবা নাটক, একটা জিনিস গুরুত্বপূর্ণ, সেটা হলো গল্প। যে কোনো কনটেন্টের সাকসেস হওয়ার জন্য গল্প খুব জরুরি। সবার এদিকেই মনোযোগ দেওয়া উচিত। কিন্তু আমাদের দেশে তা হয় না। আমাদের দেশে গল্পকার বা রাইটারকে সবচেয়ে বেশি অবহেলা করা হয়। তারা ন্যায্য সম্মানি পান না। যত বড় সুপারস্টার হোক, যত বড় ডিরেক্টর হোক, যত বেশি বাজেট হোক, লাভ নাই, যদি ঠিকঠাক গল্পটা না হয়। আফরান নিশো অনেক ভালো পারফর্মার, কিন্তু একটা খারাপ গল্পকে তিনি কোনোভাবেই অভিনয় করে ভালো করতে পারবেন না। তার পারফরমেন্স দেখার জন্য ভালো গল্পটাই লাগবে।
টিবিএস: ১০ বছর পর নিজেকে কোথায় দেখতে চান?
ভিকি জাহেদ: কোথায় নিজেকে দেখব, জানি না। তবে বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশকে নিয়ে গর্বের কারণ হতে চাই। এটাই চাওয়া।