মহামারির কারণে ‘এফডিসি কমপ্লেক্স’ নির্মাণকাজে ধীরগতি
তিন বছরের মধ্যে 'বিএফডিসি কমপ্লেক্স নির্মাণ' নামে একটি প্রকল্প শেষ করার কথা থাকলেও তিন বছরে এর নির্মাণ কাজই শুরু হয়নি। এ প্রকল্পে সরকারি বরাদ্দ ছিল ৩২২ কোটি ৭৭ লাখ টাকা।
তিন বছর আগে এই বরাদ্দ এলেও কাজের অগ্রগতি এক শতাংশও হয়নি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
জানা গেছে, ২০১৮ সালের ২ অক্টোবর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে এফডিসির ইতিহাসে সর্বোচ্চ অর্থের এ প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। এই প্রকল্পের আওতায় এফডিসির দুটি শুটিং ফ্লোর অপসারণ করে সেখানে একটি ১৫ তলা ভবন নির্মাণ করার কথা। যেখানে সিনেমা হল, শুটিং ফ্লোর, সুইমিংপুল, আবাসিক হোটেল, স্টুডিওসহ বিভিন্ন আধুনিক সুযোগ-সুবিধা থাকবে।
পুরো ভবনটির নির্মাণ কাজ ২০২১ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করার কথা। কিন্তু শেষ তো দূরের কথা এখনো শুরুই হয়নি কাজ। অগ্রগতির মধ্যে প্রকল্পের আওতায় এফডিসির ৩ ও ৪ নম্বর শুটিং ফ্লোর অপসারণ করা হয়েছে গত বছরের জুলাই মাসে।
অতিরিক্ত প্রকল্প পরিচালক আইয়ুব আলী দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ককে বলেন, 'অনেক কারণেই আমাদের কাজের তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি। এর মধ্যে করোনাভাইরাস মহামারি একটি বড় কারণ। তাছাড়া নকশা অনুমোদন পেতে আমাদের সময় লেগেছে। এখন নকশা অনুমোদন পেয়েছি। আমরা টেন্ডার আহ্বান করেছি। আশা করছি দ্রুত কাজ শুরু হবে।'
তিনি দাবি করেন, টেন্ডার অনেক বড়, তাই প্রক্রিয়াটি সময়সাপেক্ষ। তাই অগ্রগতি তেমন নেই। 'গত কয়েক বছর ধরে আশা করছি, এই বছর কাজ শুরু হবে; কিন্তু হচ্ছে না,' যোগ করেন তিনি।
এদিকে, গত বছরের ২১ সেপ্টেম্বর এফডিসির প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছিলেন আইএমইডির পরিচালক মুহাম্মদ কামাল হোসেন তালুকদার। দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে তিনি জানান, এখন আর তিনি এই প্রকল্প দেখছেন না। তবে এক বছর আগে যেটা দেখেছেন, সেটা তাকে হতাশ করেছে।
তিনি বলেন, '২০২০ সালের আগস্ট পর্যন্ত দুই বছরে ৩২২ কোটি ৭৭ লাখ টাকার প্রকল্পটির আর্থিক অগ্রগতি ১ কোটি ৫১ লাখ টাকা। মোট ব্যয়ের হিসাব করলে ০.৪৭% কাজ হয়েছে। অগ্রগতি খুবই ধীরগতির। শুধু তাই নয়, প্রতি মাসে তিন লাখ টাকার মতো পরিবহন ব্যয় হচ্ছে।'
বাড়ছে মেয়াদ
নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার সম্ভাবনা না থাকায় স্বাভাবিকভাবে বাড়ছে মেয়াদ। এরইমধ্যে মেয়াদ বৃদ্ধির আবেদন করা হয়েছে। মেয়াদ বাড়লে ব্যয়ও বাড়বে বলে জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা। তবে কত বছর এবং কত টাকা ব্যয় বাড়বে, সেটা এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
অতিরিক্ত পরিচালক আইয়ুব আলী বলেন, 'মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছে। কিন্তু কত বছর হয়েছে, সেটা আমি এখন বলতে পারছি না। বৃদ্ধি করা সময়সীমার মধ্যেই আমরা কাজ শেষ করব।'
এদিকে, এরই মধ্যে প্রকল্পটির পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। পুরো কাজ মনিটর, সুপারভিশন ও আর্কিটেকচারাল ডিজাইনের জন্য ডেক্সটারেস কনসালটেন্ট লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। প্রতিষ্ঠানটি ৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকার বিনিময়ে এই কাজগুলো করছে।
জানা গেছে, এই প্রকল্পের আওতায় ৪৫ হাজার ৮০২ বর্গমিটার মূল ভবন ও চারটি সিনেপ্লেক্স নির্মাণ করা হবে। এ ছাড়া সিনেমা প্রর্দশনের জন্য চার সেট আধুনিক যন্ত্র কেনা হবে। এ ছাড়াও ৭৩ হাজার ৪৬৯ বর্গমিটার শুটিং ফ্লোর নির্মাণ করা হবে।