ইভ্যালি থেকে ৩ মাস আগেই পদত্যাগ করেছি: আরিফ আর হোসাইন
বিতর্কিত ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম ইভ্যালি থেকে তিন মাস আগেই নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার আরিফ আর হোসাইন। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান বিপণন কর্মকর্তা (সিএমও) হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন তিনি।
মঙ্গলবার সকালে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে তিনি বলেন, "এপ্রিল এবং মে-এই দুই মাস আমি ইভ্যালির সাথে যুক্ত ছিলাম। অর্গানাইজ করতে না পারায় পরে আমি নিজেই সেখান থেকে সরে আসি"।
ইভ্যালির গ্রাহকেরা ইতিমধ্যে বকেয়া ডেলিভারি এবং রিফান্ড ফেরত পেতে ভোগান্তির সম্মুখীন হচ্ছেন। তার মধ্যে এই পদত্যাগের খবর ছড়ানোয় নতুন করে আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে।
এছাড়া অগ্রিম টাকা ও পণ্য নিয়ে কাস্টমার ও সেলারদের অনিশ্চয়তায় ফেলার পর এবার নিজ কর্মীদেরও জিম্মি করার অভিযোগ উঠেছে ইভ্যালির বিরুদ্ধে।
অভিযোগ উঠেছে প্রত্যেক কর্মীকে মাসে ৫০ লাখ টাকার নতুন সেলার আনার টার্গেট দিয়ে ২৩ আগস্ট এক সভায় ইভ্যালির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রাসেল বলেছেন, যারা প্রতি মাসে ৫০ লাখ টাকার সেলার আনতে পারবেন না, তারা যেন চাকরি ছেড়ে চলে যান।
ইভ্যালির একাধিক কর্মী জানান, গত ২৩ আগস্ট ওই সভায় কর্মীদের মোহাম্মদ রাসেল বলেছেন, "টি-১০ অফারে পাওয়া অর্ডার ছাড়া ইভ্যালির হাতে আর কোন ব্যাক-আপ নেই। তাই অক্টোবর-নভেম্বরের আগে কেউই স্যালারি আশা করবেন না। এতে যাদের ইচ্ছা চাকরি করেন, না হলে চলে যান।"
আর যারা থাকবেন, তাদের প্রত্যেককে মাসে ৫০ লাখ টাকার বাকিতে পণ্য দেওয়ার মতো সেলার বা মার্চেন্ট আনতে হবে। এক্ষেত্রে পুরনো সেলার বাদ দিয়ে নতুন সেলার আনার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
অন্যদিকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া এক কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাবে কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রাসেল বলেন, গত ১৫ জুলাই পর্যন্ত ইভ্যালির কাছে ২ লাখেরও বেশি গ্রাহকের ৩১১ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে।
বিপুল ডিসকাউন্টের লোভ দেখিয়ে ৭ থেকে ৪৫ দিনের মধ্যে পণ্য ডেলিভারির প্রতিশ্রুতি দিয়ে এসব গ্রাহকদের কাছ থেকে ইভ্যালি অগ্রিম ৩১১ কোটি টাকা নিলেও তাদের পণ্য সরবরাহ করেনি। গত বছরের ডিসেম্বর মাসে অগ্রিম মূল্য পরিশোধ করা অনেক গ্রাহক এখনও পণ্য পাননি। ইভ্যালি যেসব গ্রাহকদের রিফান্ড চেক দিয়েছে, ব্যাংক একাউন্টে টাকা না থাকায় সেগুলোও বাউন্স হচ্ছে।
গত ১৫ জুলাই পর্যন্ত ক্রেতাদের থেকে নেওয়া অগ্রিম, পণ্য সরবরাহকারীদের পাওনা এবং অন্যান্য ব্যবসায়ীক বকেয়াসহ ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মটির মোট দায় ৫৪৩ কোটি টাকা ধার্য করা হয়েছিল। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া বিবৃতিতে শেয়ারহোল্ডার ইক্যুইটির জন্য অতিরিক্ত এক কোটি টাকা দেনার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে।
১৫ জুলাই পর্যন্ত ক্রেতাদের থেকে নেওয়া অগ্রিম, পণ্য সরবরাহকারীদের পাওনা এবং অন্যান্য ব্যবসায়ীক বকেয়াসহ ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মটির মোট দায় ৫৪৩ কোটি টাকা ধার্য করা হয়েছিল। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া বিবৃতিতে শেয়ারহোল্ডার ইক্যুইটির জন্য অতিরিক্ত এক কোটি টাকা দেনার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে।
যার মানে, বর্তমানে ইভ্যালির মোট ঋণ প্রায় ৫৪৪ কোটি টাকা, যা জুনে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শন প্রতিবেদনে উল্লেখিত পরিমাণের চেয়ে ১৪০ কোটি টাকা বেশি।
তবে ইভ্যালির দেনা সম্পর্কিত বিবৃতিতে ক্রেতা ও মার্চেন্টদের কাছে কী পরিমাণ দেনা রয়েছে, তা পৃথক পৃথকভাবে উল্লেখ করা হয়নি।
কোম্পানিটি আরো জানায়, তাদের স্থায়ী ও অস্থায়ী সম্পদের মোট মূল্য ১২১ কোটি টাকা। অর্থাৎ, সব সম্পদ বিক্রি করলেও গ্রাহক ও সরবরাহকারীদের কাছে তাদের বর্তমান দেনার মাত্র ২২.৩০ শতাংশ পরিশোধ করা যাবে।
ইভ্যালির ব্যাল্যান্স শিট অনুসারে, কোম্পানির মোট অস্থায়ী সম্পদের পরিমাণ ১৫ কোটি ৮২ লাখ টাকা। এছাড়া স্থায়ী সম্পত্তি হিসাবে প্রতিষ্ঠানের নামে সম্পত্তি একটি কারখানা ও সেখানকার যন্ত্রপাতির মূল্য ১৪ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। এর বাইরে, কোম্পানির চলতি সম্পদ রয়েছে ৯০ কোটি ৬৬ লাখ টাকা।
ইভ্যালির মোট দেনা থেকে তাদের স্থাবর-অস্থাবর সকল সম্পদ বাদ দেওয়ার পরও ৪২২ কোটি টাকা ঘাটতি রয়ে যায়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া ব্যাল্যান্স শিটে, ঘাটতির সমপরিমাণ বা ৪২২ কোটি ৬২ লাখ টাকা ব্র্যান্ড ভ্যালু হিসাবে উল্লেখ করেছে কোম্পানিটি।
কিন্তু, বিশেষজ্ঞরা এ দাবির সাথে সহমত নন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মিজানুর রহমান দ্য বিজন্যাস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "ব্যবসায়ের টেকসই মডেল অনুসারে পরিচালিত না হওয়ায় ইভ্যালির প্রকৃত ব্র্যান্ড ভ্যালু এখন নেতিবাচক অবস্থানে। তার ওপর গত দুই বছর কোম্পানিটি যে পরিমাণ দেনা সৃষ্টি করেছে, তার ফলে আগামীতে কোনো সম্পদই সৃষ্টি করতে পারবে না।"