শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পুনরায় খোলার বিষয়ে পরামর্শক কমিটি যে সব সুপারিশ করল
কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহে সকলের মাস্ক পরা নিশ্চিত করতে এবং এর ব্যতয় হলে সে ব্যাপারে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছে। তবে এটি পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু ব্যতীত এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নীতিমালা অনুযায়ী হতে হবে।
কেন্দ্রীয়ভাবে সকল শিক্ষার্থীদের জন্য উপযুক্ত, মানসম্পন্ন এবং সঠিক মাপের মাস্কের ব্যবস্থা ও বিতরণ করার পরামর্শ দিয়েছে কমিটি।
একইসাথে অন্যান্য জনস্বাস্থ্য পদক্ষেপসমূহ, যেমন হাত পরিষ্কার রাখা (হাত ধোয়া/ হাত জীবাণুমুক্তকরণ স্টেশন স্থাপন করা) এবং সাধারণ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা মেনে চলার ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরামর্শ অনুযায়ী, যথাযথ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক একটি স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) প্রস্তুত করতে সুপারিশ করেছে।
অধ্যাপক মোহাম্মদ সহিদুল্লার সভাপতিত্বে গত ২রা সেপ্টেম্বর রাত ৮টায় অনুষ্ঠিত কমিটির ৪৫তম অনলাইন সভায় এসব সুপারিশ করা হয়।
স্কুল এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহে কমপক্ষে ৮০ শতাংশ শিক্ষক ও কর্মচারীবৃন্দকে কোভিড-১৯ এর টিকা নেওয়া থাকতে হবে, এবং তারা দ্বিতীয় ডোজের ১৪ দিন পার হবার পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যোগ দিতে পারবেন। তবে ক্ষেত্রবিশেষে ১ম ডোজের ১৪ দিন পরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যোগদানের অনুমতি প্রদান করা যেতে পারে বলে কমিটি সভায় উল্লেখ করে।
উচ্চতর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহে ১৮ বছরের অধিক বয়সী শিক্ষার্থীদের দ্রুত টিকা নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
শ্রেণীকক্ষে এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহে সমাগম নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য নির্দিষ্ট ক্লাস কোনটি সপ্তাহের কোনদিন হবে- তা বিভক্ত করে দেওয়া যেতে পারে। যেমন প্রথম দিকে পরীক্ষার্থীদের ক্লাস প্রতিদিন খোলা রাখা ছাড়া বাকি সব ক্লাস সপ্তাহের এক বা দুই দিন খোলা রাখা যেতে পারে। এতে একটি নির্দিষ্ট দিনে যে ক্লাসটি খোলা থাকবে, তার শিক্ষার্থীরা অন্য খালি শ্রেণিকক্ষগুলো ব্যবহার করে তাতে নির্দিষ্ট দূরত্ব মেনে বসতে পারবে। প্রাতঃসমাবেশ (এসেম্বলি) বন্ধ রাখতে হবে। এই ব্যাপারেও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরামর্শ অনুযায়ী যথাযথ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক একটি এসওপি প্রস্তুত করা দরকার বলে কমিটি মনে করে।
এছাড়া কমিটির মতে, প্রথমদিকে স্বল্প সময়ের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহ খোলা রাখা উচিত যাতে করে খাবার গ্রহণের জন্য মাস্ক খোলার প্রয়োজন না হয়।
এছাড়া আবাসিক সুবিধাসম্বলিত স্কুল এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর (মাদ্রাসা সহ) জন্য কমিটি নিম্নোক্ত পরামর্শসমূহ দিয়েছে-
এর মধ্যে আছে সকল সমাবেশ স্থানসমূহ (ক্যাফেটেরিয়া, ডাইনিং, টিভি/স্পোর্টস রুম, ইত্যাদি) বন্ধ রাখা- রান্নাঘর থেকে রুমসমূহে সরাসরি খাবার সরবরাহের ব্যবস্থা থাকা।
একাধিক শিক্ষার্থী একই বিছানা ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকা; মাদ্রাসায় একসাথে নামাজ, সমাবেশ ইত্যাদির ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট নির্দেশনা মেনে চলা।
এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পুনরায় খুলে দেয়ার পূর্বে 'করণীয়' এবং 'বর্জনীয়' সম্পর্কে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক সহ প্রতিষ্ঠানের অন্যান্য কর্মচারীবৃন্দকে একটি অরিয়েন্টেশনের মাধ্যমে সুস্পষ্ট ধারণা দিতে হবে।
তাছাড়া স্কুল এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং অন্যান্য কর্মচারীবৃন্দের মধ্যে সংক্রমণ পর্যবেক্ষণ এবং দৈনিক রিপোর্ট করতে হবে। যেসব জেলায় সংক্রমণের হার বেশি, যেমন শনাক্তের হার ২০ শতাংশের বেশি, সেখানে নিবিড় পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।
উল্লেখ্য, দেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণের হার ধীরে ধীরে কমতে থাকায় প্রায় ১৮ মাস পর আগামী ১২ সেপ্টেম্বর থেকে সরকার স্কুল-কলেজ পুনরায় চালু করতে চলেছে।