মার্কিন বাহিনী প্রত্যাহারের পর কাবুল ছাড়ল বিদেশী যাত্রীদের প্রথম ফ্লাইট
মার্কিন বাহিনী আফগানিস্তান ছাড়ার পর প্রথমবারের মতো যুক্তরাজ্যের নাগরিকসহ কয়েক ডজন আন্তর্জাতিক যাত্রী একটি ফ্লাইটে কাবুল ছেড়েছে।
কাতার এয়ারওয়েজের চার্টার ফ্লাইটটি বৃহস্পতিবার (৯ সেপ্টেম্বর) কাতারের রাজধানী দোহায় অবতরণ করেছে এবং এর দ্বিতীয় ফ্লাইটটি রয়েছে আজ শুক্রবার (১০ সেপ্টেম্বর)।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে বিমানে ১১৩ জন যাত্রী ছিলেন। সম্প্রতি মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন তার কাতার সফরের সময় উদ্ধার অভিযানে সাহায্যের আহ্বান জানিয়েছিলেন।
মার্কিন সামরিক বাহিনীকে সাহায্য করেছিল, এমন শত শত আফগান নাগরিক গত মাসের মার্কিন উদ্ধার অভিযান থেকে বাদ পড়েছিল। তাদের উদ্ধারেই পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিনকেনের আহ্বানে সাড়া জানিয়েছে কাতার।
যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র সচিব ডমিনিক রাব জানিয়েছেন, ১৩ জন ব্রিটিশ নাগরিক দোহায় পৌঁছেছেন এবং বিমান সুবিধা দেওয়ার জন্য কাতারকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
হোয়াইট হাউস এক বিবৃতির মাধ্যমে মার্কিন নাগরিকদের নিরাপদে কাবুল ছাড়তে পারার ব্যাপারটি নিশ্চিত করে কাতারকে ধন্যবাদ জানিয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়ত, "সতর্ক ও দৃঢ় কূটনীতির" ফসল হলো এই উদ্ধার ফ্লাইট।
এতে আরো বলা হয়, মার্কিন নাগরিকদের কাবুল ছাড়তে সাহায্য করায় তালেবান "পেশাদারিত্বের" পরিচয় দিয়েছে।
কানাডাও নিশ্চিত করেছে, তাদের ৪৩ জন নাগরিক ফ্লাইটে ছিলেন। এছাড়া, নেদারল্যান্ডস জানিয়েছে তাদের ১৩ জন নাগরিক একই ফ্লাইটে কাবুল ছেড়েছেন।
বিমানবন্দরে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে কাতারের বিশেষ দূত মুতলাক বিন মাজেদ আল কাহতানি জানান, কাবুল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এখন সক্রিয় আছে।
গত ১৫ই আগস্ট তালেবানরা কাবুল দখল করে নেয়। এরপর শুরু হয় মার্কিন উদ্ধার অভিযান। গত মাসে মার্কিন বাহিনী নেতৃত্বাধীন উদ্ধার অভিযান শেষ হওয়ার পর এটিই ছিল বিদেশী নাগরিকদের প্রথম ফ্লাইট।
এর আগে, তালেবানদের প্রতিশোধের আশঙ্কায় ১ লাখ ২৪ হাজারেরও বেশি বিদেশী এবং আফগান নাগরিকে আফগানিস্তান থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল।
সাংবাদিকদের মারধর
এদিকে, গত বুধবার (৮ সেপ্টেম্বর) নারী অধিকার আদায় আন্দোলনের বিক্ষোভ প্রতিবেদন করায় দু'জন সাংবাদিককে মারধর করেছে তালেবান যোদ্ধারা। ছবিতে উঠে এসেছে সেই দু'জন সাংবাদিকের মারধরের আঘাত।
কাবুলে তালেবানদের হাতে আটক হওয়ার পর তাদেরকে মারধর করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
ফটোগ্রাফার নেমাতুল্লাহ নকদি এএফপিকে বলেছেন, "একজন তালেবান আমার মাথায় পা রেখেছিল, কংক্রিটের উপর মাথা রেখে তারা আমার মাথায় লাথি মেরেছে ... আমি ভেবেছিলাম তারা আমাকে মেরে ফেলবে।"
বিচার মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া দেশে যেকোনো ধরনের বিক্ষোভ নিষিদ্ধ করেছে তালেবান।
কিন্তু কয়েক ডজন নারী বিক্ষোভকারী রাজধানী কাবুলে পাকিস্তান দূতাবাসের কাছে গিয়ে "আমরা স্বাধীনতা চাই" স্লোগান দেওয়ায় তালেবান বন্দুকধারীরা তাদের ছত্রভঙ্গ করতে ফাঁকা গুলি চালায়।
স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো কাবুলের উত্তর-পূর্বে কাপিসা প্রদেশে নারীদের আরেকটি প্রতিবাদের খবর জানিয়েছে। সেই প্রতিবাদ থেকে বেশ কয়েকজন নারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলেও জানা গেছে।
এর আগে তালেবানরা বলেছিল, নারী অধিকারের বিষয়ে তারা সহনশীল হবে। কিন্তু নতুন মন্ত্রিপরিষদে নারীদের অংশগ্রহণের সুযোগ না দেওয়ায় কাবুলসহ আরো বেশ কয়েকটি বড় শহরে নারীদের বিক্ষোভের খবর পাওয়া গেছে।
বুধবার, কাবুল এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ বাদাখশানে কয়েক ডজন নারী তালেবানের পুরুষসর্বস্ব অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করলে তাদের উপর তালেবান যোদ্ধারা হামলা চালায় এবং মারধর করে।
এছাড়া, মঙ্গলবার পশ্চিমাঞ্চলীয় হেরাত শহরে বিক্ষোভ চলাকালে তিনজন নিহত হয়েছেন বলেও জানা গেছে। তবে, তালেবান দল এই সহিংসতার দায়ভার অস্বীকার করেছে।
অন্যদিকে, খবর পাওয়া গেছে সহিংসতা চলাকালীন কাবুলের কিছু অংশে ইন্টারনেট সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল।
আফগান সাংবাদিক বিলাল সারওয়ারি টুইট করে জানিয়েছিলেন, টেলিকম সেক্টরের একাধিক সূত্র তাকে নিশ্চিত করেছে, তালেবানরা বেশ কয়েকটি জেলায় সাময়িকভাবে মোবাইল ফোনের ইন্টারনেট কভারেজ বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছিল।
তবে পরবর্তীতে, সাংবাদিক হাবিব খান টুইট করে শহরের ইন্টারনেট সংযোগ পুনরুদ্ধারের খবরও নিশ্চিত করেন।
- সূত্র- বিবিসি