পরীমনির মামলার পরবর্তী শুনানি ১০ অক্টোবর
বনানী থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে চিত্রনায়িকা পরীমনির বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ১০ অক্টোবর দিন ধার্য করেছেন আদালত।
আজ (১৫ সেপ্টেম্বর) মামলার শুনানি শেষে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত এ আদেশ দেন।
আজ সকালে আদালতে হাজিরা দিতে যান পরীমনি। পরীমনির আইনজীবী নীলাঞ্জনা রিফাত জানান, আজ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেওয়ার কথা ছিল।
একই সময়ে, পরীমনিকেও আদালতে হাজির হতে হয়।
গত ৩১ আগস্ট মহানগর দায়রা জজ আদালত পরীমনিকে জামিন প্রদান করেন। পরদিন সকালে তাকে জেল হেফাজত থেকে মুক্তি দেওয়া হয়।
গত ৪ আগস্ট বিকেলে বনানীর ১২ নম্বর রোডের পরীমনির বাসায় অভিযান পরিচালনা করে র্যাব। একাধিকবার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করলে তাকে ২৭ দিন কারাগারে কাটাতে হয়।
গত ১ সেপ্টেম্বর চিত্রনায়িকা পরীমণির দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফা রিমান্ডের যৌক্তিকতা নিয়ে অধস্তন আদালতের দুই ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে ব্যাখ্যা জানতে চান হাইকোর্ট। ১০ দিনের মধ্যে এই ব্যাখ্যা দাখিলের নির্দেশ দিয়ে হাইকোর্ট বলেন, রিমান্ড মঞ্জুরকারী ঢাকার সংশ্লিষ্ট মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটরা কি উপাদানের ভিত্তিতে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন এর ব্যাখ্যা জানাতে হবে। এছাড়া মামলার তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) সিআইডি পুলিশের পরিদর্শক কাজী গোলাম মোস্তফাকে ১৫ সেপ্টেম্বর মামলার নথিসহ (কেস ডকেট) আদালতে হাজির হতে বলা হয়।
জামিন অযোগ্য অপরাধের ক্ষেত্রে, গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তি জামিনের অধিকারী নয়, এর অর্থ এটি নয় যে, তার জন্য আর কোন সুযোগের অবকাশ নেই। জামিন অযোগ্য অপরাধ সত্ত্বেও যদি অভিযুক্তের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডযোগ্য অপরাধের প্রমাণ পাওয়া না যায় তাহলে সে জামিনে মুক্তি পেতে পারে; এমনকি অভিযুক্তের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডযোগ্য অপরাধ সংঘটনের যুক্তিসঙ্গত কারণ পাওয়া সত্ত্বেও অভিযুক্ত অতিরিক্ত সুযোগ লাভ করতে পারে যদি সে- নারী, শিশু কিংবা অসুস্থ ব্যক্তি হন।
এর অর্থ দাঁড়ায়, এমনকি একজন অভিযুক্তকেও তার জীবন ও ব্যক্তিগত স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত করা যাবে না। এটি সুষ্ঠু বিচার প্রক্রিয়ায় অন্যতম মৌলিক নিয়ম।
অন্যদিকে গুরুতর প্রকৃতির অপরাধের ক্ষেত্রেই সাধারণত অভিযুক্তদের দীর্ঘ সময় রিমান্ডে নেওয়া হয়ে থাকে। কিন্তু পরীমনিকে তিন দফায় সাত দিনের মধ্যে প্রথমে চার দিন, দ্বিতীয় দফায় দুই দিন ও তৃতীয় দফায় এক দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। জাতীয় নিরাপত্তা বা জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়েই গুরুতর মামলায় আদালতের এত দিনের রিমান্ডের অনুমতি দিতে দেখা যায়।
পরীমনির কাছে ১৮ লিটার মদ এবং এলএসডি পাওয়ার যে অভিযোগ এসেছে তাতে ফৌজদারী কার্যবিধির ৪৯৬ ধারা অনুসারে তিনি জামিনের অধিকারী ছিলেন না। কিন্তু তার বিরুদ্ধে যে অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছিল তার সর্বোচ্চ শাস্তি পাঁচ বছরের কারাদণ্ড- মৃত্যুদণ্ড নয়।
ফৌজদারী কার্যবিধির ধারা ৪৯৬ এবং ৪৯৭, সংবিধানের ৩২ অনুচ্ছেদকেই তুলে করে যেখানে স্পষ্ট বলা আছে, আইনানুযায়ী ব্যতীত জীবন ও ব্যক্তি-স্বাধীনতা হইতে কোন ব্যক্তিকে বঞ্চিত করা যাবে না।
সুতরাং, বিবেচনার ক্ষমতা প্রয়োগ করে, বিচারকরা ফৌজদারী কার্যবিধির ৪৯৭ ধারার অধীনে পরীমনির জামিন মঞ্জুর করতে পারতেন। পাশাপাশি একজন নারী হওয়ায় তার জামিন পাওয়ার বিশেষ সুযোগ ছিল।
কিন্তু নিম্ন আদালতের বিচারকরা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার আবেদনে সাড়া দিয়ে তাকে রিমান্ডে পুলিশের হেফাজতে রাখে এবং তার জামিন নামঞ্জুর করে।
এদিকে এ সপ্তাহেই মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে দায়ের করা মামলায় চিত্রনায়িকা পরীমনির দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফা রিমান্ড মঞ্জুর করায় হাইকোর্টে ক্ষমা চান দুই বিচারক।
ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক দেবব্রত বিশ্বাস এবং আতিকুল ইসলাম এই সপ্তাহে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়ে ক্ষমা প্রার্থনার আবেদন করে পৃথক পৃথকভাবে দুটি লিখিত ব্যাখ্যা জমা দেন।