বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির সাথে সাথে বেড়েছে শক্তিশালী বন্যার ঝুঁকি
গত জুলাইয়ে ইতিহাসের স্মরণকালের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত ও তার ফলে বন্যার কবলে পরে দক্ষিণ জার্মানির বিস্তীর্ণ অঞ্চল। মাত্র ২৪ ঘণ্টায় হয় আট ইঞ্চি বর্ষণ। ডুবে যায় অনেক জনপদ, মারা যান অন্তত দুইশ'ত জন। কিছু এলাকায় এত ভারি বর্ষণ হয়েছে, যা শুধু প্রতি ৫০০ বছরে একবার দেখা যায়।
আকস্মিক বন্যায় এত ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানি নিয়ে সবাই উদ্বিগ্ন হলেও, হাইড্রোলজিস্ট ম্যানুয়েলা ব্রুনার কিন্তু আরেকটি কারণ অনুধাবন করে উৎকণ্ঠিত হয়ে ওঠেন।
হাইড্রোলজিস্টরা হলেন পৃথিবীর ভুগর্ভ ও ভূপৃষ্ঠে পানির সঞ্চালন নিয়ে গবেষণাকারী বিজ্ঞানী।
গত বছরের শুরুর দিনে ব্রুনার ও তার কিছু সহকর্মী বৈশ্বিক উষ্ণায়ন বৃদ্ধির কারণে দক্ষিণ জার্মানিতে বন্যার ধরন কীভাবে পরিবর্তিত হবে, তা নিয়ে একটি গবেষণা করেন।
তখনই বিজ্ঞানীরা এমন কিছু প্রমাণ পান যাতে স্পষ্ট হয়, ভয়াবহ শক্তিশালী বন্যার মতো দুর্যোগ এ অঞ্চলে ঘন ঘন আঘাত হানবে। জুলাইয়ে সত্যিই যখন বন্যা দেখা দিল, তখন নিজেদের অনুমান সত্যি হতে দেখে শিউরে উঠেছিলেন ব্রুনার ও তার সহকর্মীরা। এমনকি তাদের গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হওয়ার সপ্তাহখানেক আগেই সত্যি হয়ে যায় তাদের আভাস।
ফ্রেইবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকচারার ও বৈজ্ঞানিক নিবন্ধটির প্রধান লেখক ব্রুনার বলেন, "গবেষণা প্রকাশের আগেই ফল মিলে যাওয়া সত্যিই কাকতলীয়। তবে এ ধরনের ঘটনা প্রমাণ কর্ ঘন ঘন ও প্রচণ্ড বন্যা ভবিষ্যতে স্বাভাবিক বিষয়ে পরিণত হবে।"
এর আগেও অন্যান্য বিজ্ঞানীরা উষ্ণ জলবায়ুর সাথে বন্যার প্রকৃতি বদলে যাওয়া নিয়ে গবেষণা করেছেন। তাদের আভাস অনুসারে, বন্যার শক্তি ও তীব্রতা বৃদ্ধির ঘটনাও লক্ষ্য করা গেছে বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক দেশেই। কিন্তু, ব্রুনারের নেতৃত্বে গবেষকরা প্রথম ভবিষ্যতে বন্যার ধরন বদলে যাওয়া বিশ্লেষণে সক্ষম হয়েছেন।
নতুন গবেষণাটি বলছে, মারাত্মক শক্তিশালী বন্যার ঘটনা বাড়লেও, তুলনামূলক ছোট ও মৃদু বন্যা একেবারেই হ্রাস পাবে। বড় বন্যায় জীবন ও সম্পদের চরম ক্ষতি করে, অন্যদিকে, মাঝারি বৃষ্টিপাত ও তার ফলে মৃদু বন্যা অধিকাংশ সময়েই কৃষিকাজে উপকারী হয়। এটি কমে যাওয়ার অর্থ নদী তীরবর্তী বিস্তীর্ণ অঞ্চল আর্থ-সামাজিক অনিশ্চয়তার শিকার হবে।
এব্যাপারে গবেষণার সহ-লেখক যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলসে অবস্থিত ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জলবায়ু বিজ্ঞানী ড্যানিয়েল সোয়েইনের মন্তব্য, "জলবায়ু পরিবর্তন যে বিশ্বজুড়ে বন্যার মাত্রা ও শক্তি বৃদ্ধি করছে এ গবেষণায় সেটি উঠে এসেছে। কিন্তু, একইসময়ে বিশ্বজুড়ে বন্যার পরিমাণ বাড়ার প্রমাণ পাইনি আমরা।"
"আমরা এ গবেষণার ফলে বুঝতে পারছি, জলবায়ু পরিবর্তন মূলত বড় বন্যার জন্ম দেবে, আর সে তুলনায় কমাবে ছোট বন্যার ঘটনা।"
যার অর্থ স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত ব্যাহত হবে, যা ছোট বন্যার প্রধান কারণ। আবার আকস্মিক ও ভারি বৃষ্টিপাত বৃদ্ধি পাবে, যা বিনাশী বন্যার জন্ম দেবে।
সোয়াইন জানান, তারা বিশ্বাস করেন ইতোমধ্যেই বিশ্বের অনেক অঞ্চলে এ পরিবর্তন স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে, তবে বিষয়টি প্রমাণে তারা আরও তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করছেন।
- সূত্র: ওয়াশিংটন পোস্ট