১৪ নভেম্বর থেকে এসএসসি, ১ ডিসেম্বর থেকে এইচএসসি শুরুর পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের
এ বছরের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) এবং উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এইচএসসি) পরীক্ষা যথাক্রমে ১৪ নভেম্বর এবং ১ ডিসেম্বর থেকে শুরু করার পরিকল্পনা করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
এসকল পরীক্ষার সময়সূচি যে কোনো সময় ঘোষণা করা হতে পারে। ঢাকা শিক্ষা বোর্ড ইতোমধ্যেই মন্ত্রণালয়কে তাদের প্রস্তুতি সম্পর্কে অবহিত করেছে। একইসাথে সময়সূচি প্রকাশের অনুমতিও চেয়েছে তারা।
ঢাকার মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক নেহাল আহমেদ বলেন, "আমরা যেকোনো সময় পরীক্ষা পরিচালনার জন্য প্রস্তুত। আমরা আমাদের প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছি এবং এখন তাদের উত্তরের অপেক্ষায় আছি"।
করোনাভাইরাস মহামারির কারণে সৃষ্ট সংকট বিবেচনায় তিনটি নির্বাচনী বিষয়ের উপর এবারের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। অন্যান্য বাধ্যতামূলক বিষয় এবং চতুর্থ বিষয়ে কোনো পরীক্ষা হবে না। পরীক্ষার জন্য সময় বরাদ্দ থাকবে ১.৫ ঘন্টা এবং পরীক্ষার নম্বরও থাকবে অর্ধেক।
এদিকে গত বৃহস্পতিবার মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড জানায়, ১ নভেম্বর থেকে দাখিল পরীক্ষা শুরু হবে। এ পরীক্ষা শেষ হবে ২১ নভেম্বর।
সাধারণত, দেশে এসএসসি, দাখিল এবং অন্যান্য সমমানের পরীক্ষা একই দিনে শুরু হয়। এ বছরও মন্ত্রণালয় এই নিয়ম চালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ গোলাম ফারুক দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, মন্ত্রণালয় এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার তারিখ ঠিক করবে এবং শিক্ষা বোর্ড পরীক্ষার সময়সূচি প্রকাশ করবে।
তিনি বলেন, "কোভিড-১৯ পরিস্থিতির অবনতি না হলে আগামী ১ নভেম্বর থেকে এসএসসি পরীক্ষা শুরু হবে। এসএসসি পরীক্ষা শুরুর ১৫ দিন পর এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হবে।"
করোনা মহামারির কারণে এই বছরের এসএসসি, এইচএসসি এবং সমমানের পরীক্ষা পিছিয়ে দেয় সরকার। তাছাড়া, এসএসসি এবং এর সমমানের পরীক্ষা সাধারণত ফেব্রুয়ারিতে এবং এইচএসসি পরীক্ষা এপ্রিলে অনুষ্ঠিত হয়।
গত বছর, এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের ফলাফল তাদের পূর্ববর্তী এসএসসি এবং জেএসসি ফলাফলের ভিত্তিতে নির্ধারিত হয়। অপরদিকে অন্যান্য ক্লাসের শিক্ষার্থীরা পরবর্তী ক্লাসে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পদোন্নতি পায়।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এ বছর ১১টি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে সারা দেশের মোট ২২ লাখ শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষায় এবং ১৪ লাখ শিক্ষার্থী এইচএসসি পরীক্ষায় বসবে।
ফলাফল নির্ধারণের জন্য লিখিত পরীক্ষা
মন্ত্রণালয় শুধুমাত্র লিখিত পরীক্ষার ভিত্তিতে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হলে ফলাফল নির্ধারণে অ্যাসাইনমেন্ট বা সাবজেক্ট ম্যাপিং বিবেচনা করা হবে না।
অধ্যাপক সৈয়দ গোলাম ফারুক বলেন, "এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা আয়োজনের সব ব্যবস্থা আছে আমাদের। আমরা আশা করছি এই সময়ের মধ্যে পরিস্থিতির উন্নতি হবে।"
মহামারি পরিস্থিতি অনুকূলে না থাকলে প্রয়োজনীয় বিষয়গুলোর সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের ফলাফল, শিক্ষার্থীদের পূর্ববর্তী পাবলিক পরীক্ষার ফলাফল এবং অ্যাসাইনমেন্টে তাদের পারফরম্যান্স বিবেচনা করে ফলাফল দেবে মন্ত্রণালয়।
এসএসসি প্রার্থীদেরকে এই মাস থেকে আগামী ১২ সপ্তাহের মধ্যে ২৪টি অ্যাসাইনমেন্ট জমা দিতে হবে। এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের জমা দিতে হবে ৩০টি অ্যাসাইনমেন্ট।
হচ্ছে না জেএসসি, জেডিসি পরীক্ষা
এ বছর জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) এবং জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষা নেওয়ার ব্যাপারে পরিকল্পনা ছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের। নভেম্বর মাসে এ পরীক্ষাগুলো নেওয়ার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু, পরীক্ষা আয়োজনের জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে দেরি হওয়ায় এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে মন্ত্রণালয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা টিবিএসকে জানান, মন্ত্রণালয় শিক্ষা বোর্ডগুলোকে শুধু এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা নিয়ে ব্যস্ত থাকতে বলেছে।
যদি জেএসসি এবং জেডিসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত না হয়, তাহলে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পরবর্তী ক্লাসে উন্নীত হওয়ার জন্য একটি সংক্ষিপ্ত পাঠ্যসূচিতে বার্ষিক পরীক্ষা দিতে হবে। অন্যান্য শ্রেণীর শিক্ষার্থীদেরও একইভাবে উন্নীত করা হবে।
দেশে প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের প্রায় ২ লাখ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এ পর্যায়ে শিক্ষার্থী রয়েছে প্রায় ৪.৫ কোটি।
কোভিড-১৯ মহামারির কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকায় ১৭ মার্চ থেকে শিক্ষার্থীরা বেশিরভাগ প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা থেকে দূরে ছিল।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর থেকে প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা যায়, সারাদেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পুনরায় খোলার পর কয়েক দিনের জন্য শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ৬০ শতাংশেরও বেশি ছিল। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যে এই হার কমে যায়।
ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের কিভাবে ফিরিয়ে আনা যায়
শিক্ষাবিদরা আশঙ্কা করছেন, প্রায় দেড় বছর ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় বেশ কিছু শিক্ষার্থী ঝরে পড়তে পারে।
স্কুলে শিক্ষার্থীদের দুর্বল উপস্থিতির দিকে ইঙ্গিত করে তারা হারানো শিক্ষার্থীদেরকে ক্লাসে ফিরিয়ে আনতে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের অধ্যাপক সৈয়দ গোলাম ফারুক টিবিএসকে জানান, তারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। "সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে আমরা সিদ্ধান্ত নেব," বলেন তিনি।