বন্দুকধারীদের গুলিতে রোহিঙ্গা নেতা মাস্টার মুহিবুল্লাহ নিহত
অজ্ঞাত বন্দুকধারীদের গুলিতে নিহত হয়েছেন রোহিঙ্গা নেতা মাস্টার মুহিবুল্লাহ (৫০)।
বুধবার (২৯ সেপ্টেম্বর) রাত পৌনে নয়টার দিকে কুতুপালং ক্যাম্প-১ এর উয়েস্ট' ডি-৮ ব্লকে এ খুনের ঘটনা ঘটে।
কুতুপালং ক্যাম্পে কর্মরত ৮ এপিবিএন'র কমান্ডার (পুলিশ সুপার ) শিহাব কায়সার খান তার নিহত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মুহিবুল্লাহ মিয়ানমারের আরকান মংডু এলাকার মৌলভী ফজল আহম্মদের ছেলে। তিনি 'আরকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস এন্ড হিউম্যান রাইট' ( এআরএসপিএইচ) এর চেয়ারম্যান হিসেবে পরিচিত ছিলেন বেশি। এ সংগঠনের ব্যানারে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে তিনি বাংলাদেশ সরকারকে সহযোগিতা করছিলেন বলে জানা গেছে।
রোহিঙ্গাদের বরাত দিয়ে এপিবিএন এর এসপি শিহাব কায়সার খান বলেন, এশার নামাজের পরে রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ নিজ অফিসে অবস্থান করছিলেন। রাত অনুমান পৌনে নয়টার দিকে একদল অস্ত্রধারী দুর্বৃত্ত অকস্মাৎ এসে মুহিবুল্লাহকে লক্ষ্য করে পর পর ৫ রাউন্ড গুলি করে পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে সাধারণ রোহিঙ্গাদের সহযোগিতায় ক্যাম্পে কর্মরত এপিবিএন'র সদস্যরা আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে দ্রুত কুতুপালং এমএসএফ' হসপিটালে নিয়ে যান। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ৫ রাউন্ড গুলির তিনটি তার বুকে বিধেঁছে বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। পরে নিহতের লাশ উখিয়া থানায় হস্তান্তর করা হয়।
জানা গেছে, ১৯৯২ সালে মহিবুল্লাহ মিয়ানমার ছেড়ে বাংলাদেশে আসেন। এর পর থেকেই তিনি উখিয়ার ক্যাম্প ও আশপাশে বসবাস করছেন। ১৫ জন সদস্য নিয়ে গড়ে তোলেন 'আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যানরাইটস' বা এআরএসপিএইচ। ২০১৭ সালে রোহিঙ্গার ঢল নামার পর মুহিবুল্লার পরিচিতি বাড়ে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে ২০১৮ সালে ইউএনএইচসিআরকে সংযুক্ত করার পর রোহিঙ্গাদের বক্তব্য জানার চেষ্টা থেকেই প্রাধান্য পায় মুহিবুল্লাহর সংগঠন 'এআরএসপিএইচ'। ইংরেজি ভাষা ও রোহিঙ্গাদের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগে দক্ষ মুহিবুল্লাহ ধীরে ধীরে প্রিয়পাত্র হয়ে ওঠেন বিদেশিদের। ২০১৮ সালের পর জাতিসংঘ মহাসচিবসহ যত বিদেশি প্রতিনিধি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গেছেন তাদের প্রত্যেকের সঙ্গেই রোহিঙ্গা প্রতিনিধি হিসেবে মুহিবুল্লাহ ও তার সঙ্গীদের সাক্ষাৎ করানো হয়েছে। এই মুহিবুল্লাহই মিয়ানমারের পররাষ্ট্র সচিবকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সংলাপের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। ২০১৯ সালের জুলাইয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ১৭ দেশের যে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ২৭ প্রতিনিধি সাক্ষাৎ করেন সেখানেও যোগ দেন মুহিবুল্লাহ।
রোহিঙ্গাদের একটি সূত্র দাবি করেছে, ক্যাম্পগুলোতে মুহিবুল্লাহ বিরোধী অন্য একটি সশস্ত্র গ্রুপও সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু আন্তর্জাতিকভাবে মুহবিল্লাহর সুসম্পর্ক থাকায় আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যানরাইটস লাইমলাইটে ছিল। এ কারণে সাধারণ রোহিঙ্গারা মুহিবুল্লাহ প্রেমি হয়ে উঠে। বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের সম্মানজনক প্রত্যাবাসন দাবি করে এসেছে মুহিবুল্লাহ। এ কারণে মিয়ানমার সরকারেরও কালো তালিকায় ছিলেন তিনি।