কোভিড সংক্রমণের ছয় মাস পরেও উপসর্গ দেখা দেয় ৩৭ শতাংশ ব্যক্তির ক্ষেত্রে
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত তিনজনের মধ্যে একজন ব্যক্তি লং কোভিডের অন্তত একটি উপসর্গ অনুভব করেন বলে নতুন একটি গবেষণায় দেখা গেছে।
প্রায় ৩৭ শতাংশ রোগী সংক্রমণের তিন থেকে ছয় মাস পরে অন্তত একটি উপসর্গ অনুভব করতে পারেন। এরমধ্যে সাধারণ উপসর্গগুলো হলো- শ্বাসকষ্ট, পেটের সমস্যাজনিত লক্ষণ, ক্লান্তি, ব্যথা এবং উদ্বেগ বা বিষণ্ণতা।
এ বিষয়ে বেশ কয়েকটি গবেষণা পরিচালিত হলেও এতে নতুন মাত্রা যোগ করলো অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদল, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর হেলথ রিসার্চ (এনআইএইচআর) এবং অক্সফোর্ড হেলথ বায়োমেডিক্যাল রিসার্চ সেন্টার (বিআরসি)। কোভিড-১৯ থেকে সুস্থ হওয়া দুই লাখ ৭০ হাজার মার্কিন নাগরিকের তথ্য বিশ্লেষণ করে এ গবেষণা চালান তারা।
এনআইএইচআর-এর একাডেমিক ক্লিনিক্যাল ফেলো ডা. ম্যাক্স টাকেট বলেন, "গবেষণা থেকে বোঝা যায়, কোভিড-১৯ সংক্রমণের ছয় মাসের মধ্যে প্রায় সব বয়সের মানুষই একটি উল্লেখযোগ্য অনুপাতে বিভিন্ন উপসর্গ এবং অসুবিধার সম্মুখীন হতে পারেন।"
মার্কিন ভিত্তিক ট্রাইনেটএক্স ইলেকট্রনিক হেলথ রেকর্ড নেটওয়ার্কের তথ্য অনুযায়ী, সংক্রমণের তীব্রতা, বয়স এবং লিঙ্গভেদে এসকল লক্ষণের মাত্রা পরিবর্তিত হয়।
এছাড়া, পিএলওএস মেডিসিন জার্নালে প্রকাশিত গবেষণায় দেখা গেছে, যারা হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন তাদের মধ্যে লং কোভিডের লক্ষণগুলো প্রায়শই দেখা গেছে। নারীদের ক্ষেত্রে এটি বেশি দেখা যায়।
শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা বেশি দেখা গেছে বয়স্ক এবং পুরুষদের ক্ষেত্রে। অন্যদিকে, তরুণ এবং নারীদের ক্ষেত্রে মাথাব্যথা, পেটের সমস্যাজনিত লক্ষণ এবং উদ্বেগ বা বিষণ্ণতার লক্ষণ দেখা গেছে বেশি।
গবেষণায় দেখা যায়, হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের 'ব্রেইন ফগ' এবং ক্লান্তির মতো সমস্যায় ভোগার সম্ভাবনা বেশি থাকে। আবার, যাদের হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন পড়ে নি, তাদের ক্ষেত্রে মাথাব্যথার সমস্যা বেশি দেখা গেছে।
অনেক রোগীর ক্ষেত্রে লং কোভিডের একাধিক লক্ষণ দেখা গেছে বলেও জানিয়েছেন গবেষকরা।
এছাড়া, ফ্লুতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যেও কোভিডে আক্রান্ত কিছু রোগীর মতো লক্ষণ দেখা দিতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়েছে গবেষণায়।
গবেষকরা অনুমান করছেন, লং কোভিডের সাথে সম্পর্কিত লক্ষণগুলো ফ্লু-তে আক্রান্ত ব্যক্তিদের তুলনায় কোভিডে আক্রান্তদের মধ্যে বেশি দেখা গেছে। কোভিডে আক্রান্তদের মধ্যে এ হার ৫০ শতাংশ সাধারণ।
ক্লিনিকাল ডেটা সায়েন্সের অধ্যাপক এবং ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের অনারারি কনসালট্যান্ট কার্ডিওলজিস্ট প্রফেসর অমিতাভ ব্যানার্জি বলেন, "এটি একটি সু-পরিচালিত এবং পুঙ্খানুপুঙ্খ গবেষণা।"
তবে, তিনি এ গবেষণায় জড়িত ছিলেন না।
প্রফেসর ব্যানার্জি বলেন, "সংক্রমণের ছয় মাসের মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি (৫৭ শতাংশ) রোগীর লং কোভিডের কমপক্ষে একটি লক্ষণ রেকর্ড করা হয়। এছাড়া, রোগ নির্ণয়ের ৯০ থেকে ১০০ দিন পর অন্তত এক-তৃতীয়াংশ (৩৭ শতাংশ) ব্যক্তির দেহে এসকল লক্ষণ দেখা দিয়েছে।"
তবে, এ গবেষণার কতিপয় সীমাবদ্ধতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, গবেষণায় কেবল ৯টি সাধারণ লক্ষণ নিয়েই কাজ করা হয়েছে, যেখানে এর আগে কোভিড সংক্রান্ত প্রায় ২০০টি লক্ষণের কথা প্রকাশিত হয়েছিল। কিন্তু নতুন গবেষণাটি কোভিড-১৯ এবং সাধারণ ফ্লু এর মধ্যকার পার্থক্য স্পষ্ট করে তুলে ধরে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
এদিকে, মঙ্গলবার প্রকাশিত পৃথক এক গবেষণায় দেখা গেছে, মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ১০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে অন্তত একজনের বেশি শিক্ষার্থী এবং ইংল্যান্ডে কোভিডে আক্রান্ত স্কুল-কর্মীদের এক-তৃতীয়াংশ ব্যক্তি সাধারণ উপসর্গের শিকার হয়েছেন।
কর্মীদের এবং শিক্ষার্থীদের রিপোর্ট অনুযায়ী সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণ ছিল দুর্বলতা বা ক্লান্তি। এছাড়া, অফিস ফর ন্যাশনাল স্ট্যাটিস্টিকসের (ওএনএস) গবেষণায় দেখা যায়, শিক্ষার্থীদের তুলনায় কর্মীদের মধ্যে শ্বাসকষ্টে ভোগার সংখ্যা বেশি।
ওএনএস-এর অনুমান অনুযায়ী, যুক্তরাজ্যের নয় লাখ ৭০ হাজার মানুষের দেহে কোভিড সংক্রমণের পরে ক্রমাগত বিভিন্ন লক্ষণ দেখা দিচ্ছে।
এছাড়া, ভুক্তভোগীদের নিজস্ব রিপোর্টের ভিত্তিতে, তিন লাখ ৮৪ হাজার মানুষ সংক্রমণের এক বছর পরেও কোভিডের উপসর্গ নিয়ে বসবাস করছে।
- সূত্র- দ্য গার্ডিয়ান