রিংআইডি প্রতারণার অর্থ ই-ওয়ালেটে বিনিয়োগ করতে চেয়েছিল
গ্রাহকদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া শত শত কোটি টাকার একটি বড় অংশ পেমেন্ট সার্ভিস সেবাদানের ব্যবসায় বিনিয়োগ করতে চেয়েছিল বিতর্কিত অনলাইন প্ল্যাটফর্ম রিংআইডি।
এজন্য রিংপেবিডি লিমিটেড নামের তাদের ই-ওয়ালেট পরিষেবাকে পরীক্ষামূলক অনুমতিও দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে, রিংআইডি নিয়ে দেশজুড়ে সমালোচনা শুরু হলে তড়িঘড়ি করে গত ২৬ সেপ্টেম্বর এই অনাপত্তিপত্র বাতিল করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)-র হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক সাইফুল ইসলাম এমন তথ্য জানিয়েছেন।
সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টারের বিশেষ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রেজাউল মাসুদ টিবিএস'কে বলেন, তারা জিজ্ঞাসাবাদে জানতে পেরেছেন গ্রাহকের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয়া শত কোটি টাকা ই-ওয়ালেট বা মোবাইল ব্যাংকিংয়ে বিনিয়োগ করতে চেয়েছিল রিংআইডি।
"পঞ্জি স্কিম মেথডে সাধারণত এক জনের টাকা নিয়ে আরেকজনকে মুনাফা দেয়া হয়, রিংআইডিও সেই পথে হাঁটছিল। তবে এক পর্যায়ে তারা আইডি কেনাবেচা ও ভার্চুয়াল কয়েন কেনাবেচা বন্ধ করে দেয়। কারণ তারা বুঝতে পেরেছিল, এভাবে বেশিদিন আর গ্রাহককে টাকা/মুনাফা দেওয়া সম্ভব হবে না। সে কারণে তারা আত্মসাৎ করা অর্থ ই-ওয়ালেটে বিনিয়োগ করতে চেয়েছিল।"
সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টারের আরেক কর্মকর্তা বলেন, রিংপে নামের ই-ওয়ালেট প্রতিষ্ঠা করতে তারা নিকেতনে প্রায় ৭০,০০০ হাজার বর্গফুটের অফিস ভাড়া নেন, একই সাথে লোকবল নিয়োগ ও অনান্য কার্যক্রম গোছাতে থাকে।
এদিকে, বাংলাদেশ ব্যাংক সিটি ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে পাঠানো এক চিঠিতে বলে, রিংপে বিডি লিমিটেডকে গত বছরের ৮ মার্চ পেমেন্ট সার্ভিস প্রোভাইডার (পিএসপি) হিসেবে ই-ওয়ালেট সেবা প্রদানের লক্ষ্যে অবকাঠামো প্রস্তুতকরণ ও বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করার জন্য অনান্য কার্যাদি সম্পন্ন করে এক বছরের মধ্যে লাইসেন্স গ্রহণের জন্য অনাপত্তিপত্র প্রদান করা হয়। নির্ধারিত সময়ে অবকাঠামো প্রস্তুতকরণ ও বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করতে ব্যর্থ হওয়ায় ও উক্ত অনাপত্তিপত্র (এনওসি)-এর সময়সীমা অতিবাহিত হওয়ায় রিংপে বিডি লিমিটেডের অনুকূলে প্রদত্ত অনাপত্তিপত্রটি বাতিল করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেম বিভাগের মহাব্যবস্থাপক মেজবাহউদ্দিন টিবিএস'কে বলেন, অনাপত্তিপত্র দেয়ার এক বছরের মধ্যে পেমেন্ট সার্ভিস প্রোভাইডার হিসেবে ই-ওয়ালেট পরিচালনা করার জন্য লাইসেন্স নিতে হয়। তবে, অনাপত্তি দেয়ার প্রায় দেড় বছর পেরিয়ে গেলে্ কোন অবকাঠামো তৈরি করতে পারেনি বলে তাদের অনাপত্তিপত্র বাতিল করা হয়। তবে, হঠাৎ করে কেনই বা রিংআইডি নিয়ে সমালোচনার পর, অনাপত্তিপত্র বাতিল করা হলো- সে বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি বাংলাদেশ ব্যাংকের এই কর্মকর্তা।
হাজারো কোটি টাকা লোপাট, বেশিরভাগ ভুক্তভোগী প্রবাসী:
সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রেজাউল মাসুদ বলেছেন, রিংআ্ইডির নামে তিনটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে চলতি বছরের তিন মাসে--মে-জুলাই প্রায় ২১৩ কোটি টাকা তুলে নেয়ার প্রমাণ পেয়েছেন তারা। এর মধ্যে মে মাসে ২৩.৯৪ কোটি, জুন মাসে ১০৯.৩৩ কোটি ও জুলাই মাসে ৭৯.৩৮ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। এর বাইরে পেমেন্ট গেটওয়ে সিস্টেমেও প্রায় ৩০২ কোটি টাকার মতো লেনদেন হয়েছে বলেও প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা গেছে।
"শুধু তিন মাসেই যখন এত বিপুল পরিমাণ টাকা তুলে নেয়া হয়েছে, তাতে করেই বোঝা যায় আত্মসাতের পরিমাণটা এক বছরে হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে। তবে, আমরা যে হিসাব পেয়েছি, তা শুধু রিংআইডির নামে থাকা ব্যাংক হিসাবের তথ্য। এর বাইরে, প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান শরীফুল ইসলাম, তার স্ত্রীর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আইরিন ইসলাম ও পরিচালক সাইফুল ইসলামসহ আরো বেশ কয়েকজনের ব্যক্তিগত ব্যাংক অ্যাকউন্টের তথ্য চেয়ে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টিলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)-কে চিঠি দিয়েছি। সব ব্যাংক তথ্য পাওয়া গেলে পুরো লোপাটের পরিমাণ জানা যাবে। তবে এরই মধ্যে কোম্পানির নামে থাকা তিনটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করা হয়েছে, যেখানে প্রায় ১৫০ কোটি টাকা রয়ে গেছে," যোগ করেন তিনি।
সিআইডির এই কর্মকর্তা আরো জানান, পরিচালক সাইফুল ইসলামকে গ্রেপ্তারের পর থেকেই তারা ভুক্তভোগীদের ফোন পাচ্ছেন। বেশিরভাগ কলই আসছে প্রবাসীদের থেকে।
রিংআইডির মামলার তদন্ত তদারককারী কর্মকর্তা বিশেষ পুলিশ সুপার আশরাফুল আলম টিবিএস'কে বলেন, "জিজ্ঞাসাবাদে তারা আত্মসাৎ করা টাকার গন্তব্য জানার চেষ্টা করছেন । কোম্পানির চেয়ারম্যান ও এমডি বেশ কয়েক বছর ধরেই কানাডা অবস্থান করায় টাকা সেখানে পাচারেরও সম্ভাবনা দেখছেন তারা।"
প্রায় ১ হাজারের বেশি ব্র্যান্ড প্রোমোটার, ৬০০-৭০০ এজেন্ট ও ১.৫ লাখ আইডি, প্রায় দুই কোটি সদস্য থাকায় বিদেশি বিনিয়োগও আনতে চেষ্টা করেছিলও শরীফুল-আইরিন দম্পতি।
আশরাফুল আরও জানান, প্রায় ১ হাজারের বেশি ব্র্যান্ড প্রোমোটার, ৬০০-৭০০ এজেন্ট ও ১.৫ লাখ আইডি, প্রায় দুই কোটি সদস্য থাকায় বিদেশি বিনিয়োগও আনতে চেষ্টা করেছিলেন শরীফুল-আইরিন দম্পতি।