কাবুলে ড্রোন হামলা: নিহতদের স্বজনদের ক্ষতিপূরণ দিতে চায় যুক্তরাষ্ট্র
আফগানিস্তানের কাবুলে মার্কিন সেনাবাহিনীর ড্রোন হামলায় নিহত ১০ বেসামরিক নাগরিকের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রস্তাব করেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত ২৯ আগস্ট আইএস সদস্য সন্দেহে রাজধানী কাবুলের একটি গাড়িতে ওই হামলা চালান মার্কিন সৈন্যরা।
ড্রোন হামলায় নিহতদের মধ্যে ছিলেন ত্রাণসহায়তাকর্মী জামাইরি আহমাদি এবং তার পরিবারের ৯ সদস্য, যাদের মধ্যে সাতজনই ছিল শিশু। এই হামলাকে 'ভুল' হিসেবে স্বীকার করেছে যুক্তরাষ্ট্র। পেন্টাগন আরও জানায়, পরিবারের বেঁচে যাওয়া সদস্যদের যুক্তরাষ্ট্রে পুনর্বাসিত করতে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে তারা।
বৃহস্পতিবার মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগের আন্ডার-সেক্রেটারি কলিন কাল এবং নিহত জামাইরি আহমাদির নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠান 'নিউট্রিশন অ্যান্ড এডুকেশন ইন্টারন্যাশনাল'-এর প্রতিষ্ঠাতা, স্টিভেন কোউনের মধ্যে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে ক্ষতিপূরণের সিদ্ধান্ত জানায় যুক্তরাষ্ট্র।
মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জন কিরবির মাধ্যমে দেওয়া এক বিবৃতিতে কলিন জানান, নিহত আহমাদি ও তার পরিবারের বাকি সদস্যরা নিরপরাধ ছিলেন। আইএস-কে'র বা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য হুমকিস্বরূপ, এমন কোনো সংগঠনের সাথে তারা যুক্ত ছিলেন না।
নিহত আহমাদির ২২ বছর বয়সী ভাগ্নে ফারশাদ হায়দারির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা সচিব লয়েড অস্টিন। কিন্তু হায়দারি জানিয়েছেন, ক্ষমা প্রার্থনা করাই যথেষ্ট নয়। বার্তা সংস্থা এএফপিকে তিনি বলেন, "তাদের অবশ্যই এখানে সরাসরি এসে ক্ষমা চাইতে হবে।"
তালেবানরা দ্রুত আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নিতে থাকায়, ভীতসন্ত্রস্ত্র সাধারণ জনতা দেশত্যাগের জন্য কাবুল বিমানবন্দরে হাজির হন। ২৬ আগস্ট বিমানবন্দর এলাকায় ভয়াবহ আত্মঘাতী বোমা হামলায় ১৭০ বেসামরিক নাগরিকসহ ১৩ মার্কিন সেনা নিহত হয়। ইসলামিক স্টেট (আইএস)-এর আফগানিস্তান শাখা, 'আইএস-কে' এই হামলার দায় স্বীকার করে। এর মাত্র কয়েকদিন পরেই মার্কিন সেনাবাহিনী তাদের ড্রোন হামলাটি চালায়।
গত মাসে ইউএস সেন্ট্রাল কমান্ডের জেনারেল ম্যাকেঞ্জি বলেন, ২৯ আগস্ট ড্রোন হামলা চালানোর আগে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দারা ত্রাণসহায়তা কর্মীর গাড়িকে কোনো আইএস সদস্যের গাড়ি ভেবে আট ঘন্টা ধরে নজরদারিতে রেখেছিলেন।
কাবুল বিমানবন্দর থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে আহমাদির গাড়িতে হামলা করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের তদন্তে দেখা যায়, আহমাদির গাড়িটি আইএস-কে সংশ্লিষ্ট একটি অঞ্চলে দেখা গিয়েছিল। কাবুল বিমানবন্দরে আইএস-কে'র হামলার পরিকল্পনার সাথে অন্যান্য গোয়েন্দাদের দেওয়া তথ্য মিলিয়েই ড্রোন হামলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। এক পর্যায়ে পর্যবেক্ষণ ড্রোন দেখতে পায়, একজন লোক গাড়ির বুটে (পেছনের অংশ) বিস্ফোরক পদার্থ জাতীয় কিছু একটা তুলছেন। কিন্তু হামলা শেষে জানা যায়, সেগুলো ছিল শুধুই পানির কন্টেইনার।
এই ঘটনাকে 'মর্মান্তিক ভুল' বলে স্বীকার করেছেন জেনারেল ম্যাকেঞ্জি। তিনি আরও জানান, ড্রোন হামলার ব্যাপারে তালেবানের কাছ থেকে কোনো তথ্য নেয়নি মার্কিন গোয়েন্দারা।
তবে গাড়িটি দ্বিতীয় দফায় আরেকবার বিস্ফোরিত হওয়ায় মার্কিন সৈন্যরা দাবি করেছেন, গাড়িতে বিস্ফোরক দ্রব্য ছিল।
হামলায় নিহতদের মধ্যে একজন, আহমাদ নাসের খোদ মার্কিন সেনাবাহিনীর সঙ্গেই দোভাষী হিসেবে কাজ করেছেন। পরিবারের বাকি প্রাপ্তবয়স্ক সদস্যরাও আগেপরে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে কাজ করেছেন।
- সূত্র: বিবিসি