লাখ লাখ ডোজ কোভিড ভ্যাকসিন বাতিল করছে যুক্তরাষ্ট্র
বিশ্বের অনেক দেশ যেখানে কোভিড মোকাবেলায় দিশেহারা, সেসময় ভ্যাকসিনের লক্ষাধিক ডোজ নষ্ট করছে যুক্তরাষ্ট্র।
দেশটির সেন্টার্স ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (সিডিসি) তথ্যের ভিত্তিতে, এ বছরের মার্চ থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে ভ্যাকসিনের কমপক্ষে ১৫ মিলিয়ন ডোজ বাতিল করে যুক্তরাষ্ট্র। এছাড়া, অন্য একটি তদন্তে দেখা গেছে, গত ডিসেম্বর থেকে জুলাইয়ের মধ্যে দেশটির ১০টি রাজ্যে ভ্যাকসিনের ১ মিলিয়ন ডোজ বাতিল করা হয়েছিল।
অব্যবহৃত ভ্যাকসিন ফেলে দেওয়ার এই চল রাজ্যগুলোতে এখনো চলছে। লুইজিয়ানা ইতোমধ্যে ২ লাখ ২৪ হাজার ডোজ ভ্যাকসিন ফেলে দিয়েছে। জুলাইয়ে এই রাজ্যে করোনাভাইরাসের চতুর্থ ঢেউ শুরু হলেও, মাসের শেষে ভ্যাকসিন বাতিল করার হার বেড়েছে প্রায় তিনগুণ।
যে কাঁচের বোতলে ভ্যাকসিন থাকে, সেগুলো একবার খোলার পর পুরোটা শেষ করতে হয়। যেসব বোতল শেষ করা হয়নি, সেগুলো বাতিল করে দেওয়া হয়। তবে, ২০ হাজারেরও বেশি ডোজ ভ্যাকসিন মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার কারণে ফেলে দেওয়া হয়েছে।
এদিকে, উইসকনসিনে প্রতিদিন হাজারও ডোজ নষ্ট হয় বলে জানা গেছে। অন্যদিকে, অ্যালাবামায় বাতিল করা হয়েছে ৬৫ হাজার ডোজ, এবং টেনেসিতে প্রায় দুই লাখ ডোজ।
করোনাভাইরাস মহামারি চলাকালে বিশ্বব্যাপী লাখো মানুষ এখনো ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ নেওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন। এ বছরের জুলাই পর্যন্ত স্বল্প আয়ের দেশগুলোর জনসংখ্যার মাত্র ১ শতাংশ ভ্যাকসিন নিতে পেরেছে; যেখানে উচ্চ আয়ের দেশগুলোর জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক জুলাইয়ের মধ্যে ভ্যাকসিনের অন্তত প্রথম ডোজ পেয়েছে।
তবে ফেলে দেওয়া ডোজগুলোর মধ্যে বেশিরভাগই এসেছে ফার্মেসি থেকে। মার্কিন রাজ্য, বা অঞ্চল এবং ফেডেরাল এজেন্সিগুলোর চেয়ে বেশি, প্রায় তিন-চতুর্থাংশ ডোজ অপচয় করেছে দুটি ফার্মেসি চেইন। এছাড়া, চারটি প্রধান ফার্মেসি- ওয়ালগ্রিনস, সিভিএস, ওয়ালমার্ট এবং রাইট এইড কমপক্ষে ৭.৬ মিলিয়ন ডোজ ভ্যাকসিন নষ্ট করেছে।
ভ্যাকসিনের ডোজ নষ্ট হওয়ার পেছনে একাধিক কারণ রয়েছে। অনেক সময় কাঁচের বোতলগুলো ফেটে যায় কিংবা বোতলে যতটুকু ভ্যাকসিন থাকার কথা, ততটুকু থাকে না। এছাড়াও, সূঁচের ত্রুটি, ফ্রিজার ভেঙে যাওয়া অথবা বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার কারণেও ব্যবহার করা যায় না ভ্যাকসিন। অনেক সময় অ্যাপয়েন্টমেন্টের লোকেরা উপস্থিত না হলে তাদের জন্য নির্ধারিত ডোজ আর ব্যবহার করা যায় না।
এনবিসি নিউজ জানায়, জুনের আগে ২ মিলিয়ন ডোজ ভ্যাকসিন নষ্ট হয়েছিল। কিন্তু ভ্যাকসিনের মেয়াদ শেষ হওয়ার পাশাপাশি ভ্যাকসিন নেওয়ার হার কমে যাওয়ায় বর্তমানে বাতিলকরণের হার বেড়ে গিয়েছে।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রে ভ্যাকসিনের মজুদকে বুস্টার ডোজের জন্য ব্যবহার করতে নির্দেশ দিয়েছে বাইডেন প্রশাসন। প্রতিটি বোতলে ডোজের সংখ্যা কমাতে ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারকদের সঙ্গেও কাজ করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
তবে এসব অব্যবহৃত ভ্যাকসিন দান করা সহজ নয়। সঠিকভাবে সংরক্ষণের বিষয়টি মাথায় রেখে রাজ্যগুলোতে বিতরণ করা ভ্যাকসিন আন্তর্জাতিকভাবে বিতরণ সম্ভব নয়।
এদিকে, আগামী বছর বিশ্বের ৭০ শতাংশ মানুষকে ভ্যাকসিন বিতরণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এছাড়া, বিদেশে ব্যবহারের জন্য কয়েক মিলিয়ন ডোজ দান করার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন তিনি।
দেশটির প্রশাসন বলছে, বিশ্বব্যাপী ঘাটতি মেটাতে নির্মাতাদেরও ভ্যাকসিন উৎপাদন বাড়াতে হবে। বাইডেন প্রশাসনের চিফ সায়েন্স অফিসার ডেভিড ক্যাসলার মডার্নার উদাহরণ দিয়ে বলেন, বিশ্বব্যাপী ভ্যাকসিন উৎপাদনের ক্ষেত্রে 'একটি কোম্পানি হিসেবে এগিয়ে যেতে হবে' তাদের।
-
সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান