ঢাকার বেড়িবাঁধ সড়কে চার লেনের রাস্তা নির্মাণ করবে সরকার
অতিরিক্ত যানজটের কথা বিবেচনা করে ঢাকার তুরাগ নদীর তীরবর্তী বেড়িবাঁধ সড়ককে প্রশস্ত করতে যাচ্ছে সরকার। আবদুল্লাহপুর থেকে গাবতলী পর্যন্ত বিস্তৃত এই এক লেনের রাস্তাটিকে চার লেনের এক্সপ্রেসওয়েতে উন্নীত করা হবে।
সড়কের ধৌর-গাবতলী অংশটিতে চার লেনের রাস্তা নির্মাণের জন্য একটি প্রকল্পের প্রস্তাব করেছে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ। আর সড়কের আবদুল্লাহপুর-ধৌর অংশটি বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের অধীনস্থ ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের আওতায় পড়বে।
সওজ বিভাগ ইতোমধ্যেই ধৌর থেকে গাবতলী পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার রাস্তাকে চার লেনে রূপান্তরিত করার সম্ভাব্যতা যাচাই করেছে। তাদের প্রস্তাব শীঘ্রই জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) কাছে পেশ করা হবে।
সওজ'র অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো সবুজ উদ্দিন খান বলেন, "আমরা প্রথমে ১৪ কিলোমিটার রাস্তার জন্য ১,২০০ কোটি টাকা ব্যয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলাম, কিন্তু এই সংখ্যা কমতে পারে।"
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে শুধু চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় থাকা প্রকল্পটির কাজ এক বছরের মধ্যে শুরু হয়ে যেতে পারে।
এদিকে সেতু কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণাধীন ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের কাজ বর্তমানে চলমান। হযরত শাহজাহাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে শুরু হওয়া এই ২৪ কিলোমিটার এক্সপ্রেসওয়ে আবদুল্লাহপুর-আশুলিয়া-বাইপাইল হয়ে সাভারের এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোনে (ইপিজেড) গিয়ে শেষ হবে।
প্রকল্প পরিচালক শাহাবুদ্দিন খান বলেন, "বর্তমানে আমরা সব ধরনের প্রাথমিক কাজ সম্পন্ন করছি এবং আগামী মাসে প্রকল্পের মূল কাজ শুরু হবে।"
২০২৬ সালের মধ্যে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে চালু হয়ে যাবে, এই আশা ব্যক্ত করে তিনি বলেন, "আমরা নির্ধারিত সময়ের এক বছর আগেই, অর্থাৎ চার বছরের মধ্যে কাজটি শেষ করার পরিকল্পনা করেছি।"
শাহাবুদ্দিন খান আরও বলেন, মোট প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছে ১৬,৯০১ কোটি টাকা, যার মধ্যে চীন দেবে ৬৫ শতাংশ। চীনা এক্সিম ব্যাংক ইতোমধ্যেই ১০২ কোটি মার্কিন ডলার ঋণের অনুমোদন দিয়েছে।
প্রকল্পের অধীনে ১০ দশমিক ৮৩ কিলোমিটার র্যাম্প, ১ দশমিক ৯৫ কিলোমিটার ফ্লাইওভার, ১৪ দশমিক ২৮ কিলোমিটার চার লেনের রাস্তা, ২ দশমিক ৭২ কিলোমিটার দীর্ঘ সেতু এবং এক্সপ্রেসওয়ের দুই পাশে ১৮ কিলোমিটার ড্রেন নির্মাণের কথা রয়েছে।
এটি এক্সপ্রেসওয়ে ৩০টি জেলার প্রায় চার কোটি মানুষকে দ্রুত এবং সহজে রাজধানীতে ঢুকা ও বের হওয়ার সুযোগ করে দিবে। প্রকল্পের গবেষণাপত্রে অনুমান করা হয়েছে, এটি দেশের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) দশমিক ২১ শতাংশ বৃদ্ধি করতে পারে।
ধারণা করা হচ্ছে, প্রচুর সংখ্যক যানবাহন এবং মানুষের চলাচলের ব্যবস্থা করা ছাড়াও চার লেনের রাস্তাটি দুর্ঘটনা কমাতে সাহায্য করবে। গত কয়েক বছরে বেড়িবাঁধ সড়কটি একটি দুর্ঘটনা প্রবণ এলাকায় পরিণত হয়ে পড়েছে বলে জানা গেছে।
স্থানীয়দের মতে, গত এক দশক ধরে এই সড়কে যানবাহন চলাচল অনেকগুণে বেড়েছে এবং একসময় শহর থেকে একরকম বিচ্ছিন্ন থাকা এলাকাটি এখন সব ধরনের যানবাহন সমৃদ্ধ একটি ব্যস্ত সড়কে পরিণত হয়েছে।
একটি স্থানীয় চা স্টলের মালিক আয়নাল মিয়া বলেন, মাত্র ১০ বছরে যানবাহন চলাচল শতগুণ বেড়েছে। সময়ের সাথে সাথে অনেক কারখানা, আবাসিক এলাকা, পার্ক এবং বিনোদন কেন্দ্র বেড়িবাঁধ সড়কের পাশে বেড়ে উঠেছে।
দুর্ঘটনার সংখ্যাও প্রতি বছর বেড়ে চলেছে বলে জানান আয়নাল।
ধৌর পুলিশ বক্সের ডিএমপি সার্জেন্ট মো আসাদুজ্জামান বলেন, "প্রতি মাসে এখানে কমপক্ষে ১০টি দুর্ঘটনা ঘটে এবং এর মধ্যে দুটি বা তিনটি ভয়াবহ। এছাড়া অন্যান্য ছোট দুর্ঘটনাও ঘটে যেগুলো রিপোর্ট করা হয় না।"
ডিভাইডারবিহীন সরু রাস্তা, চালকদের ঘন ঘন ওভারটেক করার প্রবণতা এবং বেপরোয়া গাড়ি চালানোকে দুর্ঘটনার এই উচ্চ সংখ্যার পিছনে প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছে স্থানীয় ট্রাফিক বিভাগ।
"ডিভাইডারবিহীন ২৫-৩০ ফুটের সিঙ্গেল-লেন সড়কের কারণে এ এলাকায় মুখোমুখি সংঘর্ষের হার বেড়ে যায়," যোগ করেন আসাদুজ্জামান।
তিনি আরও জানান, বেশিরভাগ দুর্ঘটনাই রাতে বা ভোরে ঘটে, যখন চালকদের ট্রাফিক নিয়ম ভাঙার প্রবণতা বেশি থাকে।
আরেক সার্জেন্ট আকরামুল রাজিব চার লেনের প্রস্তাবিত রাস্তাটি দুর্ঘটনার সংখ্যা এবং হার কমাতে সাহায্য করবে বলে আশা প্রকাশ করেন।