পরীমনির রিমান্ড: হাইকোর্টের কাছে ক্ষমা চাইলেন ২ বিচারক
একটি মাদক মামলায় অভিনেত্রী পরীমনিকে বেশ কয়েকবার রিমান্ডে দেওয়ার ঘটনায় আজ (রোববার) হাইকোর্টের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন নিম্ন আদালতের দুই বিচারক।
এর আগে, গত ৪ আগস্ট রাজধানীর বনানীর বাসায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার এবং তার বিরুদ্ধে একটি মাদক মামলা করে র্যাব।
এরপর তার জামিনের আবেদন বেশ কয়েকবার খারিজ হয়ে যায় এবং তাকে ২৭ দিন কাটাতে হয় কারবন্দি অবস্থায়। এ সময়ে বিচারক দেবব্রত বিশ্বাস ও আতিকুল ইসলাম তিনবার অভিনেত্রীকে রিমান্ডে নেওয়ার আদেশ দেন।
আজ ওই দুই বিচারক তাদের আইনজীবীর মাধ্যমে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বিভাগে বিনাশর্তে ক্ষমাপ্রার্থনা করেন বলে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে নিশ্চিত করেছেন তাদের আইনি পরামর্শক আব্দুল আলীম মিয়া জুয়েল। আজ এ ব্যাপারে শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।
বলে রাখা ভালো, তিন দফা রিমান্ডের পর জামিন আবেদনের শুনানি শেষে ৩১ আগস্ট দুপুরে ৫০ হাজার টাকার আর্থিক মুচলেকায় পরীমনির জামিন আদেশ দেন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কেএম ইমরুল কায়েস। জামিনের কাগজপত্র কারাগারে পৌঁছানোর পর পরদিন সকাল সাড়ে নয়টার দিকে কাশিমপুর কারাগার থেকে ছাড়া পান পরীমনি।
সর্বশেষ গত ১৯ আগস্ট পরীমনির জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে তৃতীয় দফায় ১ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছিলেন সিএমএম আদালত। সিএমএম আদালতের জামিন নামঞ্জুরের ওই আদেশের বিরুদ্ধে গত ২২ আগস্ট মহানগর দায়রা জজ আদালতে পরীমনির পক্ষে জামিন আবেদন দাখিল করা হয়। বিচারক ১৩ সেপ্টেম্বর জামিন আবেদনের শুনানির দিন ঠিক করেন। জামিন শুনানির দিন আগামী ১৩ সেপ্টেম্বর ২১ দিন বিলম্বে ধার্য্য হওয়ায় তা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে আবেদন করেন পরীমনির আইনজীবী জেডআই খান পান্না ও মো. মজিবুর রহমান।
গত ২৬ আগস্ট হাইকোর্ট ২ দিনের মধ্যে কেন জামিন শুনানির নির্দেশ দেওয়া হবে না এই মর্মে বিচারক কেএম ইমরুল কায়েসকে ১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে কারণ দর্শানোর রুল জারি করেন।
বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম এবং বিচারপতি কেএম জাহিদ সারওয়ার কাজলের বেঞ্চ ওই আদেশ প্রদান করেন। হাইকোর্টের ওই আদেশ পাওয়ার পর বিচারক ইমরুল কায়েস হাইকোর্টের রুলের জবাব দেওয়ার আগেই ৩১ আগস্ট জামিন শুনানির তারিখ পুনঃনির্ধারণ করেন।
এদিকে, চিত্রনায়িকা পরীমনিকে তিন দফা রিমান্ডে নেওয়ার ঘটনায় প্রশ্ন তুলে হাইকোর্ট দুই ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে ব্যাখ্যা চান ৮ সেপ্টেম্বর। পরবর্তী ১০ দিনের মধ্যে তাদের ব্যাখ্যা জমা দিতে বলা হয়েছিল।
হাইকোর্ট সেদিন বলেন, মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) আবেদনের শুনানিতে সন্তোষজনক ব্যাখ্যা দিতে ব্যর্থ হলে দুই ম্যাজিস্ট্রেটকে আদালতে হাজির হতে হবে।
পরীমনিকে বারবার রিমান্ডে নেওয়ার বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে এ সংক্রান্ত নথি ও তদন্ত কর্মকর্তাকে তলব করেন হাইকোর্ট। ১৫ সেপ্টেম্বর শুনানির দিন নির্ধারণ করা হয়।
এছাড়া মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এবং পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) পরিদর্শক কাজী গোলাম মোস্তফাকেও ১৫ সেপ্টেম্বর মামলার নথিসহ (কেস ডকেট) আদালতে হাজির হতে বলা হয়।
বলে রাখা ভালো, জামিন অযোগ্য অপরাধের ক্ষেত্রে সাধারণত আদালতগুলোয় অভিযুক্ত বা অপরাধীকে বেশকিছু বিষয় বিবেচনা করে জামিনের আদেশ দেওয়া হয়ে থাকে। ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৯৬ ও ৪৯৭ ধারায় জামিন বিষয়ে বলা হয়েছে।
জামিন অযোগ্য অপরাধের ক্ষেত্রে, গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তি জামিনের অধিকারী নয়, এর অর্থ এটি নয় যে, তার জন্য আর কোনো সুযোগ বাকি নেই। জামিন অযোগ্য অপরাধ সত্ত্বেও যদি অভিযুক্তের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডযোগ্য অপরাধের প্রমাণ পাওয়া না যায় তাহলে তিনি জামিনে মুক্তি পেতে পারেন; এমনকি অভিযুক্তের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডযোগ্য অপরাধ সংঘটনের যুক্তিসঙ্গত কারণ পাওয়া সত্ত্বেও অভিযুক্ত অতিরিক্ত সুযোগ লাভ করতে পারেন যদি তিনি নারী, শিশু কিংবা অসুস্থ ব্যক্তি হন।
এর অর্থ দাঁড়ায়, এমনকি একজন অভিযুক্তকেও তার জীবন ও ব্যক্তিগত স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত করা যাবে না। এটি সুষ্ঠু বিচার প্রক্রিয়ায় অন্যতম মৌলিক নিয়ম।
অন্যদিকে, গুরুতর প্রকৃতির অপরাধের ক্ষেত্রেই সাধারণত অভিযুক্তদের দীর্ঘ সময় রিমান্ডে নেওয়া হয়ে থাকে। কিন্তু পরীমনিকে তিন দফায় সাত দিনের মধ্যে প্রথমে চারদিন, দ্বিতীয় দফায় দুইদিন ও তৃতীয় দফায় একদিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। জাতীয় নিরাপত্তা বা জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়েই গুরুতর মামলায় আদালতের এতদিনের রিমান্ডের অনুমতি দিতে দেখা যায়।
পরীমনির কাছে ১৮ লিটার মদ এবং এলএসডি পাওয়ার যে অভিযোগ এসেছে তাতে ফৌজদারী কার্যবিধির ৪৯৬ ধারা অনুসারে তিনি জামিনের অধিকারী ছিলেন না। কিন্তু তার বিরুদ্ধে যে অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছিল তার সর্বোচ্চ শাস্তি পাঁচ বছরের কারাদণ্ড- মৃত্যুদণ্ড নয়।
ফৌজদারী কার্যবিধির ধারা ৪৯৬ এবং ৪৯৭, সংবিধানের ৩২ অনুচ্ছেদকেই তুলে করে যেখানে স্পষ্ট বলা আছে, আইনানুযায়ী ব্যতীত জীবন ও ব্যক্তি-স্বাধীনতা হইতে কোনো ব্যক্তিকে বঞ্চিত করা যাবে না।
সুতরাং, বিবেচনার ক্ষমতা প্রয়োগ করে, বিচারকরা ফৌজদারী কার্যবিধির ৪৯৭ ধারার অধীনে পরীমনির জামিন মঞ্জুর করতে পারতেন। পাশাপাশি একজন নারী হওয়ায় তার জামিন পাওয়ার বিশেষ সুযোগ ছিল।
কিন্তু নিম্ন আদালতের বিচারকরা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার আবেদনে সাড়া দিয়ে তাকে রিমান্ডে পুলিশের হেফাজতে রাখেন এবং তার জামিন নামঞ্জুর করেন। এমনকি বিচারক শুনানি ছাড়াই তার জামিনের আবেদন ২১ দিন পর্যন্ত মুলতবি রেখেছিলেন।