‘বিশ্বের এক নম্বর অলরাউন্ডার হতে চাই’
‘আজকের এ অবস্থানে আসার পেছনে মা ফেরদৌস বেগম, বড় ভাই আবুল হোসেন বাবু আর দুলাভাই পাশে ছিলেন। পাড়ার বড়ভাই সুদীপ্ত আমাকে ইস্পাহানী ক্লাবে ভর্তি করিয়ে দেন। সবসময় তিনি সাহস ও সমর্থন দিয়ে গেছেন। আমি সাকিব ভাই, তামিম ভাইদের মতো লিজেন্ড হতে চাই। বিশ্বের এক নম্বর অলরাউন্ডার হতে চাই।’
সদ্য বিশ্বকাপ জয় করা অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট দলের সদস্য শাহাদাত হোসেন দিপু বৃহস্পতিবার দুপুরে চট্টগ্রাম নগরের শুলকবহর এলাকার নিজ বাসায় এসব কথা বলেন।
তবে দিপুর এতদূর আসার পথটা সহজ ছিলো না। অল্প বয়সে বাবা হারানো দিপু অনেক সংগ্রাম করে ক্রিকেট চালিয়ে গেছেন। পাড়ার বড় ভাই সুদীপ্তের সহায়তায় চট্টগ্রামের ইস্পাহানি ক্রিকেট ক্লাবে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পান দিপু। কিন্তু সেই ক্লাবে মাসিক বেতন দেওয়ার সামর্থ্য ছিল না পরিবারের। তবে ক্রিকেটের প্রতি অদম্য ইচ্ছা আর একজন দক্ষ ক্রিকেটার হয়ে ওঠার স্বপ্নটা ক্লাব কর্তৃপক্ষও দিপুর চোখে দেখতে পেয়েছিল। ফলে দিপুকে বিনা বেতনে একাডেমিতে প্রশিক্ষণের সুযোগ দেয় ইস্পাহানি ক্লাব কর্তৃপক্ষ।
এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। দিপু ক্রিকেটের জগতে একে একে টপকেছেন কণ্টকাকীর্ণ পথ।
চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার হাবিলাসদ্বীপ ইউনিয়নের চরকানাই গ্রামে দিপুর বাড়ি। দিপু গ্রামে জন্মগ্রহণ করলেও স্থায়ীভাবে থাকেননি। তার বাবা আবদুস ছবুর ছিলেন পেশায় একজন গাড়িচালক। তিনি চট্টগ্রামে গাড়ি চালাতেন। সেই সুবাদে পরিবার নিয়ে তিনি চট্টগ্রামে থাকতেন।
দিপুর সাফল্যে মিষ্টি বিতরণসহ বিভিন্ন স্থানে আনন্দ মিছিল হয়েছে তার গ্রামের বাড়িতে। বাড়িতে যাওয়ার পথে পথে ঝুলছে রঙিন ব্যানার। সর্বত্রই বইছে আলোচনার ঝড়।
দিপুর গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, তাদের সেমিপাকা ঘরটিতে এখন বসবাস করছে দিপুর দুই চাচা। দিপুর চাচী মনোয়ারা বেগম বলেন, ‘‘দিপু পড়াশোনার পাশাপাশি সুযোগ পেলেই ক্রিকেট খেলতো। আমরা খেলাধুলা কম বুঝি। তারপরও আমাদের সন্তান বিশ্বকাপ জেতাতে আমরা অনেক খুশি।’’
এদিকে নগরের শুলকবহর বাসায় আসলে শাহাদাত হোসেন দিপু সিক্ত হয়েছেন এলাকার মানুষের ভালোবাসায়। কেউ গলায় পরিয়ে দিয়েছেন ফুলের মালা, কেউবা খাইয়ে দিয়েছেন মিষ্টি।
প্রতিক্রিয়ায় দিপু বলেন, আমাদের সবার লক্ষ্য ছিল চ্যাম্পিয়ন হবো। গত দুই বছর ধরে ভালো খেলছিলাম। আমরা ইংল্যান্ড গেলাম, নিউজিল্যান্ডে গেলাম। এশিয়া কাপে ফাইনাল খেলেছি। সেই ফাইনালে পাঁচ রানে হেরে যাওয়ার পর পরের ম্যাচে জয়টাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেই।
তিন বোন ও দুই ভাইয়ের মধ্যে শাহাদাত হোসেন দিপু সবার ছোট। ২০১০ সালে দিপুর বাবা মারা যান। দিপুর মা ফেরদৌস বেগম বলেন, ‘‘আমার ছেলে নিজ উদ্যোগে এতদূর এসেছে। আমরা গরীব বলে পরিবার থেকে তেমন সহযোগিতা করতে পারিনি। সবাই আমার ছেলের জন্য দোয়া করবেন।’’