প্রশ্নের মুখে বিসিবির নিরাপত্তা ব্যবস্থা
যাদের হাতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা, তারাই দৌড়ে পালাচ্ছেন; এমন দৃশ্য সত্যিই বিরল। কিন্তু অবাক করা তথ্য হলেও সত্যি যে, বিশ্বজয়ী যুব দলকে দেয়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এমনই ঘটনা ঘটেছে। বুধবার মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে হাজির হওয়া ক্রিকেটমোদীদের সামাল দিতে পারেনি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
কেবল ক্রিকেটারদের বরণ করে নেয়ার দিকেই নজর ছিল বিসিবির। আকবরদের এক নজর দেখতে আসা ভক্ত-সমর্থকরা কী করছেন বা তাদের কীভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়, তা নিয়ে খুব একটা মাথা ঘামায়নি দেশের ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।
বুধবার বিমানবন্দর থেকে ভিআইপি প্রোটোকলে আকবর আলীর দলকে নিয়ে আসা হয় মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। যেখানে আগে থেকেই জড়ো হয়েছিল হাজারো দর্শক। আকবরদের ছবি ও লাল-সবুজ রঙে সাজানো বিশেষ বাস বিসিবিতে প্রবেশ করে সন্ধ্যা ছয়টার পর।
দর্শকদের প্রচণ্ড ভিড়ে তাদের গাড়ি থেকে নামানোই যাচ্ছিলো না! এই ভিড় ছড়িয়ে পড়ে স্টেডিয়ামের ভেতরেও। বিসিবিতে এদিন দর্শকদের প্রবেশ উন্মুক্ত ছিলো না। কিন্তু এত দর্শকের চাপ সামাল দিতে পারেনি বিসিবির নিয়মিত নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
বাড়তি নিরাপত্তার উদ্যোগও গ্রহণ করেনি বিসিবি। পুলিশ সদস্যরা থাকলেও সেটা পর্যাপ্ত ছিল না। ফলাফল- কয়েক হাজার দর্শক বিসিবির নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভেঙে ঢুকে পড়েন স্টেডিয়ামে। দর্শকের ঢল দেখে গেটের নিরাপত্তায় থাকা কয়েকজন আনসার সদস্য ভড়কে যান, দৌড়ে ভেতরের দিকে চলে যান তারা।
এই পর্যন্ত থাকলেও হয়তো ঠিক ছিল। কারণ যুব দলের ক্রিকেটাররা ততক্ষণে বিসিবির প্রধানের কক্ষে চলে গেছে। কিন্তু মূল মাঠেও চরম অব্যবস্থাপনা দেখা গেছে। যেখানে সেলফি তোলা, ক্রিকেটারদের জড়িয়ে ধরতে দেখা যায় দর্শকদের।
ভিআইপি গেট দিয়ে ডুকে পড়া ভক্ত-সমর্থকরা বিসিবির আরেকটি নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভেঙে গ্র্যান্ড স্ট্যান্ডে পৌঁছে যান। অনেকে লাফিয়ে মাঠের মধ্যেও ঢুকে পড়েন। এসব দর্শকদের ফেরানোর মতো যথেষ্ট নিরাপত্তা ব্যবস্থা বিসিবির ছিল না।
বিসিবির নিরাপত্তা বিভাগের প্রধান মেজর (অব:) হোসেন ইমাম অবশ্য এতে বিসিবির খুব একটা দায় দেখছেন না। তাঁর মতে দর্শকরা অতি আবেগের জায়গা থেকে এমনটা করেছেন। আর অল্প সময়ের মধ্যে অনুষ্ঠান আয়োজন করায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা সেভাবে জোরদার করা যায়নি। যদিও তিনি এদিন মাঠে ছিলেন না। জাতীয় দলের সঙ্গে পাকিস্তান সফরে যাওয়া হোসেন ইমাম এদিনই দেশে ফিরেছেন।
এমন একটি আয়োজনে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা উচিত ছিল কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে হোসেন ইমাম বলেন, ‘তা তো পারতোই। স্বতস্ফুর্ত হয়ে এসেছে লোকজন, এটা আবেগী একটা ব্যাপার। অতি উৎসাহী ছিল তারা। এসবে ওইভাবে মানাও করা যায় না। আর ওই রকম তো কোনো সমস্যা হয়নি। শর্ট নোটিশে এটা হয়েছে। অল্প সময়ের মধ্যে আমাদের যোগোযোগ করতে হয়েছে পুলিশ হেড কোয়ার্টার, ক্যান্টনমেন্টের রাস্তা ব্যবহার, মিরপুর থানার সঙ্গে। এটা কারণ হতে পারে।’
মাঠের মধ্যে যুব দলের ক্রিকেটাররা অরক্ষিত অবস্থায় ছিলেন। ক্রিকেটারদের চারপাশে অচেনা অনেক মানুষ ঘোরা ফেরা করছিলেন। ভিড় ঠেলে ক্রিকেটারদের কাছে পৌঁছাতেও তাদের তেমন কষ্ট করতে হচ্ছিল না। এতে যে ঝুঁকি ছিল, সেটা অবশ্য মেনে নিয়েছেন হোসেন ইমাম।
মাঠের নিরাপত্তা আরও জোরদোর হওয়া উচিত ছিল কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অবশ্যই, আমি দ্বিমত পোষণ করছি না। নিরাপত্তা জোরদার হতেই পারতো, হওয়া উচিত ছিল। আমি বলতে চাচ্ছি, অল্প সময়ের মধ্যে আয়োজন করায় এমন হয়েছে। সবাই আবেগ থেকে অতি উৎসাহী হয়ে পড়েছিল।’
অতি উৎসাহী কিংবা আবেগী ক্রিকেটভক্ত; পাশাপাশি আরও বেশকিছু বিষয় নিয়ন্ত্রণের জন্য বিসিবির নিরাপত্তা ব্যবস্থা। প্রধান হিসেবে এই নিরাপত্তা ব্যবস্থার দেখভাল করেন হোসেন ইমাম। কিন্তু নিরাপত্তা ব্যবস্থার নাজুক অবস্থার কথা এড়িয়ে গিয়ে তিনিও যেন হয়ে উঠলেন আবেগী, তাঁর মুখেও শোনা গেল ভক্তদের মতো আবেগী কথাবার্তা।