আর্ন্তজাতিক বাজারে কমলেও দেশের বাজারে বাড়ছেই ভোজ্যতেলের দাম
আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের দাম অনেক কমেছে। কিন্তু দেশের বাজারে উল্টো বাড়ছে পণ্যটির দাম।
গত এক সপ্তাহে আন্তর্জাতিক বাজারে মণপ্রতি পাম অয়েলের দাম কমেছে ৩০৯ টাকা। কিন্তু দেশীয় বাজারে পণ্যটির দাম না কমে উল্টো ৪৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে গেছে।
আর্ন্তজাতিক বাজারে বুকিং দর কমে যাওয়ার পরও আমদানিকারক ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে দেশের ভোগ্যপণ্যের বৃহত্তম পাকারি বাজার খাতুনগঞ্জে পণ্যটির দাম বাড়ছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
মঙ্গলবার খাতুনগঞ্জের দোকানগুলোতে প্রতি মণ (৪০.৯০ কেজি) পাম অয়েল বিক্রি হয়েছে ৫ হাজার ৫০ টাকা দরে। যা এক সপ্তাহ আগেও মাত্র ৪ হাজার ৬০০ টাকা দামে বিক্রি করা হয়েছে।
বর্তমানে খাতুনগঞ্জে টিকে গ্রুপের বে ফিশিং পাম অয়েল মণপ্রতি ৫ হাজার ৫০ টাকা, এস আলমের পাম অয়েল ৫ হাজার ৪০ টাকা এবং সিটি গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপ ও বসুন্ধরা গ্রুপের পাম অয়েল ৫ হাজার ৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
পাম অয়েলের পাশাপাশি প্রতি মণে প্রায় ৫০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে পাম সুপার অয়েলের দামও। এক সপ্তাহ আগে বাজারে প্রতি মণ পাম সুপার অয়েল বিক্রি হয়েছে ৪ হাজার ৭০০ টাকায়। বর্তমানে একই পাম সুপার অয়েল ৫ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বর্তমানে টিকে গ্রুপের প্রতি মণ পাম সুপার অয়েল ৫ হাজার ২০০ টাকা, এস আলমের সুপার অয়েল ৫ হাজার ১৯০ টাকা এবং অন্যান্য গ্রুপের (মেঘনা, সিটি ও বসুন্ধরা) পাম সুপার অয়েল ৫ হাজার ১৮০ টাকায়।
বর্তমানে খাতুনগঞ্জে প্রতি মণ সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ৫ হাজার ৪৬০ টাকা দামে। যা এক সপ্তাহ আগে ৫ হাজার টাকা দামে বিক্রি হয়েছে।
দেশের বাজারে ভোজ্যতেলের দাম বাড়ার কারণ সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে খাতুনগঞ্জের ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী মেসার্স ইসমাইল ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী আব্দুর রাজ্জাক দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'গত এক সপ্তাহে আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের দাম ৩০০-৪০০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। কিন্তু দেশীয় বাজারে দাম না কমে উল্টো বেড়েছে। মূলত আমদানিকারক ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারসাজিতে লোকাল ট্রেডের কারণে পণ্যটির বাজার আবারও অস্থির হয়েছে।'
লোকাল ট্রেড মানে হলো, একটি পণ্য এক হাত থেকে বিভিন্ন হাত হয়ে বিকিকিনি হওয়া।
ট্রেডিংইকোনোমিকস ডটকমের তথ্যমতে, গত ৩ নভেম্বর আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি টন পাম অয়েল বিক্রি হয়েছে ১ লাখ ৫ হাজার ৯৬৬ দশমিক ০৪ টাকায়। টনপ্রতি ১০ হাজার টাকা খরচ যোগ করে প্রতি মণ পাম অয়েলের ক্রয়মূল্য দাড়াঁয় ৪ হাজার ৯৭৯ টাকা।
এক সপ্তাহ পর, মঙ্গলবার টনে ৭ হাজার ১০৭ দশমিক ৯৪ টাকা কমে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিটন পাম অয়েল বিক্রি হয়েছে ৯৭ হাজার ৮৫৮ দশমিক ১১ টাকায়। সেই হিসেবে গত এক সপ্তাহে মণপ্রতি পাম অয়েলের দাম কমেছে ৩০৯ টাকা। কিন্তু দেশের বাজারে পণ্যটির দাম না কমে উল্টো ৪৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
একইভাবে এক সপ্তাহ আগে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিটন সয়াবিন বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ৪০০ ডলারে। যা বর্তমানে ১ হাজার ১৮০ ডলারে বিক্রি হচ্ছে। সেই হিসেবে, গত এক সপ্তাহে আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন তেলের দাম কমেছে টনে ২২০ ডলার।
উপরোক্ত তথ্য অনুসারে, আন্তর্জাতিক বাজারে গত সপ্তাহে প্রতি মণ সয়াবিন তেলের বুকিং দর ছিল ৫ হাজার ২৭৬ টাকা। যা এক সপ্তাহে ৭৬৫ টাকা কমে বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার ৫১১ টাকায়। কিন্তু স্থানীয় বাজারে সয়াবিনের দাম না কমে উল্টো ৪৬০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
দাম বৃদ্ধির বিষয়ে ভোজ্যতেল আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান আরএম ট্রেডিংয়ের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ আলমগীর বলেন, 'আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের দাম গত সপ্তাহে কিছুটা কমেছে—বিষয়টা সত্য। তবে বর্তমানে বাজারে যেসব ভোজ্যতেল বিক্রি হচ্ছে, তা আগের আমদানি হওয়া পণ্য। বর্তমানে বুকিং হওয়া পণ্য বাজারে পৌঁছতে কমপক্ষে আরও একমাস সময় লাগবে।'
স্থানীয় বাজারে ভোজ্যতেলের দাম কমতেও কমপক্ষে দুই থেকে তিন সপ্তাহ সময় লাগবে বলে মনে করেন এই আমদানিকারক।
তবে খাতুনগঞ্জের ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী জিয়া উদ্দিন বলেন, 'আর্ন্তজাতিক বাজারে পণ্যের বুকিং দর বাড়লে স্থানীয় বাজারে সাথে সাথে পণ্যের দাম বেড়ে যায়। কিন্তু আর্ন্তজাতিক বাজারে পণ্যের দাম কমলেও দেশীয় বাজারে পণ্যের দামে সহজে প্রভাব পড়ে না।'
ভোজ্যতেলের বাজার দেশের হাতেগোনা কয়েকজন আমদানিকারকের কাছে জিম্মি বলে অভিযোগ করেন এই ব্যবসায়ী।