টঙ্গী ব্রিজ মেরামত হতে আরও এক সপ্তাহ, বাড়ছে দুর্ভোগ
গাজীপুরে ভাঙ্গা টঙ্গী ব্রিজের সংস্কার কাজ শেষ করতে সময় লেগে যাবে আগামী রোববার পর্যন্ত। ফলে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে চলাচলকারী পরিবহন ও যাত্রীসাধারণের ভোগান্তি পোহাতে হবে আরও এক সপ্তাহ।
ব্রিজটি সংস্কারের দায়িত্বে থাকা বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের (ব্রিজ বিভাগ) প্রকল্প পরিচালক মো. মহিরুল ইসলাম খাঁন বলেন, টঙ্গী ব্রিজের একটি ডেস্ক স্ল্যাব পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত স্ল্যাবে নতুন করে আরেকটি স্ল্যাব বসানো হবে।
তিনি বলেন, "কয়েক ধাপে ঢালাইয়ের জন্য প্রস্তুত করার পরে, আগামী বৃহস্পতিবার নতুন স্ল্যাবটি বসানো হবে। খুব উচ্চমানের কংক্রিট ব্যবহার করা হবে। ফলে ঢালাইয়ের পরবর্তী ২৪ ঘন্টার মধ্যে এটি ব্যবহারোপযোগী হবে। তবে কিছু বিষয় পর্যবেক্ষেণ করতে হবে। সব ঠিক থাকলে রোববারই যানবাহন চলাচলের জন্য ব্রিজটি খুলে দেয়া যাবে।"
এই ক'দিন যানবাহনগুলো বাইপাস সড়ক ব্যবহার করবে বলে জানান মহিরুল ইসলাম।
এ ব্যাপারে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (ট্রাফিক) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, গত বুধবার ভোরে টঙ্গী ব্রিজের স্ল্যাব ধসে পড়ার পর লোহার পাটাতন দিয়ে সাময়িকভাবে যানবাহন চলাচল সচল রাখা হয়েছিল। তবে বিআরটি কর্তৃপক্ষ ব্রিজটি পরিদর্শন করে ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনায় তা বন্ধ করে দেয়।
তবে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে চলাচলকারী পরিবহন ও যাত্রীসাধারণের কষ্ট লাঘবে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি), গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (জিএমপি) সহ সংশ্লিষ্ট সবার উদ্যোগে ওয়ানওয়ে ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম চালু করা হয়েছে। ১২ নভেম্বর (শুক্রবার) সকাল থেকে এই ব্যবস্থা চালু হয়েছে।
এই ওয়ানওয়ে ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের আওতায় ময়মনসিংহ, গাজীপুর, নরসিংদী (পুবাইল) থেকে ঢাকামুখী সব যানবাহন টঙ্গীর আব্দুল্লাহপুর তুরাগ নদের ওপর নির্মিত বেইলি ব্রিজ (দুই লেন) দিয়ে ঢাকার সীমানায় প্রবেশ করবে বলে জানান মামুন।
অন্যদিকে ময়মনসিংহ, গাজীপুর, মিরের বাজারমুখী সব যানবাহন কামারপাড়া ইজতেমা মাঠসংলগ্ন ব্রিজ দিয়ে (চার লেন) গাজীপুরের সীমানায় প্রবেশ করবে।
এতে মহাসড়কের ওই অংশে আগের তুলনায় যান চলাচল পরিস্থিতির অনেকটাই উন্নতি হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
তবে ট্রাফিকের ধীর গতি ও প্রবল যানজটের কারণে পণ্যবাহী ট্রাক-কাভার্ডভ্যান মালিকরা এই পথের ভাড়া বাড়িয়েছেন।
এ ব্যাপারে ট্রাক-কাভার্ডভ্যান মালিক-শ্রমিক সমন্বয় পরিষদের কনভেনার রুস্তম আলী খান বলেন, "তেলের দাম বৃদ্ধিতে আমাদের ভাড়া এক দফা বাড়াতে হল। এবার এই ব্রিজের জ্যামের কারণে আরেক দফা বাড়াতে হয়েছে।"
তিনি বলেন, "শুধুমাত্র এই জ্যামের কারণে আমাদের পরিবহন চট্টগ্রাম পৌঁছাচ্ছে একদিন পরে।"
তবে বাইপাস থাকা সত্ত্বেও তীব্র যানজটের পেছনে মো. মহিরুল ইসলাম যাত্রীবাহী বাসের বিশৃঙ্খলাকে দায়ী করেন।
তিনি বলেন, "আব্দুল্লাহপুরের তিন লেন রাস্তা অনেক চওড়া। তারপরও বাসগুলো যাত্রী উঠানো-নামানোর জন্য মাঝরাস্তায় গাড়ি রেখে জ্যাম সৃষ্টি করছে।"
এ ব্যাপারে বলাকা পরিবহনের চালক তফাজ্জেল বলেন, "আসলে জ্যামের কারণে আমাদের এখন দুটো ট্রিপ মারতেই কষ্ট হয়। তাই একটু বেশি যাত্রী পাওয়ার আশায় মাঝরাস্তায় দাঁড়াতে হয় যেন পেছনের গাড়ি আগে না যায়।"
যানজট সম্পর্কে গাজীপুরের বোর্ডবাজারের বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন বলেন, "আমি সকাল সাড়ে সাতটায় বোর্ডবাজার থেকে বাসে উঠেছি ঢাকার বনশ্রীর উদ্দেশে। পৌঁছেছি বিকাল সাড়ে চারটায়। পুরোটা সময় গাড়িতে থাকতে হয়েছে।
আজ সন্ধ্যায় লঞ্চে করে বরিশাল যাব। ঢাকায় কিছু জরুরী কাজ করতে চেয়েছিলাম কিন্তু ঢাকা পৌঁছাতেই বিকেল হয়ে গেল।"