বাইডেন-শি জিনপিং: প্রথম ভার্চুয়াল বৈঠকে মুখোমুখি দুই নেতা
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও তার চীনা প্রতিপক্ষ শি জিনপিং স্থানীয় সময় সোমবার মুখোমুখি হয়েছেন তাদের প্রথম ভার্চুয়াল বৈঠকে।
তাইওয়ান, বাণিজ্য ও মানবাধিকারের মতো ইস্যুগুলোতে দুই দেশের মধ্যে চলমান উত্তেজনার মাঝেই শুরু হয়েছে এ আলোচনা।
জানুয়ারিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন দায়িত্ব নেওয়ার পর এই বৈঠকই দুই নেতার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হিসেবে মনে করা হচ্ছে।
কী বলা হয়েছে বৈঠকে
উভয় নেতাই একে অপরকে উষ্ণ অভিবাদন জানিয়ে বৈঠক শুরু করেন। বাইডেনকে নিজের 'পুরনো বন্ধু' সম্বোধন করে শি বলেন, তিনি তাকে (বাইডেনকে) দেখে খুশি হয়েছেন।
অন্যদিকে বাইডেন বলেন, "সম্ভবত আমার আরও আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করা উচিত; যদিও আপনি ও আমি একে অপরের সঙ্গে এতটা আনুষ্ঠানিক কখনও ছিলাম না।"
তারা দু'জনেই 'সর্বদা একে অপরের সঙ্গে সততার সাথে ও অকপটে যোগাযোগ করেছেন' বলে জানান বাইডেন।
সেইসঙ্গে তিনি আরও বলেন, "অন্যরা কী ভাবছে তা ভেবে আমরা কখনই দূরে চলে যাইনি।"
অপরপ্রান্ত থেকে শি বলেন, "দুই দেশের মধ্যে যোগাযোগ উন্নত করতে হবে ও একসঙ্গে সকল চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে"।
তিনি আরও বলেন, "জলবায়ু পরিবর্তন ও কোভিড-১৯-এর মতো বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে চীন-মার্কিন সুসম্পর্ক প্রয়োজন"।
চির প্রতিদ্বন্দ্বী এই দুই দেশের নেতা গত সপ্তাহে জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলন কপ-২৬-এ যৌথ ঘোষণা দেন। স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে তাদের এই যৌথ ঘোষণায় বিস্মিত হয়েছেন অনেকেই।
সম্মেলনে শি বলেন, "মানবতা এই বিশ্বগ্রামেই বসবাস করে; এবং আমরা একসঙ্গে একাধিক চ্যালেঞ্জের মোকাবেলা করি। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় চীন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে যোগাযোগ ও সহযোগিতা বাড়াতে হবে।"
অপরদিকে বাইডেন দুই দেশের মধ্যকার বৈরিতা যেন কোনোভাবেই সরাসরি সংঘর্ষে পরিণত না হয়, সে ব্যাপারে জোর দিয়ে নিজেদের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নের কথা বলেন।
যেসব ইস্যু রয়েছে আলোচনার টেবিলে
একাধিক গণ্যমাধ্যমের তথ্য অনুসারে, বাইডেন-শি বৈঠকের প্রধান আলোচ্য বিষয় তাইওয়ান ইস্যু।
বেইজিং তাইওয়ানকে নিজেদের বিচ্ছিন্ন একটি প্রদেশ হিসেবে দেখে। তবে গণতান্ত্রিক তাইওয়ান নিজেকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে দাবি করে।
এদিকে আবার তাইওয়ানকে রক্ষা করার জোরালো প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
বাইডেন গত মাসে বলেছিলেন, চীন আক্রমণ করলে যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ানকে রক্ষা করবে। এমন প্রতিশ্রুতিতে ক্ষুব্ধ হয় চীন। যুক্তরাষ্ট্রের এমন অবস্থানের ব্যাখ্যাও চেয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট শি।
সাইবার নিরাপত্তা, বাণিজ্য ও পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণের মতো বিষয়গুলো এবার উঠে এসেছে আলোচনার টেবিলে।
এর আগে শুক্রবার প্রকাশিত এক বিবৃতিতে হোয়াইট হাউস জানায় "দুই নেতা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে প্রতিযোগিতার পাশাপাশি অভিন্ন স্বার্থে একসঙ্গে কাজ উপায় নিয়ে আলোচনা করবেন।"
জানুয়ারিতে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের অভিষেকের পর তৃতীয়বারের মতো আলোচনায় বসলেন এই দুই নেতা। বৈঠক কয়েক ঘন্টা স্থায়ী হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
কোভিড-১৯ মহামারির প্রাদুর্ভাবের পর থেকে প্রেসিডেন্ট শি প্রায় দুই বছরে কোনো বিদেশ সফরে যাননি।
'চীন-মার্কিন সম্পর্ক' এই দুই দেশের পাশাপাশি পুরো বিশ্বের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ বিশ্বের প্রধান দুই অর্থনীতর মধ্যকার সুসম্পর্ক বা বৈরিতার প্রভাব ভোগ করতে হবে পুরো বিশ্বকেই। সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সময়ে চীন-মার্কিন সম্পর্ক একদম তলানিতে গিয়ে ঠেকেছিল। আর এ কারণেই গত বছরের জানুয়ারিতে ট্রাম্পের উত্তরসূরি প্রেসিডেন্ট বাইডেন ক্ষমতায় আসার পর থেকে বেইজিং নতুন মার্কিন প্রশানসনকে দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্ক উন্নয়নের আহ্বান জানিয়ে আসছে।
সূত্র: বিবিসি