সু চির বিরুদ্ধে নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগ মিয়ানমার জান্তার
মিয়ানমারের ক্ষমতাচ্যুত নেত্রী অং সান সু চিকে 'নির্বাচনে জালিয়াতি এবং অনৈতিক কর্মকাণ্ডের' অভিযোগে অভিযুক্ত করেছে দেশটির বর্তমান সামরিক সরকার।
২০২০ সালের নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগে মঙ্গলবার (১৬ নভেম্বর) ১৬ জনকে অভিযুক্ত করা হয়। এর মধ্যে সু চির পাশাপাশি রয়েছেন মিয়ানমারের ক্ষমতাচ্যুত রাষ্ট্রপতি উইন মিন্ট এবং নেইপিদোর প্রাক্তন মেয়র মিও অং।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে ৭৬ বছর বয়সী সু চিকে জনসমক্ষে দেখা যায়নি। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর মুখপাত্র বিবিসিকে বলেন, গৃহবন্দী অবস্থায় সু চির সাথে ভালো ব্যবহার করা হচ্ছে।
মেজর জেনারেল জাও মিন তুন বলেন, "আমরা তার সুবিধার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করি। সে কি চায় বা সে যা কি খেতে চায় সেদিকে লক্ষ্য রাখি আমরা।"
কিন্তু সু চির আইনজীবীরা জানান, এই কেস সম্পর্কে তাদেরকে প্রকাশ্যে কথা বলতে নিষেধ করেছে সামরিক জান্তা। এছাড়া, জাতিসংঘের কিছু কর্মকর্তা তার সাথে দেখার করার দাবি জানালে তাদেরকে মিয়ানমারে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।
এদিকে, দেশটিতে চলমান সামরিক ক্র্যাকডাউনকে মানবতাবিরোধী অপরাধের সমান বলে উল্লেখ করে জাতিসংঘ। তদন্তের উদ্দেশ্যে বারবার মিয়ানমারে প্রবেশের প্রচেষ্টা করলেও জাতিসংঘের দূতদেরকে সে অনুমতি দেওয়া হয়নি।
এ বিষয়ে মেজর জেনারেল বলেছিলেন, "এটি সঠিক সময় নয়। আমরা তাদের দাবির সাথে একমত হতে পারছি না। মিয়ানমার সম্পর্কে তারা যা বলে তা গঠনমূলক নয়।"
তিনি আরও বলেন, মিয়ানমারের সামরিক শাসনকে স্বীকৃতি দিতে হবে জাতিসংঘের।
গত বছরের সাধারণ নির্বাচনের জালিয়াতির কথা উল্লেখ করে নিজেদের সামরিক অভ্যুত্থানকে ন্যায্যতা দিয়েছে দেশটির জান্তা। তবে, দেশটির স্বাধীন নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের মতে, নির্বাচনটি অবাধ এবং সুষ্ঠু ছিল। সু চির বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়েছে।
এদিকে, ঔপনিবেশিক যুগের সরকারী গোপনীয়তা আইন ভঙ্গ, দুর্নীতি এবং বেআইনি ওয়াকি-টকি রাখাসহ বিভিন্ন অভিযোগ আনা হচ্ছে সু চির উপর। এসব কারণে তিনি আদালতে হাজির হলেও তার কোনো বক্তব্য জানা যায়নি।
গণতন্ত্রপন্থী ব্যক্তিত্ব এবং অভ্যুত্থানের বিরোধীদের নিয়ে গঠিত জাতীয় ঐক্য সরকারের একজন মুখপাত্র জানান, সু চি বর্তমানে সংগ্রাম করছেন।
ডা. সাসা বলেন, "তিনি ভালো নেই। তাকে অভিযুক্ত করা হবে এবং সাজা দেওয়া হবে। সামরিক জেনারেলরা কারাগারে তাকে ১০৪ বছরের সাজা দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তারা চান যাতে তিনি কারাগারেই মারা যান।"
১৯৮৯ সাল থেলে ২০১০ সাল পর্যন্ত প্রায় ১৫ বছর সেনাবাহিনীর হাতে আটক ছিলেন সু চি। মিয়ানমারে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৯১ সালে তাকে নোবেল পুরষ্কার দেওয়া হয়।
২০১৫ সালের নির্বাচনে তার দল ল্যান্ডস্লাইড বিজয়ী হলেও তাকে রাষ্ট্রপতির পদে বসতে দেওয়া হয়নি। কিন্তু তখন থেকেই তিনি ব্যাপকভাবে দেশের ডি ফ্যাক্টো শাসক হিসাবে বিবেচিত।
তবে ২০১৭ সালের রোহিঙ্গা সংকটের সময় ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয় তার সরকার। সমালোচকরা তাকে পশ্চিম মায়ানমারে বসবাসকারী রাষ্ট্রহীন মুসলিম সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর উপর গণহত্যা, ধর্ষণ এবং জোরপূর্বক নির্বাসনের অভিযোগ আনে।
এসকল অভিযোগের বিরুদ্ধে বক্তব্য রাখতে ২০১৯ সালে জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) হাজির হন তিনি।
- সূত্র: বিবিসি