রঙিন স্বপ্নে বিভোর টেস্ট দলের দুই নতুন মুখ
শুরুটা ছোট বেলায়, শেষ গন্তব্য জানা থাকে না। তবে এই পথের যাত্রীরা মাঝে একটা বড় মঞ্চের সন্ধানে থাকেন, সেটা জাতীয় দল। কারও সুযোগ হয় এই মঞ্চে ওঠার, কেউবা হারিয়ে যান পথ ভুলে। জাতীয় দল নামের এই বড় মঞ্চে ওঠার প্রাথমিক ডাক মিলেছে ইয়াসির আলী রাব্বি ও হাসান মাহমুদের।
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টে বাংলাদেশের স্কোয়াডে জায়গা হয়েছে এই দুই ক্রিকেটারের। দু'জনই দলে নতুন মুখ, প্রথমবারের মতো সাদা পোশাকের দলে ডাক পেয়েছেন তারা। প্রথমবার ডাক পেয়েই ক্রিকেটের সবচেয়ে দামি ফরম্যাটে খেলে ফেলার স্বপ্ন দেখছেন না ইয়াসির-হাসান, সুযোগ পেলে রাঙিয়ে রাখতে চান অভিষেক।
ইয়াসির আলী ঘরোয়া ক্রিকেটের নিয়মিত পারফরমার। ৫০টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচে ৬টি সেঞ্চুরির মালিক তিনি। লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটেও দুটি সেঞ্চুরি আছে তার। নিয়মিত খেলেন বিপিএলে। চলতি বিসিএলে রানের মধ্যেই আছেন ডানহাতি মিডল অর্ডার এই ব্যাটসম্যান। এসবই তাকে টেস্ট স্কোয়াডে জায়গা করে দিয়েছে।
তরুণ হাসান মাহমুদ সবে ১১টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলেছেন। গেল বিপিএল দিয়ে মূলত আলোচনায় এসেছেন তিনি। মুড়ি-মুড়কির মতো উইকেট না নিতে পারলেও ২২ গজে গতির ঝড় তুলতে পারেন ২০ বয়সী এই পেসার। লাইন-লেংথেও বেশ সাবলীল তিনি।
প্রথমবারের মতো টেস্ট দলে ডাক পাওয়া এই দুই ক্রিকেটার কথা বলেছেন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের সঙ্গে। জানিয়েছেন নিজেদের স্বপ্ন, সামর্থ্য, বিশেষ শক্তির জায়গা, প্রথমবারের মতো টেস্ট দলে ডাক পাওয়ার অনুভূতির কথা।
টিবিএস: প্রথমবারের মতো টেস্ট দলে ডাক পেলেন, কেমন লাগছে? প্রথমবার ডাক পাওয়ার অনভূতি কেমন হয়?
ইয়াসির আলী রাব্বি: অনেক ভালো লাগছে। টেস্ট দলে ডাক পাওয়ার সম্মানের মতো আর কিছু হতে পারে না ক্রিকেটারদের জন্য।
হাসান মাহমুদ: এরচেয়ে ভালো খবর আর হতে পারে না। আমি অনেক আনন্দিত, অনেক খুশি। এই মুহূর্তে আমি অনেক অনেক এক্সাইটেডও।
টিবিএস: টেস্ট দলে ডাক পাওয়ার বিষয়টি প্রত্যাশিত ছিল?
ইয়াসির আলী: ইচ্ছা ছিল কোনো না কোনো সময় বাংলাদেশের জন্য টেস্ট খেলব। তো টেস্টে দলে ডাক পেলাম, এটা অনেক বেশি ভালো লাগার বিষয়। প্রত্যাশা তো অবশ্যই ছিল।
হাসান মাহমুদ: সেটা বলা আসলে কঠিন। এখানে কোনো ফরম্যাটে খেলাটাই সহজ না। সব কাজই করতে হবে। যদি ভালো করা যায় তাহলে নজরে থাকা যায়, না হলে সম্ভব হয় না।
টিবিএস: যোগ্য মনে করেছেন বলেই বিসিবির নির্বাচকরা আপনাদের স্কোয়াডে নিয়েছেন। নিজেদের জায়গা থেকে টেস্ট খেলার জন্য কতটা প্রস্তুত আছেন?
ইয়াসির আলী: আত্মবিশ্বাসী আছি। রান করছি, ভালো খেলছি এই ফরম্যাটে। এই কারণেই হয়তো নির্বাচকরা আমাকে যোগ্য মনে করেছেন। আমি আমার নিজের জায়গা থেকে যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী।
হাসান মাহমুদ: বিপিএলে একটা পরিকল্পনার মধ্য দিয়ে গেছি। এটা ভিন্ন ফরম্যাট, ভিন্ন পরিকল্পনা থাকবে। নিজের ওপর তো অবশ্যই বিশ্বাস আছে। দলে ডাক পেলে বিশ্বাসটা আরও বাড়ে। মনে হয় ঠিক পথেই আছি।
টিবিএস: একাদশে সুযোগ হলে কেমন করতে চান, কোনো পরিকল্পনা করেছেন?
ইয়াসির আলী: আসলে ওসব নিয়ে এখন চিন্তা করছি না। কারণ জানি না খেলব কি খেলব না। যদি খেলি, লঙ্গার ভার্সনে আমি যেভাবে খেলি সেই স্বাভাবিক খেলাটা খেলার চেষ্টা করব। বাকিটুকু আল্লাহর হাতে।
হাসান মাহমুদ: এখন ১৬ জনের মধ্যে আছি, টিমের সঙ্গে থাকব, অনুশীলন করব। টিম যা করে সবই করব। যদি সুযোগ পাই, ভালো করার চেষ্টা করব। সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করব।
টিবিএস: প্রতিটা বোলার বা ব্যাটসম্যানের একটা শক্তির জায়গা থাকে। আপনার বেলায় সেটা কী?
ইয়াসির আলী: লঙ্গার ভার্সনের কথা যদি বলি, উইকেটে থাকতে আমার খুব ভালো লাগে। যখন ব্যাটিং করি, দেখা যায় অনেক সময় রান হয় না, ওই সময়টাতেও উইকেটে থাকতে আমার ভালো লাগে। জানি যে থাকতে পারলে একটা সময় আমি রান করতে পারব। খারাপ সময়েও মাথা ঠাণ্ডা রাখতে পারি, এটাই শক্তির জায়গা বলতে পারেন।
হাসান মাহমুদ: লাইন-লেংথ বলা যায়। যেখানে বল করলে ব্যাটসম্যানরা খেলতে পারে না বা আউট হয়, সেখানেই বল করার চেষ্টা করি সব সময়। তো এভাবেই বোলিং করার চেষ্টা করব। আর গতিতে আমার একটু সুবিধা আছে। এটাই শক্তির জায়গা বলতে পারেন।
টিবিএস: একাদশে সুযোগ না হলেও জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের সঙ্গে ড্রেসিং রুম শেয়ার করার সুযোগ পাবেন। বিভিন্ন পরিস্থিতিতে তাদের আলোচনা শোনার সুযোগ হবে। এটা ভবিষ্যতের জন্য কতোটা কাজে দেবে বলে মনে করেন?
ইয়াসির আলী: এটা একটা বড় সুযোগ। এখান থেকে আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা নেওয়া যায়। সামনে একই পরিস্থিতি হলে তখন সে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। নতুন একজন ক্রিকেটারের জন্য এটা বেশ উপকারি।
হাসান মাহমুদ: এটা একজন ক্রিকেটারের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে, সে তার অভিজ্ঞ সতীর্থদের সঙ্গে সময় কাটাতে পারবে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা ক্রিকেটারদের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে জানতে পারব। এটা একজন ক্রিকেটারকে তৈরি হতে অনেক সাহায্য করে।