বাংলা বাড়ি: পরিবেশবান্ধব, টেকসই ও সাশ্রয়ী গ্রামীণ স্থাপত্যশৈলির কারিগর
সানাউল্লাহ মিয়া, পেশায় একজন রিকশাচালক, থাকেন কুড়িগ্রামে। ভিটাবাড়ি বলতে ১১৯ বর্গ মিটারের এক চিলতে জায়গায় ছোট একটি টিনের বাড়ি। গরমের দিনে প্রচন্ড দাবদাহ, আর উত্তরবঙ্গের হাড় কাঁপানো শীত সহ্য করে তার পরিবারের ছয় সদস্যের জীবন-যাপন।
তার এই এক চিলতে জায়গাতেই ব্যতিক্রমী স্থপতিদের এক প্রতিষ্ঠান তৈরি করে দিয়েছে অনন্য সাধারণ একটি বাড়ি। দেখতে অতি সাধারণ, কিন্তু অভাব নেই প্রয়োজনীয় কিছুরই। মাত্র ৪ লাখ টাকা সংগ্রহ করে গড়ে তোলা এ বাড়িতে আছে দু'পাশে থাকার ঘর, টয়লেট, রান্নাঘর, কলপাড়, গোয়াল, স্টোরেজ এমনকি উঠানও!
এ নির্মাণকাজে ব্যবহার করা হয়নি পরিবেশ দূষণকারী ইট। হলো সিমেন্ট ব্লকের মধ্যে মাটি ও চুন ঢুকিয়ে এক ধরনের হাইব্রিড ব্লক বানানো হয়েছে, সেই ব্লক দিয়েই বাড়িটি তৈরি। এতে পরিবেশ দূষণ যেমন কমে এলো, বাড়ির সদস্যরাও প্রচন্ড গরম ও ঠান্ডার হাত থেকে মুক্তি পেল। কোনো এলাকার আবহাওয়া পরিবেশ, সংস্কৃতি, ওই এলাকায় যুগের পর যুগ ব্যবহৃত বাড়ি নির্মাণ সামগ্রী সব কিছু মাথায় রেখেই বাড়ির নকশা তৈরি ও নির্মাণের কাজ করে এই প্রতিষ্ঠানটি। সিআই শিট বা টিনের পরিবর্তে ব্যবহার করে পাটের টিন। বলছিলাম 'বাংলা বাড়ির' কথা।
'গ্রামীণ বাংলাদেশের স্থাপত্য'
'বাংলা বাড়ি' আর্কিটেকচারাল ফার্মের কাজ একেবারেই গ্রামাঞ্চল কেন্দ্রিক। 'গ্রামীণ বাংলাদেশের স্থাপত্য' এ পরিচয় নিয়েই এগোচ্ছে বাংলা বাড়ি।
বিশ্বজুড়ে যখন পরিবেশ ও নির্দিষ্ট এলাকার স্থানীয়দের সুযোগ-সুবিধার কথা মাথায় রেখে ভারনাকুলার আর্কিটেকচার সমাদৃত হচ্ছে, বাংলাদেশের স্থপতিরা এখনো শহর কেন্দ্রিক কাজই করে যাচ্ছেন।
বাংলা বাড়ির লক্ষ্য কী এ প্রসঙ্গে বাংলা বাড়ির প্রতিষ্ঠাতা ফাওয়াজ রব বলেন, বাড়ি তৈরির জন্য পরিবেশবান্ধব ও টেকসই ডিজাইন তৈরিই তাদের লক্ষ্য। সিটি করপোরেশনের এলাকার বাইরে কাজ করে ফার্মটি। সাধারণত র্যাপিড বিল্ডিং তৈরি করে থাকে ফার্মটি, অর্থাৎ ৪,৫০০ বর্গফুটের দু'তলার একটি বাড়ি বানাতে সময় লাগে চার মাসেরও কম। থার্ড পার্টি কন্সট্রাকশন কোম্পানি হিসেবে কাজ করায় বাড়ি তৈরির অনুমতি, ইলেকট্রিকাল, মেকানিক্যাল ও প্লাম্বিং- সবই তাদের কাজের মধ্যে পড়ে।
![](https://tbsnews.net/bangla/sites/default/files/styles/infograph/public/images/2021/11/30/261155245_408634404331698_6306508017209144093_n.jpg)
ফরিদপুরে বাঁশ ও পাটের তৈরি আমিরাবাদ ক্লিনিক, দিনাজপুরের জাগো স্কুল, টেকনাফের লাইব্রেরি, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় (এলজিআরডি) সঙ্গে নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন প্রকল্প বাংলা বাড়ির উল্লেখযোগ্য কিছু কাজ। স্যানিটেশন প্রকল্পে চার মাসে ১১২টি ল্যাট্রিন তৈরি করেছে ফার্মটি।
মড্যুলার বেজড স্যানিটেশন সিস্টেম তৈরিতে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) সঙ্গে কাজ করছে বাংলা বাড়ি। এ প্রকল্প এখনো প্রোটোটাইপ পর্যায়ে আছে। এ ধরনের স্যানিটেশন ব্যবস্থায় কোনো স্থানে অল্প কয়েকজন মানুষই খুব অল্প সময়ে ল্যাট্রিন বসিয়ে ফেলতে পারবে। ল্যাট্রিন বসানোর সময় কমবে ৭০ শতাংশ, খরচ কমে আসবে অর্ধেক। বিশ্বজুড়ে প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে ও শরণার্থী ক্যাম্পে নিরাপদ স্যানিটেশন নিশ্চিত করতে এ প্রকল্পের অপার সম্ভাবনা আছে।
ইউএনডিপি ছাড়াও ইউএন-হ্যাবিটাট, জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ব্যবস্থা (জেআইসিএস), জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জেআইসিএ) সঙ্গে কাজ করেছে বাংলা বাড়ি। নিকেই জাপান, কমনওয়েলথ অ্যাসোসিয়েশন অব আর্কিটেক্টস (সিএএ) ও আল-জাজিরার মতো সংবাদমাধ্যমে উঠে এসেছে বাংলাদেশি এ ফার্মটির নাম।
![](https://tbsnews.net/bangla/sites/default/files/styles/infograph/public/images/2021/11/30/261052610_637849054294272_3479262681791514650_n.jpg)
বাংলা বাড়ির শুরুটা যেভাবে
বাংলা বাড়ির স্বপ্নবান প্রতিষ্ঠাতা ফাওয়াজ রব, গ্রাম-বাংলার বাড়ি তৈরি করবেন এ স্বপ্ন নিয়ে পুরোদমে ব্যস্ত হয়ে যাওয়ার আগে শিক্ষকতা করতেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে। কীভাবে তার এ যাত্রার শুরু সে প্রসঙ্গে বলছিলেন, 'অভিজ্ঞতাই সবচেয়ে বড় শিক্ষক'। কী সেই অভিজ্ঞতা?
ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে বেরুনোর পরই দেশের বাইরে চলে যান ফাওয়াজ। সান ফ্রান্সিসকো স্টেট ইউনিভার্সিটিতে প্রোডাক্ট ডিজাইনে পড়াশোনা করেন। ইতালির এক ইনস্টিটিউট থেকে স্থাপত্যবিদ্যায় স্নাতকোত্তর করেন। দীর্ঘদিন ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ঘুরে বেড়ানোর পর দেশে ফিরে আসেন, শিক্ষকতা শুরু করেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্যবিদ্যা বিভাগে। শিক্ষকতার সময়ই তিনি খেয়াল করলেন, পুরো বিশ্ব যুগ ও চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে গেলেও বাংলাদেশের স্থাপত্যবিদ্যার পড়াশোনা সেই ৬০-৭০ দশকের আমেরিকার প্রাচীন পাঠ্যসূচিতেই আটকে আছে, সেইসঙ্গে স্থপতিদের কাজও।
সেই সময়টাতেই দেশের বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলে ঘুরে বেড়ানো শুরু করেন তিনি। এই ঘুরে বেড়ানোর অভিজ্ঞতাই তাকে অনুপ্রাণিত করে দেশের বাদ পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য কাজ শুরু করতে। দেশে গ্রামীণ স্থাপত্য নিয়ে কাজ করেন একশোরও কম স্থপতি, যেখানে শহরের বাইরের দেশের ৭০ শতাংশের বেশি মানুষ বাস। এসব মানুষের জন্যই কাজ শুরু করেন ফাওয়াজ। এ লক্ষ্যকে সামনে রেখেই প্রতিষ্ঠিত হয় 'বাংলা বাড়ি'।
ফাওয়াজের সোজাসাপ্টা কথা, সবাই সেই টপ ওয়ান পার্সেন্টের জন্যই কাজ করলেও; তিনি বাকিদের জন্য কাজ করতে চান, 'গরিবের' বাড়ি বানাতে চান। একই পরিমাণ জমিতে প্রচলিত নিয়মের বাইরে বেরিয়ে তার নির্মাণ ও নকশায় শুধু খরচ কমে আসে তা নয়; ইট ব্যবহার না করায় কমে আসে পরিবেশ দূষণ। বড় পরিসরে এ ধরনের কাজ শুরু হলে দেশে বায়ু দূষণের অন্যতম কারণ- ইটভাটার দূষণ কমে আসবে অনেকাংশেই।
![](https://tbsnews.net/bangla/sites/default/files/styles/infograph/public/images/2021/11/30/260966184_1484539565274807_7825327375381092553_n.jpg)
সবুজ আগামীর লক্ষ্যে
জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচি এবং যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, সুইডেন, মেক্সিকো, বাংলাদেশ ও ঘানার সমন্বয়ে গঠিত ক্লাইমেট অ্যান্ড ক্লিন এয়ার কোয়ালিশন (সিসিএসি) বলছে, কালো কার্বন নিঃসরণের সবচেয়ে বড় অপরিবর্তনীয় উৎস হলো ইটভাটা। কালো কার্বন নিঃসরণের ২০ শতাংশই হয় ইটভাটা থেকে।
২০২১ সালের এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্সে (একিউআই) অনুযায়ী দূষিত শহরের তালিকায় ঢাকার অবস্থান ছিল দ্বিতীয়। বাংলাদেশের একিউআই স্কোর ছিল ১৫৯। একিউআই স্কোর ১০১ থেকে ১৫০ হলেই ওই অঞ্চলের বাসিন্দা বিশেষ করে শিশু, বয়স্ক ও অসুস্থ রোগীদের স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ার সম্ভাবনা থাকে। অর্থাৎ বর্তমানে ঢাকার বাতাসের দূষণ এ বিপজ্জনক সীমাও ছাড়িয়ে গেছে।
দূষণের পাঁচটি ধরনের ওপর ভিত্তি করে বাংলাদেশে একিউআই নির্ধারণ করা হয়। এগুলো হলো- বস্তুকণা (পার্টিকুলেট ম্যাটার বা পিএম১০ ও পিএম২.৫), এনও২, সিও, এসও২ এবং ওজোন (ও৩)।
ক্লাইমেট অ্যান্ড ক্লিন এয়ার কোয়ালিশন (সিসিএসি) এর হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশে শুষ্ক মৌসুমে যখন ইটভাটার কাজ চলে, বাতাসে পিএম২.৫ নিঃসরণের ৩০-৫০ শতাংশই হয় ইটভাটার কারণে। পিএম২.৫ হলো এমন এক ধরনের কঠিন বা জলীয় অতি সূক্ষকণা যা আড়াই মাইক্রোন বা তার নিচে চওড়া। কণাগুলো এতো সূক্ষ্ম হওয়ায় সহজেই নিঃশ্বাসের সাথে ফুসফুসে প্রবেশ করে। এরপর হৃদপিণ্ড হয়ে সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। হাঁচি-কাশি শ্বাসকষ্টের মতো রোগ থেকে শুরু করে ক্যান্সার, হার্ট এটাক ও ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিসের মতো জটিল রোগও হতে পারে। মানবদেহে ক্যান্সার সৃষ্টির কারণের প্রথমদিকে আছে এ কণা।
২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে শিকাগো ইউনিভার্সিটির এনার্জি পলিসি ইনস্টিটিউট প্রকাশিত সর্বশেষ 'এয়ার কোয়ালিটি লাইফ ইনডেক্স' অনুযায়ী, বায়ু দূষণের কারণে বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু কমেছে প্রায় পাঁচ বছর চার মাস। ঢাকায় কমেছে আরও বেশি, প্রায় সাত বছর সাত মাস।
দূষিত বায়ুতে ভেসে বেড়ানো বস্তুকণার মধ্যে সবচেয়ে ক্ষতিকারক এই পিএম ২.৫। চলতি বছরের মার্চে প্রকাশিত ওয়ার্ল্ড এয়ার কোয়ালিটি রিপোর্ট ২০২০-এ দেখা যায়, বাংলাদেশের বাতাসে পিএম ২.৫ এর পরিমাণ ৭৭.১ মাইক্রাগ্রাম পার কিউবিক মিটার। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানদণ্ডের চেয়ে সাত গুণ বেশি এ পরিমাণ। প্রতি বছরে ইটভাটা থেকে বায়ুমণ্ডলে যোগ হচ্ছে প্রায় ১৫.৬৭ মিলিয়ন টন কার্বন ডাইঅক্সাইড।
ইট উৎপাদনে বর্তমানে চতুর্থ অবস্থানে আছে বাংলাদেশ, দেশে ইটভাটা আছে সাত হাজারের বেশি। ২০১৭ সালের হিসাব অনুযায়ী, বছরে উৎপাদিত হয় ২৩ বিলিয়নের বেশি ইট। ইটভাটায় কয়লা, টায়াল, গাছ পোড়ানোর ফলে বাতাসে প্রতিনিয়ত নির্গত হচ্ছে ক্ষতিকর পার্টিকুলেট ম্যাটার, কার্বন মনোঅক্সাইড, সালফার অক্সাইড ও কার্বন ডাইঅক্সাইড।
পরিবেশ দূষণের এ দিকটির কথা তুলে ফাওয়াজ রব বলেন, "আমাদের দেশে সব নির্মাণকাজে মারাত্মক ক্ষতিকর এই ইটের প্রয়োজন-ই নেই। শহরের বাইরেই দেশের বেশিরভাগ মানুষ থাকে। প্রত্যেক এলাকায় নিজস্ব ঐতিহ্য অনুযায়ী স্থানীয় নির্মাণ সামগ্রী ও আর্থব্লক, সিমেন্ট ব্লকের মতো উপাদান দিয়ে বাড়ি তৈরি করলে একদিকে যেমন খরচ কমে আসবে, তেমনি পরিবেশ দূষণও কমিয়ে আনা যাবে।"
তিনি জানান, এসব উপাদানের বাড়ি নির্মাণের আরেকটি সুবিধা হলো এর টেকসই প্রকৃতি। পেরুর এক বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাগারে করা পরীক্ষার কথা উল্লেখ করেন তিনি। ওই পরীক্ষায় দেখা যায়, ভূমিকম্পে রিখটার স্কেল ৪ পার হলেই ইটের কাঠামো ফেটে যেতে থাকে। তবে ওই একই বাড়ি এরপর সিএসইবি দিয়ে বানানো হয়। এবার আর্থ কোয়াক মেশিন ছাড়ার পরই চমক দেখা যায়- রিখটার স্কেল ৮ পার হওয়ার পরও ভাঙেনি।
"মূলত এসব বাড়ির কাঠামোর কারণেই এতো মজবুত হয়ে থাকে। এসব বাড়িতে থাকে না গদবাধা বাড়ির মতো কোনো আরসিসি কলাম, পুরো কাঠামো ফাঁপা না, আছে অসংখ্য কলাম- অনেকটা জালির মতো। এই ব্যতিক্রমী কাঠামোর কারণেই ভূমিকম্পে দেয়াল ধসে পড়ার আশঙ্কা থাকে না", বলেন তিনি।
![](https://tbsnews.net/bangla/sites/default/files/styles/infograph/public/images/2021/11/30/261016081_665255397795216_7144549181944152952_n.jpg)
সেন্স অব এনটাইটেলমেন্ট
বাংলা বাড়ির লক্ষ্য শুধু পরিবেশবান্ধব, টেকসই বাড়ি তৈরিই নয়। তাদের প্রতিটি প্রজেক্টে তারা নিশ্চিত করতে চান যাদের বাড়ি বানানো হচ্ছে তারা যেন সেই বাড়ি তৈরির পুরো প্রক্রিয়ায় যুক্ত থাকতে পারেন।
"শুধু বাড়ি বানিয়ে দিয়ে উঠে যেতে বললাম, হঠাৎ করে একজন সেই বাড়িতে উঠলে 'আমার নিজের বাড়ি' এই অনুভূতি পাওয়া তো কঠিন। আমাদের কাজের পুরো সময়ই সেই পরিবারের কেউ আমাদের সঙ্গে থাকেন, কী হচ্ছে দেখেন, নিজস্ব প্রয়োজনের কথা জানান। "পুরো বাড়ি তৈরির কাজে তাদের অংশগ্রহণ থাকায় বাড়ি তৈরির পর সেন্স অব এনটাইটেলমেন্ট কাজ করে", বলছিলেন ফাওয়াজ।
![](https://tbsnews.net/bangla/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2021/11/30/260829743_504912253862798_1368597909190902520_n.jpg)
বাড়ি বানানোর আগে নেওয়া হয় তাদের মতামতও। কুড়িগ্রামের সানাউল্লাহ বলেছিলেন তার ছোট গোয়ালের প্রয়োজন, তার স্ত্রীর প্রয়োজন ছোট একটি স্টোরেজ। এ সব কিছু মাথায় রেখেই করা হয় বাড়িটির নকশা। নারী সদস্যদের প্রয়োজন অনুযায়ী টয়লেট বসানো হয় বাড়ির এক কোণায়। কুড়িগ্রাম বন্যাপ্রবণ এলাকা হওয়ায় বাড়ির কাঠামো তৈরি করা হয়েছে মাটি থেকে কয়েক ফুট উপরে। মোদ্দাকথা ১০ ফুট পরপর আরসিসি কলাম বসিয়ে প্রথাগত নকশার কোনো কাজ নয় এটি।
সানাউল্লাহ'র বাড়ি বানানো শেষে তিনি ফোন দিয়ে ফাওয়াজ রবকে বলেছিলেন, 'স্যার আমি অনেক ওম পাচ্ছি।'
"তার গ্রামের পরিবেশ অনুযায়ী বাড়ি বানিয়ে দিয়েছি। আগামী দশ বর্ষায়ও আর ডুবে যাবে না তার বাড়ি। বাড়ি বানানোর কাজে প্রচলিত ইটের নির্মাণকাজের মতো দূষণও কমিয়ে আনতে পেরেছি। এখানেই আমার স্বার্থকতা", বলছিলেন ফাওয়াজ।
দেশে পরিবেশ দূষণ কমিয়ে আনা সম্ভব এমন সামগ্রী দিয়ে নির্মাণ কাজ শুরু হবে বড় পরিসরে এমনটাই প্রত্যাশা ফাওয়াজ রবের। এ পথের সামনের সারির একজন হিসেবে তার পথ অনুসরণ করবে অন্যরা, গড়ে উঠবে পরিবেশ সচেতনতা- এ আশা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন তিনি, সেইসাথে বাংলা বাড়ি।