দেশে করোনার টিকা তৈরিতে এডিবির ৯৪০ মিলিয়ন ডলারের ঋণ
দেশে করোনাভাইরাসের টিকা উৎপাদন এবং বুষ্টার ডোজ টিকা কিনতে আরো ৯৪০ মিলিয়ন ডলার ঋণ দেবে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। ইতোমধ্যে বাজেট সহায়তা হিসেবে এ ঋণ দিতে প্রাথমিক সম্মতি জানিয়েছে তারা। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।
আলোচনা চূড়ান্ত হলে চলতি অর্থবছরে এডিবির কাছ থেকে এ অর্থ পাওয়া যাবে। এর আগে চলতি অর্থবছরের শুরুর দিকে একই পরিমান বা ৯৪০ মিলিয়ন ডলার ঋণ দিয়েছিলো এডিবি। সেই অর্থ ব্যবহার করে বর্তমানে টিকা কার্যাক্রম চলছে।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) অতিরিক্ত সচিব এবং উইং প্রধান (এডিবি)ড. পিয়ার মোহাম্মদ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "এডিপির এই ঋণের ৫০০ মিলিয়ন ডলার ব্যয় হবে গোপালগঞ্জে টিকা উৎপাদনে। বাকি ৪৪০ মিলিয়ন ডলার ব্যয় হবে বুষ্টার ডোজ টিকা কিনতে।"
সম্প্রতি, গোপালগঞ্জে ভ্যাকসিন তৈরির জন্য একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক বায়োটেকনোলজি কোম্পানি ডায়াডিক ইন্টারন্যাশনাল এবং বাংলাদেশি কোম্পানি এসেনশিয়াল ড্রাগস লিমিটেড (ইডিসিএল)। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একাধিকবার বলেছেন, সরকার সেখানে একটি আন্তর্জাতিক ভ্যাকসিন ইনস্টিটিউট স্থাপন করতে চায়।
ইআরডির কর্মকর্তরা জানান, এডিবির এ ঋণ নিশ্চিত করতে এ মাসের শুরু দিকে এডিবির সঙ্গে বৈঠক করে সরকার। এই বৈঠকে ইআরডির কর্মকর্তা ছাড়াও অর্থবিভাগ এবং স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। দ্রুত এ ঋণ প্রক্রিয়া শেষ করতে গত ৯ তারিখের মধ্যে স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে প্রস্তাবনা পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়। কিন্ত স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ থেকে তা এখনও পাঠানো হয়নি।
এদিকে গত বুধবার বিকেলে এক অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, এ মাসেই ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যেই বুস্টার ডোজ দেয়ার কাজও শুরু করা হবে। "ভ্যাক্সিন প্রদানে ইতোমধ্যেই মূল লক্ষ্যের ৩২ ভাগ অতিক্রম করেছি আমরা। এখন হাতে আমাদের সাড়ে ৪ কোটি ডোজ ভ্যাক্সিন রয়েছে। কাজেই ভ্যাক্সিন প্রদানে আমরা বহু দেশের তুলনায় ভালো অবস্থায় রয়েছি," বলেন তিনি।
চলতি বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে দেশব্যাপী টিকা কার্যক্রম শুরু হয়। সেসময় ৬০ বছরের বেশি বয়সী, কোমর্বিড ও ফ্রন্টলাইনার্সদের বুষ্টার ডোজ দেওয়া পরিকল্পনা করে সরকার।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মতে, বুধবার পর্যন্ত দেশের ৬.৭৮ কোটি মানুষ কমপক্ষে টিকার একটি ডোজ পেয়েছে এবং জনসংখ্যার ২৬.৫ শতাংশ টিকার ডোজ সম্পন্ন করেছে।
সম্প্রতি অনেক দেশেই ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ায় বাংলাদেশ সরকার বয়স্ক, ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠীর লোক এবং ফ্রন্টলাইনারদের জন্য বুস্টার ডোজ ঘোষণা করেছে।
১১ ডিসেম্বর, জিম্বাবুয়ে থেকে ফিরে আসা দুই বাংলাদেশি নারী ক্রিকেটারের দেহে প্রথম ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট সনাক্ত হয়।
মার্কিন ফর্মুলায় তৈরি হবে ভ্যাকসিন
স্বাস্থ্য পরিষেবা বিভাগের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক আহমেদুল কবির টিবিএসকে নিশ্চিত করেন, সম্প্রতি ইউএস-ভিত্তিক বায়োটেকনোলজি কোম্পানি ডায়াডিক ইন্টারন্যাশনাল এবং বাংলাদেশি এসেনশিয়াল ড্রাগস গোপালগঞ্জে ভ্যাকসিন তৈরির জন্য একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।
কর্মকর্তাদের মতে, সবকিছু পরিকল্পনা অনুযায়ী চললে আগামী ছয় মাসের মধ্যে দেশ প্রোটিন ভ্যাকসিন তৈরি শুরু করতে পারবে।
গোপালগঞ্জের এসেনশিয়াল ড্রাগসের কারখানায় এখন অ্যান্টিবায়োটিক, আয়রন পিল, ইন্ট্রাভেনাস ফ্লুয়িড এবং কিছু জন্মনিয়ন্ত্রণ পণ্য তৈরি হয়। যদিও সেখানে ভ্যাকসিন তৈরির কোনো সরঞ্জাম নেই, কারখানায় ভ্যাকসিন উৎপাদনে সহায়তার জন্য বেশ জায়গা রয়েছে।
চলতি বছরের নভেম্বরে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সরকার বাংলাদেশে কোভিড -১৯ সহ ভ্যাকসিন তৈরির জন্য একটি আন্তর্জাতিক ভ্যাকসিন ইনস্টিটিউট স্থাপন করতে যাচ্ছে।
এসেনসিয়াল ড্রাগস কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকার এখন দুটি বিকল্প অনুসরণ করছে। একটি হল বাল্ক ভ্যাকসিন আমদানির পর কারখানায় ভ্যাকসিন বোতলজাত করা, দ্বিতীয় পরিকল্পনা হল ভ্যাকসিন উৎপাদনের জন্য একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ কারখানা স্থাপন করা।
তবে কবে থেকে এবং কী পরিমান ভ্যাকসিন উৎপাদন শুরু হবে সে বিষয়ে জানাতে পারেননি অধ্যাপক আহমেদুল কবির।
স্বাস্থ্য পরিষেবার অতিরিক্ত মহাপরিচালক এবং কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন প্রস্তুতি এবং স্থাপনার কোর কমিটির চেয়ারপারসন প্রফেসর ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা টিবিএসকে বলেন, "কোভিড ভ্যাকসিন কেনার জন্য এডিবির সঙ্গে গত জুন মাসে আমাদের একটা চুক্তি হয়েছে। সে চুক্তির আওতায় আমরা দশ কোটির বেশি ডোজ ভ্যাকসিন কিনেছি। সেই চুক্তি অনুযায়ী ফার্স্ট ডোজ সেকেন্ড ডোজ নাকি বুস্টার ডোজ যেকোন ভ্যাকসিন আমরা কিনবো। সেখানে নির্দিষ্ট করে বুস্টার ডোজের উল্লেখ নেই। এখন টিকা জন্য অর্থ দরকার। এ বিষয়টি দেখছে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ।"
৯৩ বিলিয়ন ডলারের প্যাকেজ ঘোষণা করেছে বিশ্বব্যাংক
বৃহস্পতিবার (১৬ ডিসেম্বর) বাংলাদেশসহ নিম্ন আয়ের দেশগুলোকে সাহায্যের জন্য আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার (আইডিএ) ৯৩ বিলিয়ন ডলারের প্যাকেজ ঘোষণা করেছে বিশ্বব্যাংক।
দেশগুলোকে কোভিড সংকট মোকাবেলায় এবং একটি স্থিতিস্থাপক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ভবিষ্যত গড়ে তুলতে সাহায্য করবে কারণ এই প্যাকেজ।
গত সপ্তাহের মঙ্গলবার প্রকাশিত সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্ক (এবিডি) পূর্বাভাস দিয়েছে যে, এই অঞ্চলের উদীয়মান অর্থনীতিগুলো ২০২১ সালে ৭ শতাংশ এবং ২০২২ সালে ৫.৩ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে, যা আগের অনুমান থেকে ০.১ শতাংশ কম।
বিশ্বব্যাংকের মতে, চীনের হাউজিং মার্কেটে দীর্ঘস্থায়ী মন্দা, ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি এবং বিশ্বব্যাপী সাপ্লাই চেইন ব্যাঘাত সহ অন্যান্য বিপদের সাথে ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের কারণে কোভিড -১৯ সংক্রামণ বাড়তে থাকা এই অঞ্চলের পুনরুদ্ধারের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় ঝুঁকি।