ওমিক্রন ঠেকাতে দিল্লিতে কারফিউ
করোনাভাইরাসের তৃতীয় ঢেউয়ের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে ভারত। আর এর অংশ হিসেবে রাজধানী দিল্লি ও অর্থনৈতিক কেন্দ্র মুম্বাইতে সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে কারফিউ জারি করেছে সরকার।
মঙ্গলবার ভারতে ৩৭ হাজার ৩৭৯ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে, যা এক সপ্তাহের ব্যবধানে অন্তত পাঁচগুণ। বিশেষজ্ঞদের মতে, করোনার নতুন ধরন ওমিক্রনের প্রভাবেই সংক্রমণ দ্রুতগতিতে ছড়িয়ে পড়ছে দেশটিতে।
ভারতের ভ্যাকসিন টাস্ক ফোর্সের প্রধান ডা. এন কে অরোরা সোমবার এনডিটিভিকে বলেন, "দেশে মহামারির তৃতীয় ঢেউ ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে। পুরো ঢেউটি মহামারির একটি নতুন রূপ... যা, ওমিক্রন দ্বারা চালিত বলে মনে হচ্ছে।"
এই সংক্রমণের প্রায় এক তৃতীয়াংশই দিল্লি ও মুম্বাই শহরের। তাই ভাইরাসের বিস্তার রোধে উভয় শহরই কারফিউ এবং অন্যান্য বিধিনিষেধ আবারও ফিরিয়ে এনেছে।এছাড়া, দেশটির প্রধান হাসপাতালগুলোর মধ্যে অন্যতম দিল্লির 'অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ মেডিকেল সায়েন্সেস (এআইআইএমএস)-এর ডাক্তারদের শীতকালীন ছুটিও বাতিল করেছে সরকার।
ভারতে এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৭০০ জনের ওমিক্রন ধরনে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এরমধ্যে মহারাষ্ট্রের রাজধানী মুম্বাইতে নতুন এই ধরন দ্বারা আক্রান্ত হয়েছেন সবচেয়ে বেশি মানুষ, যার সংখ্যা ৫৬৮। এরপর রয়েছে রাজধানী দিল্লি; সেখানে ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্তের সংখ্যা ৩৮২।
দিল্লির স্বাস্থ্যমন্ত্রী সত্যেন্দ্র জৈন জানিয়েছেন, শহরের কোভিড-১৯ সংক্রমণের ৮১ শতাংশই ওমিক্রনে আক্রান্ত।
দেশটির ক্রমবর্ধমান কোভিড সংক্রমণ থেকে রেহায় পাননি দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালও। তিনি কোভিড পজিটিভ হওয়ার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই সপ্তাহান্তের এই কারফিউ ঘোষণা করা শহরটিতে।
কেজরিওয়াল সোমবার মাস্ক ছাড়াই উত্তরাখণ্ডের একটি নির্বাচনী সমাবেশে ভাষণ দিয়েছিলেন। এর একদিন পরেই তার সংক্রমণের কথা খবর আসে গণমাধ্যমে। ভারতজুড়ে এমন অনেক রাজনৈতিক নেতা রয়েছেন, যারা মাস্ক ছাড়া ও সামাজিক দূরত্ব বজায় না রেখেই অসংখ্য জনতার সামনে বিভিন্ন সমাবেশে যোগ দিচ্ছেন। দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও তাদের মধ্যে একজন।
গত কয়েক সপ্তাহে পাঞ্জাব এবং উত্তর প্রদেশে অনুরূপ কিছু সমাবেশে অংশ নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মোদি সহ আরও বেশ কয়েকজন রাজনীতিবিদ। হাজার হাজার মানুষের সঙ্গে যোগ দেওয়া সেসব সমাবেশে মাস্ক পরা ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার মতো ব্যাপারগুলো খুব কমই গুরুত্ব পেয়েছিল।
এখন পর্যন্ত ভারতের প্রাপ্তবয়স্ক জনসংখ্যার প্রায় ৬০ শতাংশ সম্পূর্ণরূপে টিকা নিয়েছেন। এছাড়া, গেলো জানুয়ারিতে টিকাদান কর্মসূচি শুরু হওয়ার পর থেকে দেশটির ৯০ শতাংশ মানুষ অন্তত একটি করে ডোজ পেয়েছেন।
দেশটিতে সরকারিভাবে এখন পর্যন্ত ৩৪ মিলিয়ন কোভিড সংক্রমণ ও আক্রান্তের ৪ লাখ ৮২ হাজার জনের মৃত্যুর খবর প্রকাশ করা হয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাস্তবে এই সংখ্যা আরও অনেক বেশি হতে পারে।
- সূত্র: বিবিসি